মানিকগঞ্জ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ‘সর্বভুক’ অধ্যক্ষ!

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০৫

মানিকগঞ্জ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুল আজিজ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির এন্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার ‘দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ’ হয়ে কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করে। পরে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়।

নানা খাতে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নেয়া, প্রতি বর্ষে ভর্তিতে দ্বিগুণের বেশি ফি নেয়া ও কলেজের বিভিন্ন পদে অন্তত ১৩ জন স্বজনকে চাকরি দেয়ার অভিযোগ অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ খানের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা তাকে বলছেন ‘সর্বভুক অধ্যক্ষ’।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসক বরাবর যে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, মানিকগঞ্জ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ সরকার নির্ধারিত ১৬১০ টাকার জায়গায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১০ হাজার ৭০০ টাকা। কলেজের প্র্যাকটিক্যাল খাতা দোকান (লাইব্রেরি) থেকে কেনা যায় ১০০ টাকায়, কিন্তু অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ খান ওই খাতা শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে ৬০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করছেন।

কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও অধ্যক্ষ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। এ ছাড়া ফাইনাল পরীক্ষা শেষে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে আরো ৫০০ টাকা।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র খরচ বাবদ ভাউচার দিয়ে সরকারি খাত থেকে টাকা তোলা হলেও আলাদাভাবে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যখন কোনো ফি বা কোনো খাতে টাকা নেয়া হয়, তাদের রশিদ কপিতে শুধু মোট টাকা লেখা থাকে। কিন্তু কী বাবদ কত টাকা নেওয়া হচ্ছে তা রশিদে উল্লেখ করা থাকে না। কেউ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরে ১ম বর্ষে সরকার নির্ধারিত বোর্ড ফি ও কলেজের বেতন বাবদ ৫ হাজার ৯৫০ টাকা ধার্য ছিল। অথচ কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। ২য় বর্ষেও সরকার নির্ধারিত বোর্ড ফি ও বেতন বাবদ ৬ হাজার ৫০ টাকা ধার্য ছিল। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। ৩য় বর্ষে সরকার নির্ধারিত বোর্ড ফি ও কলেজের বেতন বাবদ ৬ হাজার ১৫০ টাকা ধার্য থাকলেও নানা অজুহাতে আদায় করা হয় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। চতুর্থ ও শেষ বর্ষে সরকার নির্ধারিত ৬ হাজার ৪১০ টাকার জায়গায় নেয়া হয় ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোনো ভাউচার না দেয়ার অভিযোগও করেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ তহবিলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও তাদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হোমিও কলেজের উন্নয়ন ফি বাবদ প্রতি বছর একেকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হলেও কলেজের কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি।

এমন অনিয়মের প্রতিকার কোথাও না পেয়ে মানিকগঞ্জ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা কলেজের সভাপতি ও মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অভিযোগ জানায়।

কলেজে বিভিন্ন পদে নিজের আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগের অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। নিজের ক্ষমতার বলে একাডেমি শাখায় প্রভাষক পদে চাকরি দিয়েছেন তার বড় ভাই শেখ মোহাম্মদ আকবর হোসেন, ছোট বোন বেনুয়ারা আক্তার, মামি শাশুড়ি নাজনীন আক্তার, মামাশ্বশুর খন্দকার রোমান বাদশা, বোনের ছেলে মো. আইয়ুব খান ও নিকটাত্মীয় মো. আলমগীর হোসেনকে। এ ছাড়া কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে আপন বড় ভাই কলেজের প্রভাষক আকবর হোসেনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও নিকটাত্মীয় শামীমা আক্তারকে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখায় লাইব্রেরিয়ান পদে আছেন তার ছোট বোন মোনোয়ারা আক্তার ও কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বড় বোনের ছেলে মো. মোস্তফা ভুইয়া মিলনকে। এ ছাড়া নিকটাত্মীয় হিসেবে পরিচিত মো. ফিরোজ খানকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

শ্বশুর অ্যাডভোকেট এ কে এম আজিজুল হককে রাখা হয়েছে কলেজের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধির সদস্য হিসেবে। এসব অভিযোগরে ব্যাপারে জানতে অধ্যক্ষ ডা. মো. আব্দুল আজিজ খানের সঙ্গে অনেক চেষ্টার পর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এরপর লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।

মানিকগঞ্জ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক নাজমুছ সাদাত সেলিম বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :