দেড় বছরের ফাতেমার প্রতিক্ষণই যন্ত্রণার!

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
 | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:১৩

শিশু ফাতেমা। বয়স সবেমাত্র ১৯ মাস। দেড় বছর বয়সের শিশু থাকবে হাসিখুশি প্রফুল্ল। কণ্ঠে থাকার কথা মাতৃভাষার কিছুটা আওয়াজ। বাবা-মায়ের প্রত্যাশা শিশুসন্তানের কাছ থেকে শুনবে আধো আধো কণ্ঠে বাবা-মা ডাক। কিন্তু এসব থেকে বঞ্চিত নিষ্পাপ শিশু ফাতেমা। জন্মের আধ ঘণ্টা পর থেকেই ফাতেমার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে যন্ত্রণায়। অসহ্য যন্ত্রাণার সব রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। চিকিৎসা করতে গিয়ে মা-বাবা এখন অনেকটাই সম্বলহীন হয়ে পড়েছে। বিনা চিকিৎসায় শিশুটি কাতরাচ্ছে তার মায়ের কোলে। এদিকে রোগের কারণে মানসিক ও দৈহিক কোনো বিকাশ ঘটছে না শিশুটির।

ফাতেমা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার রামকৃষ্ণবাড়ি ইউনিয়নের নল্লা আকন্দবাড়ি গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম ও হামিদা বেগমের সন্তান। এবং জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল হামিদের নাতনি। এই দম্পতির ঘরে এক ছেলে জন্মের ১৫ বছর পর ফাতেমার জন্ম। জন্মের আগেই চিকিৎসক আগাম বার্তা দেন শিশুটির মাথা তুলনামূলকভাবে বড়। ভূমিষ্ট হওয়ার পর এর কারণ জানা যাবে।

ফাতেমার মা ঢাকাটাইমসকে জানান, উনিশ মাস আগে ফাতেমার জন্ম হয়। জন্মের আগেই আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে জানা যায় শিশুটির মাথার আকৃতি তুলনাভাবে বড়। তবে চিকিৎসক তখন কারণ জানতে পারেননি। নির্ধারিত সময়ের জামালপুর আমেনা ক্লিনিকে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম হয় ফাতেমার। তখন সিজার করেন ওই ক্লিনিকের গাইনি ও সার্জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. ফাতরিয়া। জন্মের পর শিশুটি একটু অস্বাভাবিক দেখে চিকিৎসক তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে শিশুটিকে স্থানান্তর করেন।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তাইজুল ইসলাম দুদিন চিকিৎসা করে অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (পিজি) হাসপাতালে স্থানান্তর করেন শিশুটিকে। পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তোফাজ্জল হোসেন সিদ্দিকী, ডা. জয় ও ডা. সাইফুল ইসলাম শিশু ফাতেমাকে চিকিৎসার দায়িত্ব পান। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসক নিশ্চিত হন শিশুটির ব্রেইনে পানি জমা আছে। গর্ভাবস্থায় মায়ের ঠান্ডা লাগা থেকেই শিশুটির এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পিঠে ফোসকাও পড়ে। যা মেরুদণ্ড পর্যন্ত আঘাত করে। পরে চিকিৎসক শিশু ফাতেমাকে দুটি অপারেশন করে। মস্তিষ্ক থেকে পানি বের হওয়ার জন্য অপারেশনের পর একটি অস্থায়ী নল লাগিয়ে দেন চিকিৎসক। কয়েক দিনের মধ্যে ফাতেমার অবস্থা স্বাভাবিক হতে থাকে। টানা দেড় মাস চিকিৎসা শেষে ফাতেমা বাড়ি ফিরে আসে।

বাড়ি ফেরার পর থেকে পুনরায় এই ভালো এই মন্দ এভাবে কাটলো দেড় বছর। এর মধ্যে স্বাভাবিক জীবন কাটেনি একটি মুহূর্তও। সম্প্রতি ফাতেমার ক্রমশ মাথার আকৃতি বড় হচ্ছে। এই মুহূর্তে সুচিকিৎসা না হলে শিশুটির আগাম ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা।

ফাতেমার বাবা নজরুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, মেয়েকে সুস্থ করতে তিনি তার সম্বল সবকিছুই হারিয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি দুটি গাভি পালন করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছে। মেয়েকে বাঁচাতে শিশু ফাতেমার চিকিৎসা খরচ কোনোভাবেই জোগার করতে পারছেন না তিনি। নিষ্পাপ শিশু ফাতেমাকে বাঁচাতে চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

ফাতেমার নানা জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল হামিদ ঢাকাটাইমসকে জানান, আমার নাতনি ফাতেমার জন্য ওর মা বাবা অনেক চিকিৎসা ব্যয় করে অসহায় হয়ে পড়েছে। তিনিও চিকিৎসা ব্যয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। এখন যে অবস্থা শিশুটিকে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার মাধ্যমে চিকিৎসা না করলে শিশুর মা বাবার পক্ষে চিকিৎসা করে নিষ্পাপ শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে সরকারি সহযোগিতা আশা করছেন এর বীর মুক্তিযোদ্ধা।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/আরকে/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :