ঠান্ডা নাকি গরম পানি পান করবেন?

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৪৯

পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু সেটা অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে। শরীরের প্রয়োজনীয় এই পানি পান করতে পারেন ঠান্ডা কিংবা গরম। ঠান্ডা না কি গরম, কোন পানি শরীরের জন্য উপকারী এ নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় রয়েছে। সংশয় দূর করতে জেনে নিন ঠান্ডা ও গরম পানি শরীরে আলাদা আলাদাভাবে কি প্রভাব ফেলে।

শরীরে ঠান্ডা পানির প্রভাব

অনেকেই গরম থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা পানি পান করেন। কিন্তু আপনি জানেন কি এতে আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। যদিও ঠান্ডা পানি বা বরফ দেয়া পানি পান করলে অস্থায়ী প্রশান্তি পাওয়া যায়, কিন্তু নিয়মিত বরফ পানি পান করলে স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

হজমে বাঁধার সৃষ্টি করে

ঠান্ডা পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়ায় বাঁধার সৃষ্টি হয়, কারণ ঠান্ডা পানি রক্তনালীকে সংকুচিত করে দেয়। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। যদি খাবার ঠিকমত হজম না হয় তাহলে পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হয়না।

পুষ্টি উপাদান নষ্ট হয়ে যায় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। যখন আপনি খুব কম তাপের পানীয় পান করেন তখন আপনার শরীরকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়। এই ক্ষয়িত শক্তি হজমের কাজে ব্যবহার হতে পারতো এবং শরীরে পুষ্টি শোষিত হতে পারতো। এ কারণেই ঠান্ডা পানি নিয়মিত পান করলে শরীর কম পুষ্টি পায়।

গলা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা ঠান্ডা পানি পান করলে শ্বাসযন্ত্রে শ্লেষ্মা জমা হয়। শ্লেষ্মা শ্বাসনালীর সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কিন্তু যখন এই শ্লেষ্মা জমে যায় তখন শ্বাসনালী উন্মুক্ত বা প্রকাশিত হয়ে যায় এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে গলাব্যথা হতে পারে।

হৃদস্পন্দন কমায় ঠান্ডা পানি পান করলে হৃদস্পন্দন কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঠান্ডা পানি পান করলে ভেগাস স্নায়ু উদ্দীপিত হয়। ভেগাস স্নায়ু হচ্ছে করোটির ১০ ক্রেনিয়াল স্নায়ু যা শরীরের স্বতন্ত্র স্নায়ুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শরীরের অনিচ্ছাকৃত কাজগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভেগাস স্নায়ু হৃদস্পন্দনের মাত্রা কম হওয়া এবং ঠান্ডা পানির কম তাপমাত্রার মধ্যস্থতা করে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে, যার ফলে হৃদস্পন্দন কমে যায়।

চর্বি জমা হয় খাবারের সাথে সাথে যদি ঠান্ডা পানি পান করেন অথবা খাওয়ার পর পরই যদি ঠান্ডা পানীয় পান করেন তাহলে খাদ্যে উপস্থিত চর্বি কঠিন আকার ধারণ করে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত চর্বি হজম হওয়া কঠিন হয়ে যায়।

শরীরে গরম পানি পানের প্রভাব কিডনি ভালো রাখতে, কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে, শরীরে শক্তির জন্য পানি পান করা ভীষণভাবে দরকারি। গরম পানি এইসবের সঙ্গেই আরও বেশকিছু উপকার করে আপনার শরীরে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ঘরোয়া টোটকা হিসেবে কাজ দেয় গরম পানি।

ভালো পরিপাক পরিপাক হরমোনগুলিকে উদ্দীপিত করে গরম পানি। ফলে পরিপাকের হার বাড়ে। খাবারকে দ্রুত ভাঙতে ও খাদ্যরস শোষণে সাহায্য করে গরম পানি। এই কারণে রেস্তরাঁয় খাবার পর চা-কফি অফার করা হয়।

ডিটক্স গরম পানি ঘাম ও মূত্রের মধ্যে দিয়ে শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। গরম জল শরীরে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঘাম বেশি হয়। শরীর ডিটক্স হয়।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় গরম পানি রক্তে ফ্যাট জমতে দেয় না। রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। পেশীকে শিথিল করে। ফলে রক্ত সহজেই সংবাহিত হতে পারে। গরম পানিতে গোসল একই কারণে উপকারী। ধমনী ও শিরাকে প্রসারিত করে গরম পানিতে গোসল।

যন্ত্রণার উপশম ঘটায় মাথা যন্ত্রণা, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, মহিলাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডে খিঁচুনিতে আরাম দেয় গরম পানি।

ওজন ঝরাতে সাহায্য করে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে গরম পানি। গরম পানি খিদে কমায়। ফলে 'ক্যালোরি ইনটেক' কম হয়। যে কারণে ওজন বৃদ্ধি হয় না। অনেক ডায়েট খাবারের থেকেও ভালো কাজ দেয় গরম পানি।

বার্ধক্য আসতে দেয় না যেকোনও অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্টের চেয়ে অনেক বেশি কাজ দেয় গরম পানি। ঘরম পানি যেহেতু শরীরকে ডিটক্স করে, ফলে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। বলিরেখা আসতে দেয় না।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীর শুষ্ক হয়ে গেলেই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কারণ অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে তখন আর খাবার নীচের দিকে নামতে পারে না। গরম পানি শরীরে জলের সমতা ফেরায়। খাবারকে তাড়াতাড়ি পরিপাক করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

ঠান্ডা নাকি গরম পানি? নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন, শরীরে ঠান্ডা ও গরম পানির প্রভাব। এখন সিদ্ধান্ত আপনার ঠান্ডা নাকি গরম পানি পান করবেন। তবে আপনি যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান তবে অবশ্যই পান করুন গরম পানি।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :