কিছুতেই থামছে না লিবিয়ার কান্না

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:০৯

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার স্বরমঙ্গল গ্রামের জুয়েল বেপারী অনেক স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিল লিবিয়ায়। সহায় সম্বল বিক্রি করে জোগার করেছিল টাকা। হার ভাঙা পরিশ্রমের মাঝেও প্রথম দিকে ভালোই কাটছিল দিন।

লিবিয়ায় এক বাঙালি মানব পাচারকারী চক্রের সাথে পরিচয়ের পরেই বদলে যায় তার জীবন। তাকে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মানবপাচারকারী চক্রের বন্দি শিবিরে। চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। সেই নির্যাতনের চিত্র দেখিয়ে স্বজনদের কাছ আদায় করা হয় লাখ লাখ টাকা। টাকা দিতে না পারলে চালানো হচ্ছে নির্যাতন। এসব ঘটনা প্রশাসনকে জানানোর কারণে জিম্মিদের হত্যার হুমকিও দিচ্ছে পাচারকারী চক্র।

এমনই লোমহর্ষ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে মাদারীপুরে র‌্যাবের হাতে আটক এক মানবপাচারকারী। গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৫৯টি সিম, ২৯টি মোবাইল ও ১৮ লাখ টাকা।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৮ এর মাদারীপুর ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রাকিব জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্র ইটালি, স্পেন ও গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোটা অঙ্কের বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে মানবপাচার করে আসছে। এই চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইটালিসহ গোটা ইউরোপে সক্রিয় এবং এদের শিকার মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের উঠতি বয়সের বেকার যুবকরা। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে যুবকদের লিবিয়ায় পাচার করে থাকে। পরে লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের সদস্যরা লিবিয়ার বন্দিশালায় তাদের আটক রেখে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং বন্দিদের নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। এছাড়াও লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের টার্গেট করে এই চক্রটি। ভালো কাজ এবং মোটা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।

এই চক্রের সাড়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩ সেপ্টেম্বর শরিয়তপুরের নড়িয়া থানার পশ্চিম লোনসিং গ্রাম থেকে আব্দুল হামিদ ছৈয়ালের ছেলে সুমন ছৈয়ালকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার সুমন ছৈয়াল প্রাথমিকভাবে লিবিয়ায় ১৫ থেকে ২০ জনকে জিম্মির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছে।

বন্দিশিবিরে আটক আছে জুয়েল শেখ, ইমন বেপারী, হাসান বেপারী, জুয়েল বেপারী, দাদন মাতুব্বর, হাসান আহম্মেদসহ শতাধিক যুবক। কিছুতেই থামছে না এই পরিবারগুলোর কান্না।

বন্দিশালায় আটক জুয়েল বেপারীর বাবা জামাল বেপারী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে লিবিয়াতে ভালোই ছিল। মোটা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বন্দিশালায় আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সেই নির্যাতনের চিত্র পাঠানো হয় স্বজনদের কাছে। দাবি করা হয় মুক্তিপন।

ইমন বেপারীর বাবা লোকমান জানান, আমরা গরিব মানুষ। কিভাবে এতো টাকা দেব। আমার সন্তান উদ্ধারে সরকারের সাহায্য চাই। এরকম শতাধিক পরিবারে বইছে কান্নার রোল। কিছুতেই থামছে না কান্না।

এর আগে র‌্যাব সিরাজুল ইসলাম নামে এক পাচারকারীকে আটক করে। পুলিশ আটক করেছে আলমগীর হোসেন রিপন, নয়ন আক্তার ও সামচুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আটকের পরে এরা আরো বেপরোয়া হয়েছে। বাংলাদেশে আটকদের ছেড়ে দেয়া না হলে লিবিয়ার বন্দিশালায় জিম্মিদের হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছে।

জিম্মি রবিউল খলিফার বাবা ইউসুফ খলিফা বলেন, আমার ছেলেকে ওরা জিম্মি করে কয়েক দফায় মুক্তিপন আদায় করেছে। আমি প্রশাসনকে জানানো কারণে ওরা আরো ক্ষিপ্ত হয়েছে। ওই চক্রের সদস্যদের ছেড়ে না দিলে আমার ছেলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

র‌্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর রাকিবুজ্জান বলেন, চক্রটি একাধিক সদস্যদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। অপরাধীদের গ্রেপ্তার আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :