যেসব ‘ভালো’ অভ্যাস আসলে আপনার ক্ষতি করছে

তাজরিন জাহান তারিন,ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৫২

আমাদের কিছু অভ্যাস রয়েছে যেগুলো আমরা ভালো বলেই জানি এবং মানি। পরিবারের বয়জেষ্ঠ্যরা ছোটোকাল থেকে বলেছেন এসব মেনে চলতে, বুঝিয়েছেন এসব অভ্যাস ভালো। অথচ গবেষণা বলছে এসব অভ্যাসে ভালোর চেয়ে মন্দই হয় বেশি। এর কিছু কিছু হয়তো আপনার জন্যও প্রযোজ্য। জেনে নিন এরকমই কিছু ‘ভালো’ অভ্যাসের ক্ষতিকর দিকগুলো, আর চেষ্টা করুন অভ্যাসগুলো পাল্টে ফেলতে-

১) অতিরিক্ত পানি পান করা

বাবা মা সারা জীবন বলেছেন- ‘বেশি করে পানি খাও।‘ সেই বেশিটা যে কতটা বেশি সেটা কি জানা আছে? যদিও পানি আমাদের শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান কিন্তু প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি ভালোর চেয়ে মন্দই করবে আপনার। ঢালাও ভাবে বলা হয়, দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। কিন্তু সেই গ্লাস কত বড়? মানুষটাই বা কত বড়? এসব কি পরিষ্কার করে বলা হয়েছে কোথাও? হয়নি। আসল কথা হচ্ছে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানি খেতে হবে। তার থেকে কমও না আবার তার থেকে বেশিও না। শরীরের আয়তন বুঝে, ওজন বুঝে এবং প্রয়োজন বুঝে পানি খেতে হবে। শীতের দেশে যে থাকে তার পানির চাহিদা আর গরমের দেশে যে থাকে তার পানির চাহিদা এক হতে পারে না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত পানি পান করার কারণে কিডনির সমস্যা হতে পারে এবং মস্তিষ্ক স্ফীত হয়ে যেতে পারে। তছাড়া অতিরিক্ত পানি শরীরের অতি প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট (সোডিয়াম, পটাশিয়াম) এর মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।

২) ঘর-বাড়ি ঘন ঘন পরিষ্কার করা

ঘর বাড়ি পরিষ্কার রাখা খুবই ভাল অভ্যাস। কিন্তু যখন তখন ঘর ফিনাইল, ডিটারজেন্ট বা কেমিক্যাল ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করাটা মোটেই ভালো অভ্যাস না। একে বলে শুচিবায়ু। এটা একধরনের মানসিক সমস্যাও বটে। তাছাড়া ঘর দোর পরিষ্কারের সময় ডিটারজেন্ট এবং অনেক অনেক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে এমন ক্লিনিং এজেন্ট ব্যাবহার করা হলে যিনি পরিষ্কার করেন তার এবং যারা ঘরে বসবাস করেন তাদেরও চোখের দৃষ্টি ক্ষীন হওয়া, মাথা ব্যথা করা, এমন কি শ্বাসপ্রশ্বাসের নালিতে প্রদাহও হতে পারে।

৩) ওজন কমানোর প্রবনতা

অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছেন যে আপনার নিজের কাছে ভালো মনে হলেও চিকন হয়ে যাওয়াটা খুব একটা ভালো খবর নয়। কিছু মানুষ রয়েছে যারা প্রচুর খায় কিন্তু তাদের ওজন বাহ্যিক ভাবে একদমই বাড়ে না। আসলে তাদের ক্ষেত্রে তাদের শরীরের চর্বি গুলো লিভার এবং হার্টে গিয়ে জমা হয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে কঠিন রোগের কারন হয়ে দাড়ায়। এছাড়া যাদের শরীরে চর্বি কম থাকে তারা খুবই সহজেই শীতকালের ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অনেক গুণ বেশি।

৪) ডায়েট পানীয়

অনেকেই ভাবেন সাধারন কোমল পানীয়ের চেয়ে ডায়েট কোমল পানীয় তুলনামূলক ভাবে ভালো। কোমল পানীয় নির্মাতারাও তাদের ক্রেতাদেরকে এমনটাই বুঝিয়ে আসছেন। কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের প্রলুব্ধ করে এই বলে যে এতে চিনি মেশানো হয়নি, তাই অল্প পরিমানে ক্যলরি রয়েছে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক কম ক্ষতিকর এবং ওজন বাড়তে দেয় না। কিন্তু গবেষণা বলছে ঘটনা মোটেই এরকম কিছু না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে মাত্র এক ক্যান ডায়েট সোডার পান করলেই ওজন বৃদ্ধি, কিডনির সমস্যা এবং হার্টর সমস্যা, এমন কি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও তৈরি হয়।

৫) মুখে পানি দিয়ে কুলি করা

দাঁত মাজার পর বেসিনের আয়নার সামনে দাড়িয়ে কুলকুচো করা, এটা কমবেশি সবারই একটা নিয়মিত অভ্যাস। কিন্তু ডেন্টিস্টরা দারুন ভাবে এর সমালোচনা করেন। তাদের মতে যখন আপনি দাঁত ব্রাশ করেন তখন দাঁতে ফ্লোরিনের একটি স্তর পড়ে, যা দাঁতকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু পানি দিয়ে বার বার কুলি করার ফলে এটি পুরোপুরি ধুয়ে মুছে যায়। ফলে দাঁত মাজার বাড়তি সুফলটুকু পাওয়া যায় না একদমই।

৬) দৌড়ানোর যন্ত্র

ঘরে ঘরে আজকাল দেখা মেলে ট্রেডমিলের। জনপ্রিয় ব্যায়ামের যন্ত্রটি ঘরে থেকেই যারা ওজন কমাতে চান তাদের কারো কারো কাছে ভীষন রকম প্রিয়। আর এটাও পরীক্ষিত সত্য যে ট্রেডমিলে দৌড়ালে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যায়। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ট্রেড মিল বা দৌড়ানোর যন্ত্র ব্যবহার করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জোড়াগুলোর ভয়ানক ক্ষতি হয়। তাই এরচেয়ে একটু দ্রুতগতিতে হাটা ভালো। বিশেষজ্ঞরা কিছু পেশী শক্ত করার ব্যায়ামও করতে বলেন ট্রেডমিলে দৌড়ানোর বদলে। কেননা এতে করে শুধু ওজনই কমে না পেশীও ঠিক থাকে।

৭)ভাতঘুম

দিনের মধ্যভাগে কিছুক্ষণের জন্য একটু চোখ বুজে ঘুমিয়ে নেয়াকে অনেকেই পছন্দ করেন। কেউ কেউ ভাবেন এটা একটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ। তাছাড়া বেশিক্ষণ ঘুমালে মস্তিষ্কের স্মৃতি এবং কার্যকারিতায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

ঢাকাটাইমস/১৫ সেপ্টেম্বর/টিজেটি/কেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :