রায় বাতিলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে সংসদে প্রস্তাব পাস

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০০:০১ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০০:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং এর কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। বুধবার এ সংক্রান্ত আলোচনার পর এ প্রস্তাব পাস করা হয়।

প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় বাতিল এবং রায়ে জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির দেওয়া অসাংবিধানিক, আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ বাতিল করার জন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’

বুধবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। রাত ১১টা ৩২ মিনিটে জাতীয় সংসদে ভোটের মাধ্যমে পাস করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নেওয়া সবাই ওই প্রস্তাব সমর্থন করেন। পরে স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী প্রস্তাবটি ভোটে দেন। প্রস্তাবটি সাংসদদের ভোটে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানননীয় প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় এটা প্রতিয়মান হয়যে তিনি সপ্তদশ শতাব্দিতে ফিরে যাচ্ছেন। ওনার লেখার ভেতরে অনেক জায়গায় সাংঘর্ষিক রয়ে গেছে। তিনি তার রায়ে এমন এমন কথা বলেছেন, যেটা বিএনপি-জামায়েতসহ যে সকল দল বঙ্গবন্ধু বিরোধী কথা বলে, তিনিও তাদের মতোই করছেন।

তিনি বলেন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) সংসদের নারী আসন নিয়েও কথা বলেছেন। যেটা অনুচ্ছেদ ৭(১) এর সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি তার রায়ে জাতীর জনকের বিরুদ্ধে কথা তুলেছেন। পরে তিনি সংসদে আনা প্রস্তাবে সমর্থন করেন।

বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাংসদ মইনুদ্দীন খান বাদল। প্রস্তাব উপস্থাপনকালে বাদল বলেন, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার তার পর্যাবেক্ষণে অনেক অপ্রাসঙ্গিক ও অবাঞ্ছিত বিষয়ে পাশাপাশি, জাতীয় সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ক আখ্যায়িত করেছেন। এ বিষয়টি এমনভাবে এসেছে এ নিয়ে আলোচনা-গুঞ্জন চলছে, তা সমীচিন নয়। এই সংসদ ব্যাপক আলোচনার নিরিখে বর্তমান অবস্থার অবসান চায়। যাতে করে অশুভ ও গণবিরোধী শক্তি ঘোলাজলে মাছ শিকারের প্রচেষ্টা গুলিয়ে যায়।’

প্রস্তাবটি সমর্থন করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনি পদক্ষেপ নিতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। রায়ের পর্যাবেক্ষণে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় আনায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যাপক সমালোচনা করেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে আপিল বিভাগ। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত হয়। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রতিস্থাপিত করেছিল জাতীয় সংসদ। ওই সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বিচারপতিদের অপসারণ করতে পারতো সংসদ।

গত ১ আগস্ট এই মামলার যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে, তাতে শাসনব্যবস্থা, সংসদ নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে নানা মন্তব্য এসেছে। ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।

রবিবার দশম সংসদের সপ্তদশ অধিবেশন শুরুর দিন সাংসদ তাহজীব উল আলম সিদ্দিকী বহুল আলোচিত এই রায় নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনা শুরু করতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া নোটিস দিতে বলেন।

এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এ বিষয়ে আলোচনার কথা বলেন। সংসদের সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশন আগামী বৃহস্পতিবার শেষ হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৩সেপ্টেম্বর/এমএবিজেবি/মোআ