সেই রুনার স্বামী ডাকাতির প্রস্তুতি অভিযোগে গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩৯ | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:১৪

গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন রুনার স্বামী রিকশাচালক হান্নান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আছে জানতে পেরে রিকশাচালক স্বামীকে মুক্ত করতে টিনের ঘর, নাক ফুল এবং কানের দুল, হাতের বালা বিক্রি করেন স্ত্রী রুনা। সেই হান্নান এবার ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ এলাকায় একটি স্থানে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার হন তিনি।

মঙ্গলবার ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ওসি আশিকুর রহমান নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই দাবি করে হান্নানসহ নয় ডাকাত এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার দেশীয় অস্ত্রের ছবি দিয়ে পোস্ট দেন।

এদিন ডিবি কার্যালয়ে ওসি সংবাদ সন্মেলন করে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেন। সেখানে বলা হয়, ডিবির অভিযানে আন্তঃজেলার নয় ডাকাত সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। আটককৃত আসামিরা হলেন, মো. মানিক (২৩), খন্দকার (৩০), আবু হান্নান (৩৩), সাইফুল ইসলাম (২৮), বেলাল হোসেন (৩২), মো. শফি ইসলাম (২৪), মনির হোসেন (৩৩), আলী (২৭), মো. সেলিম (৪০), মো. রফিকুল ইসলাম (৩৪)। এখানে হান্নানকে মামলার ২নং আসামি উল্লেখ করা হয়েছে।

ডিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডিবির ওসি গোপন সংবাদ পান যে, ময়মনসিংহ নেত্রকোণা রোডে শম্ভুগঞ্জ এলাকার মেসার্স আলম ফিস ফিল্ডের পাশে ডাকাত দল ডাকাতি প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি ওসিসহ তদন্ত মাজহারুল ইসলাম, এসআই ফারুক, এসআই আনোয়ার, এসআই জাকির হোসেন, এসআই মজিদ, এএসআই ফারুকসহ অভিযান পরিচালনা করে নয় ডাকাত সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করে। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়।

ওসি আশিকুর রহমান বলেন, অভিযানে ডাকাত দলের নয় সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করি। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকাটাইমসে ‘স্বামীকে মুক্ত করতে নাকফুলও বেঁচে দিলেন রুনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদে বলা হয়, ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) হাতে আটক রিকশাচালক স্বামীকে মুক্ত করতে টিনের ঘর, নাক ফুল এবং কানের দুল, হাতের বালা বিক্রি করেছেন।

তারপরও স্বামীকে মুক্ত করতে পারেননি ময়মনসিংহের নান্দাইলের পাঁচরুখি গ্রামের গৃহবধূ রুনা আক্তার।

তিন বছর বয়সের কন্যা শিশু মারিয়াকে নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিমান বন্দর এলাকা থেকে স্বামী রিকশাচালক হান্নান নিখোঁজ হন।

রুনা বলেন, আমি নিজেও ঢাকায় একটি বাসায় গৃহশ্রমিকের কাজ করি। স্বামী নিখোঁজের পর থেকে তিন বছর বয়সী মেয়েকে সাথে নিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি তাকে। সম্প্রতি ত্রিশালে একজন ডাকাত গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন তিনিই নাকি আমার স্বামী। শুনে সেখানেও গিয়েছি। নিহত ওই ব্যক্তির লাশ দেখেছি। পরে ত্রিশাল থানায় দ্বারস্থ হয়েছি। সেখানে স্বামী নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ করেছি। ত্রিশাল থানার পুলিশ বলেছে, ঘটনা যেখানে সেখানকার পুলিশের কাছে জানাতে হবে।

এরই মাঝে ফোন করেন, শাহীন ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যক্তি। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর তিনি আমার স্বামীর খবর দেন। বলেন, আপনার স্বামী ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের হাজতখানায় আছে। তাকে ছাড়াতে হলে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। পরে দর কষাকষি করে ২০ হাজার টাকায় ছাড়তে রাজি হন।

গত্যন্তর না দেখে, গত শনিবার নান্দাইলের গ্রামের বাড়িতে থাকা ঘরের টিন ১৫ হাজার টাকায়, নিজের নাকের ফুল ও কানের দুল ও হাতের বালা পাঁচ হাজার টাকায় মোট ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে ডিবি কার্যালয়ে এসে শাহীনকে টাকা দেই। টাকা নিয়ে এখন শাহীন বলছে, আরো ৪০ হাজার টাকা লাগবে। নয়তো তোমার স্বামীর নামে তিনটি মামলা হবে। এরপরই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন রুনা। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তার। বলেন, কোথায় পাব এত টাকা?

অভিযোগ রয়েছে, এই শাহীন ওরফে সোহাগ ডিবির সোর্স হয়ে কাজ করে থাকেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান জানান, শাহীন ওরফে সোহাগ এবং হান্নান দুজনেই ডাকাত দলের সদস্য। ডাকাত ধরতে ডাকাত লাগে।

সোহাগ ডিবির সোর্স বিষয়ে বলেন, ও আমার সোর্স নন। তিনি ডিবির পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলামের সোর্স।

হান্নানকে আট দিন হাজতে রাখার বিষয়ে বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্যারের সাথে কথা হয়েছে, মঙ্গলবার এ ব্যাপারে জানানো হবে।

১০ সেপ্টেম্বর ডিবি কর্তৃক গ্রেপ্তার হান্নান কী করে ১৮ সেপ্টেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আশিকুর রহমান বলেন, এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়। সব তথ্য দেয়া যাবে না।

মানবাধিকার কমিশানের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক।

গৃহবধূ রুনা আক্তার ঢাকাটাইমসকে বলেন, স্বামীকে মুক্ত করতে সব বিক্রি করে দিয়েছি। ঘরের চালও নেই। মেয়েকে নিয়ে এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/এমডি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :