সিআরপি থেকে সুস্থ হয়ে ফিরছেন লাখো রোগী

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩৫ | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:১১

সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) অর্থাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের থেরাপি চিকিৎসা নিয়ে প্রতি বছর সুস্থতা ফিরে পাচ্ছেন শারীরিক অক্ষমতার শিকার প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ রোগী। শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম প্রায় পাঁচ লাখ রোগী প্রতি বছর সিআরপি থেকে থেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন।

সিআরপিতে মূলত ফিজিওথেরাপি, স্পিচ থেরাপি ও অকুপেশনাল থেরাপি এই তিন ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়ে থাকে। গত বছর সিআরপি থেকে লক্ষাধিক রোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়েছে। এই চিকিৎসা নিয়ে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রতি বছরের মতো সিআরপিতে নানা আয়োজনের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি দিবস উদযাপিত হয়।

চলতি বছরের জুন মাসে ব্রেইন স্ট্রোক হয়ে ৬৫ বছর বয়সী ফয়েজ উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধের শরীর বাম অংশ অবশ হয়ে যায়। এরপর হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে সাভারের সিআরপিতে ভর্তি করেন ছেলে আব্দুস কুদ্দুস। তখন থেকেই এখানেই চলছে চিকিৎসাসেবা।

রোগীর স্বজন আব্দুল কুদ্দুস ঢাকাটাইমসকে জানান, বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করার পর তার শরীরের বাম অংশ পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। অবশ হয়ে যাওয়া অংশের হাত ও পা তিনি নাড়তেও পারতেন না। কিন্তু সিআরপিতে ভর্তির এক মাস পর এখানকার চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তার বাবা ধীরে ধীরে হাত ও পা নড়াচড়া করতে পারেন। এখন নিজে নিজে দাঁড়িয়ে অন্যের সাহায্য নিয়ে একটু আধটু হাঁটতেও পারেন।

বৃদ্ধ ফয়েজ উদ্দিনের মতোই ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে শরীরের বাম অংশ অবশ হয়ে ফার্মেসি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলম। স্ত্রী ফাতেমা আক্তার তাকে সিআরপিতে ভর্তি করান। প্যারলাইজডের সাথে বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেন আলম। স্বামীর এহেন অবস্থায় সাংসারিক টানাপেড়ন যখন জাপটিয়ে ধরেছে তখন সিআরপির ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় স্বামী সুস্থতা ফিরে পাওয়ার ক্ষীণ আশার আলো দেখছেন স্ত্রী ফাতেমা।

ফাতেমা বলেন, স্ট্রোক করার পর তার স্বামীর শরীরের বাম অংশ, হাত, পা ও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এরপর থেকে চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করতে হচ্ছে তাকে। তবে সিআরপির গত দুই মাসের চিকিৎসায় স্বামীর সুস্থতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তাকে অনেকটাই চিন্তা মুক্ত করেছে। এখন তার স্বামী হাত, পা ধীরে ধীরে নাড়তে পারেন। অন্যর সাহায্য নিয়ে উঠে দাঁড়াতেও পারেন। তবে কথা বলতে পারেন না।

আলমকে চিকিৎসা দেয়া সিআরপির ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট রিচার্ড বৈরাগী ঢাকাটাইমসকে বলেন, হুইল চেয়ারে বসে সিআরপিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন স্ট্রোকের রোগী আলম। তখন তিনি দাঁড়ানো দূরের কথা বসতেও পারতেন না। কিন্তু দুই মাসের ফিজিওথেরাপি নেয়ার পর থেকে তিনি উঠে বসতে পারেন, কিছু ধরে দাঁড়াতে পারেন। এমনকি একটু সাহায্য পেলে হাঁটতেও পারেন। তবে উনি যাতে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন সে জন্য আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি কথা বলার জন্য স্পিচ থেরাপিও দেয়া হচ্ছে।

দেড় মাস আগে মাজার সমস্যার কারণে ডান পাশের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে আব্দুল মালেকের। তখন শরীরের ওই অংশে কোনো শক্তি পেতেন না তিনি। পরে সিআরপিতে চিকিৎসার জন্য আসেন। এরপর সিআরপির চিকিৎসক কোনো ওষুধ ছাড়া তাকে শুধু বাড়িতে এক ধরনের ব্যায়াম করতে বলেন। মাঝে মাঝে সিআরপির চিকিৎসকও ভিন্ন রকমের ব্যায়াম করান তাকে। এখন আগের চেয়ে অনেকটাই তার সমস্যার উপশম হয়েছে। তিনি স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছেন।

সিআরপির ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রধান আনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রতি বছর কয়েক লক্ষাধিক বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অক্ষম রোগীদের থেরাপি চিকিৎসা প্রদান করে সিআরপি। এর মধ্যে গত বছরই সিআরপি ও এর সাব সেন্টারগুলো থেকে প্রায় পাঁচ লাখ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে শতকরা ৯০-৯৫ ভাগ রোগী পুরোপুরি সুস্থতা ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সিআরপিতে মূলত স্ট্রোক প্যারালাইজড, কোমর ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা ও হাড়ের জয়েন্টে ব্যথাসহ দুর্ঘটনায় প্যারালাইজড রোগীরা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ব্যাক পেইন ও নেক পেইন রোগীর সংখ্যা বেশি।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/আইআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :