‘একাত্তরের তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে রোহিঙ্গা নির্যাতন’
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দমনে দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশ যে নির্যাতন চালাচ্ছে, তা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের তাণ্ডবকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মানববন্ধনের আয়োজন করে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। দেশব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ১৯৯৩ সালে ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে গঠিত হয় নিসচা। তিনি নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি তল্লাশিচৌকিতে উগ্রবাদীদের হামলার সূত্র ধরে রাখাইন রাজ্যে দমন রোহিঙ্গা দমনে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ। অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, জুলুম, নিপীড়ন, ঘর বাড়িতে আগুন, মানুষ হত্যা অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা।
সেনাবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গা জানিয়েছে, মিয়ানমারের সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের গুলি করে হত্যার পর লাশ এক জায়গায় জড়ো করে আগুনে পুড়িয়ে ফেলছে। অনেক বাড়িতে গিয়ে সবাইকে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিয়ে আগুন দিচ্ছে। ফলে সবাই ঘরের ভেতরে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অনেককে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে ধরে নিয়ে জ্যান্ত আগুন দিয়ে মারছে। অনেক গ্রামে বড় গর্ত করে গণহারে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। যারা বিজিপির হাতে খুন হচ্ছে তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘মিয়ানমারের নির্যাতনের চিত্র দেখলে আমি ঘুমাতে পারি না, একাত্তরের যুদ্ধ আমি দেখেছি। সে সময় হানাদার বাহিনী যে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছিল তাকেও হার মানিয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন।’
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সু চি’র বিচার দাবি করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘মিয়ানমারে নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করে সেখানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে সূ চির বিচার হওয়া উচিৎ।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই নায়ক বলেন, ‘মিয়ানমারের ভয়াবহ নির্যাতন দেখে অনেক সময় আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, মিয়ানমার এত শক্তি পায় কোথা থেকে? তারা কোনো রাষ্ট্রকে পরোয়া করছে না। পরে বুঝতে পারলাম যেসব বিদেশি অ্যাম্বাসেডর রোহিঙ্গা নির্যাতন দেখতে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে দুটি রাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করছে।’
তিনি জানান, রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে নিসচা’র পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিবাদলিপি বাংলাদেশের মিয়ানমার হাইকমিশনারের কাছে পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, চিত্রনায়িকা রোজিনা, চিত্রনায়ক জায়েদ খান, চিত্রপরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার প্রমুখ।
ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/জিএম/এমআর