চাল আতঙ্কে উত্তরের মানুষ

প্রতীক ওমর, উত্তরাঞ্চল ঘুরে
 | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০৩

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের চালের দাম লাগামহীন বেড়ে চলেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে ৮-১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে গরিবের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি।

চালের মূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবেশী ভারতে চালের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে দেশে। এ ছাড়া মোটা চালের আমদানি এখানকার বাজারে খুব কম। মিল থেকে মোটা চাল আসছে না। মহাজনদের হাতে চাল থাকলেও তারা গুদামজাত করে দাম বাড়াচ্ছেন।

অন্যদিকে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকে দেশের বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও দুষছেন। তারা বলছেন, ‘দেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো সরকারিভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে না। ফলে তারা চাল প্যাকেটজাত করে ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। ’

উত্তরের আট জেলায় দুই দফা বন্যায় কৃষকের অর্ধলাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন উল্লেখযোগ্য। বন্যায় বিপুল পরিমাণ জমির ধান নষ্ট হওয়ায় যাদের ঘরে আগের ধান আছে তারা সেই ধান বাজারে ছাড়ছে না। আবার মৌসুমের শুরুতে একশ্রেণির স্টক ব্যবসায়ী কমদামে ধান কিনে রেখেছে। তারা বন্যার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি দামে এসব ধান বিক্রি করছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ চাল আতঙ্ক আছে।

চাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এখনই থামানো না গেলে বাজার পরিস্থিতি আরো অস্বাভাবিক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বহুজাতিক কিছু কোম্পানি কৃষকের ধান মৌসুমের শুরুতে কম দামে কিনে গুদামজাত করে এখন তা চাল করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। এর প্রভাবও বাজারে পড়েছে বলে দাবি করছেন মিলমালিক নেতারা।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চাল বেশি দামে বিক্রির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখে। কিছু করার থাকলে তারাই করতে পারবে।

বাজারে চালের দাম বাড়ায় সরকারের বেঁধে দেওয়া ৩৪ টাকা কেজিতে চাল দিতে অধিকাংশ মিলার নারাজ। এবার উত্তরাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ মিলার খাদ্য অফিসের সঙ্গে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। এতে সরকারি খাদ্যগুদামে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। চালের চলমান অস্থির বাজার এর জন্য দায়ী। ছোট ছোট মিলারদের লোকসানে খাদ্যগুদামে চাল দিতে বাধ্য করা হলেও রাঘববোয়ালরা এক কেজি চালও গুদামে এখন পর্যন্ত দেয়নি। তারা সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার পরিবর্তে খোলা বাজারে কেজিপ্রতি প্রায় ২৫ টাকা বেশিতে চাল বিক্রি করছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মিল এখন চালু। তার পরেও মোটা চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকার বেশি। চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম কোনো মহল থেকেই টেনে ধরা হচ্ছে না। দিন দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আরো বাইরে চলে যাচ্ছে।

নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া ঘুরে চালের বাজারের এমন চিত্র দেখা গেছে।

এ অঞ্চলের কৃষকরা ধান কাটার শুরু থেকেই বাজারে ধান বিক্রি করছে। বর্তমানে কৃষকের ঘরে ধান নেই। রাঘববোয়াল মিলার এবং স্টক ব্যবসায়ীদের হাতে গুদামজাত হয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ ধান। দেশের হাওর অঞ্চলের দুর্যোগকে পুঁজি করে অসাধু মিলার এবং স্টক ব্যবসায়ীরা সেই ধান চাল করে উচ্চমূল্যে বাজারে ছাড়ছে।

বিভিন্ন মহল থেকে চালের বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য মিলারদের ঘাড়ে দোষ চাপালেও মিলাররা বলছেন, তারা অসহায়। ধানের দাম বেশি এবং সরকারিভাবে বাজার মনিটরিং না থাকায় চালের বাজার অস্বাভাবিক হচ্ছে।

বগুড়া জেলা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। এতে চালের বাজারে এসে দিশেহারা হচ্ছে ক্রেতারা। তিনি বলেন, চালের বাজার কেন হঠাৎ করে বাড়ল তার কারণ তাদের কাছেও পরিষ্কার নয়।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :