মাদ্রাসা সুপার হত্যা: চার পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:২০

সাতক্ষীরায় এক জামায়াত নেতা ও মাদ্রাসা সুপারকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগে কর্মকর্তাসহ চার পুলিশ সদস্যকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে তার পরিবার।

মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল আদালতে (১) এ মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাই বজলুর রহমান।

মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান, উপপরিদর্শক পাইক দেলওয়ার, সহকারী উপপরিদর্শক হাসান ও অপর এক পুলিশ সদস্যকে।

আদালত মামলটি আমলে নিয়েছেন বলে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবুবক্কর নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র জানায়, নিহত মাদ্রাসা সুপার মাওলানা সাইদুর রহমান (৪৫) সাতক্ষীরা সদরের কাথন্ডা গ্রামের মৃত জিল্লার রহমানের ছেলে। স্থানীয় কাথন্ডা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ছিলেন। তিনি কলারোয়া হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন। গত শনিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

নিহতের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, গত ১৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশের তিনজন সদস্য তাদের বাড়িতে এসে তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের কথা বলে। কোন কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে জানতে চাইলে পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে। এসময় তার স্ত্রী গ্রেপ্তারি পরওয়ানা চাইলে পুলিশ দুর্ব্যবহার করে।

মাওলানা সাইদুর রহমান পুলিশকে জানান, তিনি অসুস্থ রোগী। প্রতিদিন তাকে ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু তার কথা না শুনে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে নিয়ে স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কিন্তু চিকিৎসা না করাতে দিয়ে তাকে সাতক্ষীরা সদর থানা হাজতে রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার সদর থানাতে মাওলানা সাইদুর রহমানের সাথে দেখা করতে আসেন তার স্ত্রী ময়না। এসময় স্ত্রীর কাছে তার স্বামী অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে অনেক মারপিট করেছে। তার গায়ের পাঞ্জাবিটা ছিঁড়ে গেছে। পুলিশের কাছে ওষুধ চাইলে পুলিশ তা দেয়নি। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে তাকে নিয়ে ইসিজিসহ কয়েকটি পরীক্ষা করায় পুলিশ। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে আদালতে হাজিরার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয় বলে নিহতের স্ত্রী জানান।

ময়না জানান, তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। আটকের পর পুলিশ দুটি মামলায় অজ্ঞাত আসামি করে আদালতে চালান দেয়। পুলিশের তিন অফিসার এসআই আসাদ, দেলওয়ার ও এএসআই সুমন তার স্বামীকে জোর করে আটক করে নির্যাতন করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সূত্র জানায়, এ সময় মওলানা সাইদুরের ভাতিজা মুত্তাসিম বিল্লাহ পাঁচ হাজার টাকা এনে চাচাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তারা তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এ টাকা দিতে না পারায় মাদ্রাসা শিক্ষককে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরা থানায়। সেখানেও তার ওপর নির্যাতন করতে থাকে পুলিশ।

নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দিনভর পুলিশ হেফাজতে রেখে তার ওপর দফায় দফায় নির্যাতন করা হলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে আদালতে নেয়া হলে কর্তৃপক্ষ তার অসুস্থতা দেখে সাঈদুর রহমানকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ তাকে ফের নিয়ে যায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করার পর বিকাল ৫টায় পুলিশ ফের তাকে আদালতে নিয়ে যায়। বিকালে মওলানা সাইদুরকে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠায় আদালত।

সাতক্ষীরা কারাগারের সুপার হাফিজুর রহমান জানান, কারাগারের মধ্যে শুক্রবার রাতে সাঈদুর রহমান আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কারা হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে মধ্যরাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সাতক্ষীরা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. ফরহাদ জামিল ঢাকাটাইমসকে বলেন, হাসপাতালে আনার পর তার চিকিৎসা চলছিল। শনিবার ভোরে মারা যান তিনি।

ওই চিকিৎসক জানান, নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক মওলানা সাঈদুরের দেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি তাকে গ্রেপ্তার করলেও নির্যাতন করিনি। তার কাছে ঘুষও চাইনি। আগে থেকেই তিনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অসুস্থ ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর তার মৃত্যু সম্পর্কে আর কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।

অন্যদিকে সদর থানার ওসি মারুফ আহম্মদ দাবি করেন, মাদ্রাসা সুপার হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।

বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার, চাঁদা দাবিসহ ব্যাপক মারপিটের কারণে ওই মাদ্রাসা সুপারের মৃত্যু হয়েছে বলে অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে নড়ে চড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন।

শনিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে দাবি করা হয় সাতক্ষীরা কারাগারে ৪৪৯০/১৭ নং হাজতী মো. সাইদুর রহমানের মৃত্যু হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। এঘটনায় ৮৪/১৭ নং এ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে সদর থানা পুলিশ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয় মৃত্য সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬১/১৭ ও ৮০/১৭ নং দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

প্রকৃত ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহতের ভাই মাওলানা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাইয়ের নামে কোনো মামলা ছিল না। তাকে আটকের পর দুটি অজ্ঞাত মামলায় আসামি করে কোর্টে চালান দেয় পুলিশ। জার জিআর নং ১৮১/১৭ ও ৫৪৮/১৭। ভাইয়ের হত্যার ঘটনা আইনিভাবে লড়বো।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তদন্তের পর বিস্তারিত বলতে পারবো।’

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ইএস/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :