বিশ্বের সতর্কবার্তায় ভয় করি না: সু চি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:১২ | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:৪০
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্কতার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার ভীত নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। অনেকটা ঔদ্ধত্যের সুরে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণ মিয়ানমার ভয় পায় না।’

মঙ্গলবার সকালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সু চি বলেন, 'অন্যের ওপর দোষারোপ কিংবা দায় অস্বীকার করা মিয়ানমার সরকারের উদ্দেশ্য নয়। আমরা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেআইনি সহিংসতার নিন্দা জানাই। আমরা রাজ্যে (রাখাইন) শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।'

রোহিঙ্গারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে দাবি করে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান বলেন, 'আমরা শান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা রাখাইনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা শান্তি চাই, ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না।'

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্ব নেতারা মিয়ানমারে আসুন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করুন, দেখুন কেন রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে।

অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে স্বীকার করে সু চি বলেন, রাখাইন থেকে মুসলমানদের পালিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার খবরে তারা (সরকার) উদ্বিগ্ন। তারা সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানায়। তবে, বেশিরভাগ মুসলিমই রাখাইন রাজ্য ছেড়ে পালায়নি এবং সেখানে সহিংসতা প্রশমিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সু চি জানান, '১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে হওয়া সমঝোতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে সু চি সরকার প্রস্তুত।'

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে কফি আনান কমিশনের সব ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন সু চি।

তিনি বলেন, 'অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ আছে এবং আমাদের সবই শুনতে হবে। কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগে এই অভিযোগগুলো যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে করা হচ্ছে কি না, তা আমাদের নিশ্চিত হতে হবে।'

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সাফাই গেয়ে বলেন, 'মাত্র ১৮ মাস হলো আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমাদের অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এতো অল্প সময়ে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমাদের শুধু অল্প কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিলে হবে না।'

২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশ পোস্টে হামলার পর রোহিঙ্গা দমনে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযানের নাম করে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, নিপীড়ন ও বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা, যা এখনো অব্যাহত আছে।

অভিযানের পর নিজেদের বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা চার লাখের মতো বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা শত শত রোহিঙ্গা মুসলমানকে পুড়িয়ে ও জবাই করে হত্যা করেছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হচ্ছে অনেক নারীকে। এছাড়া তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা মুসলমারা কেন পালিয়ে যাচ্ছেন তা খুঁজে বের করতে চান সূ চি। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) এই নেত্রী বলেন, ‘রাখাইন থেকে মুসলিমরা কেন পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে, তা খুঁজে বের করতে চাই।’

ভাষণে সু চি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী শান্তিরক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। শান্তি না আসা পর্যন্ত সেনা অভিযান চলবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, ঐক্য চাই। যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সব মানুষের দুর্ভোগ গভীরভাবে অনুভব করি। রাখাইনে শান্তি, স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে কাজ করছি।’

রাখাইনে মুসলিম রোহিঙ্গা নিধন অভিযান নিয়ে আলোচনার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল রাখাইন যেতে চাইলে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছিল মিয়ানমার।

কিন্তু আজকের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাখাইন পরিদর্শনে যাওয়ার আহ্বান জানা সু চি। বলেন, এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

সু চি দাবি করেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর রাখাইনে কোনো ধরনের সহিংসতা বা অভিযান চালানো হয়নি। সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার বাস্তবায়ন করতে চায়।

ভাষণে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার প্রস্তুত বলে জানান সূ চি।

ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :