ক্রসফায়ারে বেঁচে গেলেও দমেনি টেম্পু!
ছিলেন টেম্পুর সহকারী। তারপর চালক। এরপর মাস্তান। পরে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ছিনতাইকারী। সেখান থেকে ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ। এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেননি চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী টেম্পু।
পুলিশের তালিকাভুক্ত এ সন্ত্রাসীর আসল নাম ইসমাইল হোসেন। বাবার সঙ্গে টেম্পু চালাতেন বলেন পরিচিত হন সন্ত্রাসী টেম্পু হিসেবে। টেম্পু বাহিনী নামে রয়েছে তার বিশাল সন্ত্রাসী দল।
২৮ বছর বয়সী সন্ত্রাসী টেম্পুর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে ৩১টি মামলা। বেশির ভাগ মামলাই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলাও রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়।
পুলিশের তথ্যমতে, বিভিন্ন মামলায় সন্ত্রাসী টেম্পু পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন ১১ বার। প্রতিবারই তার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কাটা রাইফেল, পিস্তল, বন্দুকসহ নানা রকম অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র। আর ২০১৪ সালে গ্রেপ্তারের সময় তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হলে ক্রসফায়ারে পড়েন তিনি। তবে বেঁচে যান এই ভয়ংকর সন্ত্রাসী।
এরপরও দমেনি টেম্পু। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত শনিবার গভীর রাতে নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে পাঁচ সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় দুটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি গুলি, দুটি ছুরি ও চারটি চাপাতি।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, চট্টগ্রামের কুখ্যাত টেম্পু বাহিনীর প্রধান ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পু সহযোগীদের নিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তার সহযোগীরা হলেন মো. সোহেল, জাহিদ হোসেন ওরফে মুন্না, রবিউল ইসলাম মানিক, ইলিয়াছ কাঞ্চন ওরফে কাঞ্চন ও মো. তৌহিদ।
ওসি জানান, সন্ত্রাসী টে¤পুর বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামী ও জেলার হাটহাজারী থানায় ২৯টি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তারের ঘটনায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে আরও দুটি মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে চান্দগাঁও থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন টেম্পু। ওই দিন রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানার সমশেরপাড়ায় তাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তার সহযোগীরা। এ সময় ক্রসফায়ারে পড়ে পায়ে গুলি লাগে টেম্পুর।
তবে বেঁচে যাওয়া টেম্পু সেবার ৬-৭ মাস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও খোঁড়া হয়ে যায় তার পা। প্রায় ১৯ মাস জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার জানান, ক্রসফায়ার থেকে জীবন নিয়ে ফিরে এলেও সন্ত্রাসী টেম্পু দমেনি মোটেও। নিজস্ব বাহিনী নিয়ে আবার ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে।
টেম্পু তার সহযোগী সোহেলকে নিয়ে মোটরসাইকেলে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। সুযোগ পেলেই ছিনতাই করেন। সম্প্রতি নগরীর চকবাজার থানার বাদুড়তলা এলাকায় এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টেম্পু ও তার সহযোগী তৌহিদ ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করে। ধরা পড়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের কথা স্বীকারও করে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর।
এলাকাবাসী জানায়, ২০০৭ সালে নগরীর বহদ্দারহাট, খতিবের হাট, মোহাম্মদপুর ও মুরাদপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন টেম্পু। পরে তিনি একটি দল তৈরি করেন। ওই এলাকায় কেউ বাড়ি করলে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতেন টেম্পু। টাকার হিসাব না মিললে গুলি ছুড়তেন।
নগরীর যে এলাকায় টেম্পুদের বাসা, সেই শমসেরপাড়ার স্থানীয় সূত্র জানায়, টেম্পুরা চার ভাই। অন্য চারজনও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ছিনতাইয়ে ধরা পড়ে বড় ভাই খোকন ও ইদ্রিস এখন কারাগারে। ছোট ভাই সোহাগ পলাতক। তাদের মা একজন মাদক ব্যবসায়ী। টেম্পুদের মূল বাড়ি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে। তারা যখন চট্টগ্রামে আসে তখন টেম্পুর বয়স ১১-১২ বছর। বাবার সঙ্গে টেম্পুর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে নিজেই টেম্পু চালান। সেখান থেকে চাঁদাবাজি, ছিনতাই কাজে লিপ্ত হন। পরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় খুন, ধর্ষণ, অপহরণের মতো নানা অপরাধে লিপ্ত হন টেম্পু।
স্থানীয় লোকজন আরও জানান, একসময় শতাধিক সন্ত্রাসীর বিশাল বাহিনী ছিল টেম্পুর। কিন্তু ক্রসফায়ারে গুলিবিদ্ধ হয়ে পা খোঁড়া হওয়ার পর টেম্পুর দল ছেড়ে অনেকে নতুন গ্রুপ তৈরি করেছে। তারাও এখন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে বেড়ায়।
(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/মোআ)