সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান চাকমা রাজার

রাঙামাটি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪২ | প্রকাশিত : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৩০

রোহিঙ্গ্যা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে যাতে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন না হয় সেদিকে নজর দিতে ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। রবিবার দুপুরে রাঙামাটির রাজ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানান চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।

এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে ধর্মীয় রূপ দিয়ে কোথাও কোথাও বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্মালম্বীদের ওপর নিপীড়ন করা হচ্ছে। এটি দিন দিন বাড়ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে যারা চাকরি করছেন তারা নিরাপত্তা সংকটে ভুগছেন। অনেকে চাকরি ছেড়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দেবাশীষ রায় আরও বলেন, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কর্মরত বা বসবাসরত একাধিক পাহাড়ি তাঁদের জাতিগত বা ধর্মগত পরিচয়ের কারণে কটাক্ষ উক্তি, হুমকি এবং হিংসাত্মক ও অন্যান্যভাবে অনাকাংখিত আচরণের শিকার হয়েছেন।

রাজা বলেন, যেহেতু বার্মার সংখ্যা-গুরু সম্প্রদায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং শরণার্থীদের সিংহভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী, বিষয়টাকে অহেতুকভাবে ধর্মগত সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব হিসেবে কোন কোন মহল থেকে অপব্যাখ্যা প্রদান করা হচ্ছে। এসবের অসংযত বহিঃপ্রকাশের ফলে সাম্প্রদায়িকতা বেড়ে যাচ্ছে। অহেতুকভাবে দেশের বৌদ্ধদেরকে রাখাইন রাজ্যের মুসলমানদের নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাস্তবে দেখা যায় যে, মিয়ানমার সরকারের হাতে, বিশেষ করে সামরিক শাসনামলে শুধু মুসলামানরাই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তা নয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সংখ্যাগুরু বামার্র সম্প্রদায়, শ্যান, রাখাইন, মোন, ক্যারেনসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর নারী ও অগণিত ক্ষেত্রে অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে ‘রোহিঙ্গা’ নামে পরিচিত যারা বার্মায় ‘বাঙালি’ বা ‘কোলা’ নামে পরিচিত। এ জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বার্মাতে সশস্ত্র কার্যক্রমে জড়িত মর্মে নির্ভরযোগ্য খবর পাওয়া গেছে।

তাঁদের কার্যকলাপের কারণে, অন্ততঃ আংশিকভাবে, নিরীহ ও সংঘাতের সাথে যুক্ত নয় এমন অনেকেই বার্মার সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন ও হচ্ছেন। এসব সশস্ত্র দলের হাতে বর্মীয় বৌদ্ধ দইনাক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আক্রমণের শিকার হয়েছে মর্মে সংবাদ পাওয়া গেছে (যারা পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা ও তংচংগ্যা এবং কক্সবাজার জেলার দৈনাক-দের সাথে, ঐতিহাসিকভাবে জাতিগত ভিত্তিতে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলা যায়। যাদের মধ্যে চলমান সামাজিক সম্পর্ক চলমান রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সংশ্লিষ্টদের কয়েকটি বিষয়ের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজা।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে যথাযথ পরিবেশ আনয়ন সাপেক্ষে বর্মী শরণার্থীদের তাঁদের স্বস্ব এলাকায় সন্মানজনক ও গ্রহণযোগ্য প্রত্যাবর্তনের ব্যাবস্থা করা।

স্বদেশে প্রত্যাবতন না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পর্যাপ্ত শিবির প্রতিষ্ঠা এবং শিবির-াসীর জন্য খাদ্য ও পুষ্টি-নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক সুযোগ প্রদান করা।

এতে আন্তর্জাতিক দাতা-সংস্থা, জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিওদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা ও ভূমিকা থাকা উচিৎ। তবে শিবিরের স্থান বাছাইয়ে যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ক্ষতি সাধিত না হয় তাও নিশ্চিত করা উচিৎ।

বাংলাদেশে বসবাসরত ‘রোহিঙ্গা’ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত সংগঠন বা ব্যক্তিদের সশস্ত্র সংঘাত সম্পর্কিত কার্যকলাপ যাতে বাংলাদেশে বা বার্মায় হতে না পারে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

সরকার, পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকাতে বসবাসকারী বা সফররত পাহাড়ি বা আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাংলাদেশি ব্যক্তিদের (বিশেষ করে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার রপ্তানি কারখানায় কর্মরত পাহাড়ি ব্যক্তিদের) জীবন, দেহ ও সম্পত্তির নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রচার মাধ্যম, রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় নেতা, গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজ কর্তৃক বার্মার রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতকে বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ মর্মে অপব্যাখ্যাকে প্রতিহত করা। ফেসবুকেসহ ইন্টারনেট, পত্র পত্রিকা, সভা, সম্মেলন, সমাবেশ, মাইকিং, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও অন্যান্য প্রকাশনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সীমান্ত এলাকায় শরণার্থী শিবিরে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শরণার্থীদের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ শরণার্থী শিবিরের বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিবাসন না হওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :