টিকিট কাটতেই ঘণ্টা পার, জরুরি চিকিৎসার নাম নেই

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৪০

জরুরি বিভাগের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতর আব্বাস আলী। স্ত্রী রেহেনা খাতুন ও মেয়ে রাবেয়া খাতুন কাঁদছেন চিৎকার করে। এভাবেই পেরিয়ে গেল আধাঘণ্টা। কোনো চিকিৎসক এলেন না হৃদরোগে আক্রান্ত আব্বাস আলীর কাছে। জরুরি চিকিৎসাও পেলেন না এই রোগী।

আরও আধাঘণ্টা পর দুটি টিকিট কেটে আনলেন আব্বাসের ভাই আফসার আলী। তারপর এই রোগীকে পাঠানো হলো ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে যাওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেন আব্বাস। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গত সোমবার সকালের দৃশ্য এটি।

এমন দৃশ্য নতুন নয়। জরুরি বিভাগে প্রায় প্রতিদিন, প্রতিটি রোগীর সঙ্গেই ঘটছে- এমন ঘটনা।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, জরুরি বিভাগের রোগী আনার পর দুটি টিকিট কাটার বিড়ম্বনায় পড়ে দেরি হয়ে যাচ্ছে চিকিৎসায়। এতে হাসপাতালে এনেও অনেক সময় রোগীর কোনো লাভ হচ্ছে না।

তারা জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী আনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কাটতে হয়। এই টিকিট হাতে পাওয়ার পর কর্তব্যরত নার্সরা রোগীর সমস্যার কথা শোনেন। এরপর রোগী ভর্তি করার উপযোগী মনে হলে কাউন্টারে আগের টিকিট নিয়ে গিয়ে ১৫ টাকা দিয়ে আরেকটি ভর্তির টিকিট কাটতে হয়।

এরপর দুটি টিকিট হাতে পাওয়ার পর নার্সরা হাসপাতালের খাতায় রোগীর নাম-ঠিকানা লিখে নেন। তারপর একটি ভর্তির টিকিটে লিখে দেয়া হয় রোগী কত নম্বর ওয়ার্ডে যাবে। সেই ওয়ার্ডে রোগী নেয়ার পর তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। এসব করতে গিয়ে কমপক্ষে একঘণ্টা সময় কেটে যায় জরুরি বিভাগেই।

অভিযোগ আছে, কখনও কখনও টিকিটের দাম নির্ধারিত টাকার চেয়েও বেশি নেয়া হয়।

গত সোমবার জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রোগীর স্বজন জুলফিকার আলী। তিনি বলেন, ২০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে প্রথম টিকিট পেয়েছিলেন। এখন আরও ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে আছেন ভর্তির টিকিটের জন্য। তার রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করছেন জরুরি বিভাগে।

আম্বিয়া খাতুন নামে লাইনে দাঁড়ানো এক নারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টিকিট ছাড়া কেউ জরুরি চিকিৎসা পাবে না- এটা কেমন কথা! চোখের সামনে রোগী মরলেও ডাক্তাররা কোনো ব্যবস্থা নেন না এই টিকিট ছাড়া। টিকিট পাওয়ার পর ওয়ার্ডে দেয়া হলে রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত রোগীদের ক্ষেত্রেও তাই। এ কারণে ওয়ার্ডে যাওয়ার আগে জরুরি বিভাগেই অনেক রোগীর প্রাণ ঝরে যায়।

রোগীর স্বজনরা আরও জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ লাগোয়া একটি কক্ষে সব সময়ের জন্যই একজন চিকিৎসক থাকেন। তবে তিনি তার কক্ষ ছেড়ে জরুরি বিভাগে বেরিয়ে আসেন না। রোগীর স্বজনদেরই ওই চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানাতে হয়। সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগের নার্সরা খাতায় নাম-ঠিকানা লিখে তাদের ওয়ার্ডে পাঠান। তবে পুলিশ কেসের রোগীদের স্বজনদেরকে ওই চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে আসতে হয়। চিকিৎসক বসেই থাকেন তার কক্ষে।

এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সেদিন জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক কোনো কথা বলতে চাননি। জানাননি নিজের নামও। তবে তিনি বলেছেন, আমরা এখানে (জরুরি বিভাগে) থাকি রোগীকে ওয়ার্ডে পাঠানোর জন্য। চিকিৎসা হয় ওয়ার্ডে। এতে একটু দেরি হতেই পারে।

জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগেই আমি এখানে যোগ দিয়েছি। এসব সমস্যার কথা শুনেছি। এরই মধ্যে জরুরি বিভাগের বেশ কয়েকটি অনিয়ম দূর করেছি। রোগীদের টিকিট বিড়ম্বনা দূর করতেও উদ্যোগ নেব। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জরুরি বিভাগেই রোগীদের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২০সেপ্টেম্বর/ব্যুরো প্রধান/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :