ট্যানারির বর্জ্য সরাবে কে?

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:৩৮ | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০৭

ট্যানারি চলে গেছে, রয়ে গেছে বর্জ্য। রাজধানীর হাজারীবাগের বাতাসে তাই এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে ট্যানারি বর্জ্যের উৎকট গন্ধ। ট্যানারি সরিয়ে নিলেও তাদের ফেলে যাওয়া বর্জ্য অপসারণ করার কোনো রকম উদ্যোগই নেয়া হয়নি। তাই পুরো এলাকাজুড়েই ট্যানারির দুর্গন্ধময় বর্জ্যের ছড়াছড়ি। ফলে কার্যত এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। আর গন্ধময় বিষাক্ত বাতাস ক্রমাগত ফুসফুসে টেনে স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছে এ পথে চলাচলকারী পথচারীরা। যাদের একটি বড় অংশই স্কুলগামী শিশু ও তাদের মা।

পাকিস্তান আমলে স্থাপিত হয় হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো। সেই থেকেই ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এ এলাকার বাসিন্দারা। ট্যানারি থেকে নির্গত বর্জ্যের গন্ধ এক রকম দুঃসহ। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবির মুখে এবং হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানির শেষে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ট্যানারিগুলো। তবে এখনো রয়ে গেছে কয়েকটি। বলা হচ্ছে এগুলোও চলে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু ট্যানারি চলে গেলেও রয়ে যাচ্ছে ট্যানারির বর্জ্য। অর্থাৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি কেটেও কাটছে না এলাকাবাসীর।

প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে পড়ে রয়েছে ট্যানারির বর্জ্য। বর্জ্যের তীব্র দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশাল এলাকাজুড়ে। আগে ট্যানারি মালিকদের বিশেষ উদ্যোগে কিছু কিছু বর্জ্য পরিষ্কার করা হলেও এখন ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে বর্জ্য অপসারণের দিকে নজর দিচ্ছেন না কেউ।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, যে কয়টি ট্যানারি এখনো সাভারে স্থানান্তরের অপেক্ষায় আছে, সেগুলোতে নতুন করে চামড়া ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। চব্বিশ ঘণ্টা তদারকির কাজ করছে পুলিশ। খুব শিগগির এই কটা ট্যানারিও সরে যাবে, এমন প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি বর্জ্য অপসারণের কোনো প্রতিশ্রুতি। এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি ট্যানারি মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। কোনো কর্তৃপক্ষই ঠিক করে বলতে পারেননি ট্যানারিগুলোর ফেলে যাওয়া এই বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব আসলে কার।

স্থানীয় একজন দোকান মালিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, "আমগোতো অভ্যাস হয়া গেছে। কিন্তু আমগো পোলাপান তো এইহান দিয়াই যায় আয়। ক্ষতিটা কতটুক অয় আপনারাই ভাল কইতে পারেন। ট্যানারি বোলে বন্ধ করছে। চামড়া নাকি ঢোকে না। না ঢুকলে যেগুলা বাইরায়, হেগুলা কোই থেকে আহে?"

ট্যানারির বর্জ্যের বেশিরভাগটাই ফেলা হয়েছে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন একটি বিশাল ডোবায়। ডোবার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্যও চোখে পড়ার মতো। ফলে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের মতই একই রকম সমস্যায় পড়ছেন বেড়িবাঁধের পথচারীরা। যাদের একটি বিশাল অংশই স্কুলগামী শিশু। কেননা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মহাবিদ্যালয় ও শেখ রাসেল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয় ট্যানারির গন্ধ ডিঙিয়ে। আপত্তি থাকলেও কিছুই করার নেই তাদের। একই অবস্থা স্থানীর অন্যান্য স্কুল শিক্ষার্থীদের যারা প্রায় বাধ্য হয়েই এ রাস্তা ব্যবহার করে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রায়হান আনাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যারা এই এলাকায় থাকে, তাদের তো অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা অনেকে দূর থেকে আসি। তাদের খুবই কষ্ট হয়। আর নিশ্চয়ই এই দুর্গন্ধ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। কিন্তু আমরাই তো আমাদের অসুস্থ করতে বাধ্য হচ্ছি।’

একই কলেজের ছাত্র শরীফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এটা সবাই জানে। জেনে শুনে যারা ধূমপান করে, তারা নিজে নিজের ক্ষতি করে। আমরা তো মোটামুটি স্বাস্থ্য সচেতন। ফ্যামিলি কেয়ার নেয়। সিগারেট টিগারেট খাই না। তারপরও আমাদের ধারণা ট্যানারির বর্জ্যে শ্বাস নিতে নিতে সিগারেট খাওয়ার মতই ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (পাবা) সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ মতিন ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘ট্যানারির বর্জ্য যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা অনেক পুরোনো কথা। ট্যানারিগুলো হাজারিবাগ থেকে চলে যাচ্ছে, কিন্তু বর্জ্য যাচ্ছে না। হ্যাঁ, এটা বলা যেতে পারে যে, ট্যানারি বন্ধ হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণটা কমবে। কারণ, নতুন করে বর্জ্য জমা হচ্ছে না। কিন্তু যা জমে আছে, সেদিকটাও কম ভয়ানক নয়। চামড়া প্রসেসিং এ ১২-১৪ ধরনের মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকে। অর্থাৎ, হাজারীবাগ এলাকায় যে পরিমাণ বর্জ্য এখন পর্যন্ত রয়েছে, তা এ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য অবশ্যই বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বহন করছে।’

ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/কারই/কেএস/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :