মঙ্গলবার মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সরকার

ফাইল ছবি

চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসেবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে সাত টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারও বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- চাল নিয়ে রাজনীতি চলছে। চালবাজি চলছে। চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আগামী মঙ্গলবার মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এ কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে চালের দাম বাড়ার ঘটনাকে মিল মালিকদের কারসাজি উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী মিল মালিকদের ভালো হওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেন।

আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক হবে। বৈঠকে সব বিভাগের বড় বড় মিল মালিকদের ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।

এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা চাল নিয়ে চালবাজি করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চালবাজি ও ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছি। কারণ বাংলাদেশেই এক কোটি টন চাল আছে, তারপরেও এই অবস্থা।’

হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর দুই দফা বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে বেড়ে যাওয়া চালের দাম গত কয়েক দিনে আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চাল আমদানি শুল্ক ২৬ শতাংশ কমিয়ে দুই শতাংশে নামানোর পরেও চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। এরপর থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির চুক্তি করেছে সরকার। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড দুই দফায় আমদানির চাল এলেও বাজারে দাম কমছে না।

এবার এক কোটি ৯১ লাখ টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা ও রোগবালাইয়ে দেশে ২০ লাখ টন ফসল নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এবার এক কোটি ৭০ লাখ টন বোরো ধান পাওয়ার কথা জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ধান আমাদের ঘরেই আছে, আরও ২২ লাখ টন আউশ ধান পেয়েছি। ফসলহানির পরেও ১ কোটি ৯২ লাখ টন ধান আমাদের ঘরে এসেছে। কাজেই সব ধান তো চলে যায়নি, চাল তো আছে।’

দেশে দিনে ৮৫ হাজার টন চাল লাগে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত চার মাসে আমরা ১ কোটি ২ লাখ টন চাল খেয়েছি। আরও এক কোটি টন চাল দেশে আছে। হয় মিল মালিক, আড়ৎদার, না হয় ছোট-বড় ব্যবসায়ী- কারো না কারো বাড়িতে এসব চাল আছে। এরপরেও চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়ার পর বেসরকারিভাবে ভারত থেকে ছয় লাখ টন চাল এসেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চাল নিয়ে চালবাজি ও রাজনীতি হচ্ছে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, সংকট সৃষ্টি ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভোক্তাদের সঙ্গে কৃষকদের কথাও চিন্তা করতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হয়ে যাবে…, এটা হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।

বেসরকারিভাবে ১৭ লাখ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ৩৪ টাকা দরে সাড়ে ১২ লাখ টন বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মাত্র আড়াই লাখ টন সংগ্রহ হওয়ায় চাল আমদানি করতে হচ্ছে।

ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের এক লাখ ৫৪ হাজার টন চাল গোডাউনে ঢুকেছে। বাকি চাল খালাসের অপেক্ষায় সমুদ্রে আছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানিতে চুক্তি হয়েছে। এলসি হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে এসব চাল দেশে আসবে।

মিয়ানমানের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার বাংলাদেশে আসছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, আশা করছি তাদের সঙ্গে দুই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হবে।

ভারত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি তিন মাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ছড়িয়ে পড়া খবরের সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।

সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায় চালের কোনো সঙ্কট নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমদানির চাল এক ছটাকও বাইরে (বাজারে) যাচ্ছে না। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমার কাছে চালের যে মজুদ আছে তাতে (সরকারি বিতরণ ব্যবস্থায়) কোনো সমস্যা হবে না। গোডাউনে চাল থাকা না থাকার সঙ্গে মার্কেটের কোনো সম্পর্ক নেই।’

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাব রশিদের মিলে হানা দিয়ে ৫০ হাজার টন চাল জব্দ ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আছে। আমি আপনাদেরও (সাংবাদিক) সাহায্য চাই।

(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/এমএম/এমআর)