খলিল মিয়ার ঝাড়ু

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
| আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:০৯ | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৫

বৃদ্ধ খলিল মিয়া ঝাড়ু বাঁধেন আর মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেন। এই কাজ করেই ২৫ বছর ধরে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সদর ইউনিয়নের সুরিয়াব এলাকায় বাড়ি তার।

খলিলকে এই বুড়ো বয়সে ঝাড়ু বানিয়ে বিক্রি করতে দেখে স্থানীয়রা কেউ কেউ দুঃখ করে। বৃদ্ধ বয়সেও এতো বড় বোঝা মাথায় করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতে হয় তাকে শুধুমাত্র দুইবেলা দুই মুঠ খাবার জোটাতে। সংসারের অভাব-অনটন পিছু ছাড়ছে না তার।

নিজের এক শতক জমির উপর দুচালা টিনের ঘর ছাড়া সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই খলিল মিয়ার। নিজের একমাত্র ছেলেটিও তেমন কিছু করতে পারেনি। ভাল জীবিকার সন্ধান পায়নি। তাই দিনমুজুর হিসেবে এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করত। বিয়ে করে কাজের কথা বলে ঢাকায় পাড়ি জমায় সে। সেখানেই স্ত্রীকে নিয়ে তার বসবাস। কোন মতে সংসার চালায় সে, তাই বাবা-মাকে তেমন কোনো খরচ দিতে পারে না। তাই খলিল মিয়া বাধ্য হয়েই এ বয়সেও ফেরি করে ঝাড়ু বেচেন।

বৃদ্ধ খলিল মিয়া জানান, এক সময় আইসক্রিম বিক্রি করে চালাতেন সংসার। সে সময়ে তার ছেলেও তার সাথে সাথে আয় করত। বললেন, ছেলে চলে গেছে, তার নিজেরই সংসার চলে না। আমার শরীরে এই বয়সে নানা রোগবালাই বাসা বাঁধছে। শ্বাসকষ্ট হয়, বাতের ব্যথা গিটে গিটে। আমার স্ত্রীও হাঁপানির রোগী। প্রতিদিন কয়েকশ টাকার ওষুধ লাগে। ওষুধের টাকা, খাওয়ার খরচ সব এই ঝাড়ু বিক্রির টাকা দিয়েই জোগাড় করতে হয়।

খলিল মিয়া জানালেন, এক সময় স্থানীয় টেক টিলায় অবাধে গড়ে ওঠা ছনচালা থেকে বিনামূল্যে ছন কেটে নিয়ে শুধুমাত্র কায়িক শ্রম দিয়েই ঝাড়ু তৈরি করতে পারতেন। এখন এসব ছন দূর জেলার পাইকারদের কাছ থেকে কিনে আনতে হয়। তাই এখন ঝাড়ু বিক্রি করেও খুব একটা টাকা লাভ করতে পারেন না তিনি।

ঝাড়ু তৈরি কুটির শিল্পের আওতায় হলেও তার প্রয়োজনীয় জমি না থাকায় সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কখনই ঋণ দেয়নি তাকে। তাই আত্মীয়-স্বজন থেকে ঋণ করে ঝাড়ু বানানো আর বিক্রি করার কাজ করছেন খলিল মিয়া। এসব ঝাড়ুর দাম সাধারণত পাইকারদের কাছে বিক্রি করলে তেমন লাভ হয় না। তাই ফেরি করে ঝাড়ু প্রতি ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার ঝাড়ু প্রতি আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। মাঝে মধ্যে ঝাড়ু বিক্রি করতে না পারলে কম লাভেই স্থানীয় মুদি দোকানে বিক্রি করে দেন।

অভিযোগ করলেন, বয়স ৬২ হলেও এখনো বয়স্কভাতার তালিকায় নাম উঠাতে পারেননি। স্থানীয় মেম্বারের কাছে কয়েকবার গেছেন, কিন্তু তারা ভাতা দেয়নি। বারবার পরে দেখা করার কথা বলে ঘুরিয়েই যাচ্ছেন ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান লিটন।

এ অভিযোগ নিয়ে মজিবুর রহমান লিটন মেম্বার বলেন, আমার কাছে বয়স্ক ভাতার জন্য এসেছিল খলিল মিয়া। কিন্তু উপজেলা থেকে নতুন বরাদ্দ না থাকায় পরে দেখা করতে বলেছি।

খলিল মিয়া আদৌ বয়স্কভাতা পাবেন কিনা সেটা জানতে চাইলে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুঁইয়া রানু বিষয়টির সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, খলিল নতুন করে আবেদন করলে তাকে ও তার স্ত্রীকে বয়স্কভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :