বাংলাদেশে বিজেপির আত্মপ্রকাশ; অশনি সংকেত

শেখ আদনান ফাহাদ
 | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৪৭

এবার আর কোনো রাখঢাক রইল না। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর আদলে ধর্মনিরপেক্ষতা আর অসাম্প্রদায়িকতার শক্তিতে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া আমাদের দেশেই আত্মপ্রকাশ করল বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি)। জাগো হিন্দু পরিষদ, শিবসেনা শক্তি মিশন, হিন্দু লীগ, হিন্দু ঐক্য জোট, ভারত সেবাশ্রম ও বাংলাদেশ হিজড়া সম্প্রদায়সহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের সম্মিলনে ভারতের বিজেপির আদলে বাংলাদেশেও বিজেপি নামক একটি রাজনৈতিক দল জনসম্মুখে আসল। ভারতের বিজেপির দলীয় প্রতীক লোটাস (পদ্মফুল)। এর অনুকরণে বাংলাদেশের বিজেপির নির্বাচনী প্রতীক হবে পদ্মফুল ও পদ্মফুলের নীচে দু’টো হাত।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আদিবাসী পার্টি ও সমমনা সংগঠনগুলো এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসী পার্টি ও জনতা পার্টির সমন্বয়ক মিঠুন চৌধুরী।

দলটির নাম প্রকাশ করে মিঠুন চৌধুরী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের দাবিতে ও অর্ধশতাধিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত আমাদের ৩০০ আসনের প্রার্থী মনোনয়নের স্বার্থে, সকলের সমন্বিত উদ্যোগে আজ থেকে এই রাজনৈতিক জোট ‘বাংলাদেশ জনতা পার্টি (বিজেপি)’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা হল। যার নির্বাচনী প্রতীক থাকবে পদ্মফুল ও পদ্মফুলের নীচে দু’টো হাত আছে।

বিজেপির বাংলাদেশি সংস্করণ এই স্বঘোষিত দলটি সংবিধান সংশোধন করে সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে একজন উপ-রাষ্ট্রপতি ও একজন উপ-প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার দাবি জানায়। সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়, সংখ্যালঘু ফাউন্ডেশন ও আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হবে।

যে কারণে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মাশ্রয়ী জামাতকে পছন্দ করে না, একই কারণে এই বিজেপিও কোনদিন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারবে না। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে বিজেপির আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া নয়। মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা বিজেপির মূল উদ্দেশ্য বলেই মনে হচ্ছে। বিজেপি বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে মিডিয়ার মাধ্যমে, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছে কি না , জানা নেই। যদি নির্বাচন কমিশন বিজেপির নিবন্ধন দিয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের উচ্চমহল থেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, কেন এমন সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেয়া হল বা হবে?

যেখানে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠছে, সেখানে এমন আরেকটি দল কীভাবে এদেশে নিবন্ধন পায় বা পাবে? আর নিবন্ধন যদি না পেয়ে থাকে, তাহলে ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির মত পবিত্র স্থানে কেন এরা প্রেস কনফারেন্স করার অনুমতি পায়। আবার এমন একটি অপশক্তিকে কেন এত কাভারেজ দেয়া হল?

বাংলাদেশে বিজেপি নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, এটি ধরে নেয়া যায়। তবে ভোটের রাজনীতি এরা করবে না। দেশীয় এবং আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে এরা ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়াবে বলে ধারনা করা যায়। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ পবিত্র ইসলাম ধর্মের অনুসারী। ইসলামের বিকৃত ব্যাখা দিয়ে এদেশে রাজনীতি করে জামাত। কিন্তু দেশের মূলধারার জনগোষ্ঠী জামাতকে কোনোকালেই সমর্থন দেয়নি। তবে বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এদেশে তৎপর থাকলে এদের দোহাই দিয়ে জামাতের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাবে এতে সন্দেহ নেই। বিজেপির বাংলাদেশি লিডার হিসেবে মিঠুন চৌধুরীর সাথে ভারতের শিবসেনা বা বিজেপির যোগাযোগ কেমন সেটি এদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ করা হল।

বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতি-জাতীয়তাবাদ (বাঙালি), সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা। জামাত এবং বিজেপি সরাসরি এই জাতীয় মূলনীতির বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়, যা কার্যকর হয় ওই বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর থেকে৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসেন জিয়াউর রহমান৷ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম'(দয়াময়,পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) – এই কথাটি সংযোজন করা হয়৷ তারপর ১৯৮৮ সালে তৎকালীন স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন৷ সংবিধানের ওই অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়, ‘‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাবে৷''

পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলেও, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এখনো বহাল আছে৷ তাই সেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের জন্যই এখন উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলছে, যা দায়ের করা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে৷ অর্থাৎ যখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংযোজন করা হয়, সে বছরই৷

সামরিক শাসক জিয়া এবং এরশাদ যে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য ইসলাম ধর্মের প্রতি দরদ দেখিয়েছিলেন তার গূঢ়ার্থ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার। ১৯৭২ এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারনা পরিষ্কার করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রায়শ এ কথাটি বলেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বারবার ধর্মের নামে ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগসহ প্রগতিশীল শক্তিকে কোণঠাসা করার অপপ্রয়াস চালিয়ে কখনো কখনো সফল হয়েছে। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার যে প্রয়াস এদেশের শান্তিপ্রিয় প্রগতিশীল সমাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, বিজেপির আত্মপ্রকাশ তাতে নতুন একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করবে, এ কথা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল, দেশের শিক্ষিত সমাজের একটি অংশ স্বাধীনতার শুরু থেকেই এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সমাজকে আলাদা করে রাখার নানা ব্যবস্থা করে রেখেছে। মুসলমান নারী ধর্ষিত হলে, কেউ লেখেনা যে, ‘মুসলিম নারী ধর্ষিত’। কিন্তু হিন্দু বা অন্য ধর্মের নারী ধর্ষিত হলে সবাই ধর্মের পরিচয়টা আগে এবং প্রধান হিসেবে নিয়ে আসে। এভাবে প্রতিটি অপরাধের পর বক্তৃতায় এবং লেখায় ধর্মের পরিচয় প্রধান করে মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। আর সংখ্যালঘু তকমা নিয়েও ভাববার সময় এসেছে। সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান অধিকার এবং সমান সম্মান নিশ্চিত করা হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান আলাদা করা হয়নি কোথাও।

মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিরোধী আরেকটি সংগঠনের নাম হল ‘বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট'। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই সংগঠনের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের পূর্বের ইতিহাস ঘাঁটলেই এদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট ইতোমধ্যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে সমালোচিত হয়েছে।

এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নিজেদের ব্যানারে ভারতের হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেন। মুসলমানদের তারা এতটাই ঘৃণা করে যে সংগঠনে মুসলমান বিষয়ক সম্পাদক নামে একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। হিন্দু মহাজোটের প্রধান ব্যক্তি গোবিন্দ প্রামাণিক আজীবন বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি করেছেন বলে দেশের ইতিহাসবিদরা দাবি করেছেন। তিনি বক্তব্যের শুরুতে, মাঝে, পরে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে স্লোগান দেন! বাংলাদেশে থেকে এমন স্লোগান কি রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়? (https://www.youtube.com/watch?v=dxEgIBkXAXo এই লিঙ্কে গেলে তার ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দেখতে পাবেন)।

গোবিন্দ প্রামাণিক এতটাই সাম্প্রদায়িক যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ‘হিন্দুদের শত্রু’ বলে আখ্যা দিয়ে বক্তৃতা করেছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে একাধিক সাম্প্রদায়িক এবং বিদ্বেষমূলক কথা বলেছেন। রথযাত্রা এবং হিন্দুদের উৎসবের দিনগুলোতে হিন্দুরা কেন অস্ত্র নিয়ে বের হয় না এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হিন্দুদের পবিত্র ‘ত্রিশূল’ কে অস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন (https://www.youtube.com/watch?v=5R5AH2fvn8w)।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাম্প্রদায়িক এবং চরমপন্থি তৎপরতার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসির মামুন। দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় এক লেখায় তিনি লিখেছিলেন, “এই গোবিন্দ প্রামাণিক কে? তিনি ছিলেন জামায়াতে ইসলামের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। গোলাম আযম জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গোবিন্দ তাকে অভিনন্দন জানাতে গিয়েছিলেন। সে সময়ের পত্র-পত্রিকা দেখুন। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালের নির্বাচন চলাকালীন ভায়োলেন্সের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগই এসব কাজ করছে এবং দায় চাপাচ্ছে জামায়াতের ওপর। তিনি যে প্রেস কনফারেন্স করেছেন, তা অনেক পত্রিকাই ছাপেনি। প্রথম আলো বড় শিরোনামে তা প্রকাশ করলেও, পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেনি। এ মিথ্যাচার হচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায়কে উত্তেজিত করা, সংখ্যাগরিষ্ঠকে অপবাদ দেয়া এবং দাঙা লাগানোর প্রচেষ্টা”।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীসহ জঙ্গি সংগঠনসমূহের সবসময়ের টার্গেট অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের বিচার দাবি করার দুঃসাহসও দেখিয়েছে এই বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট। হিন্দিতে লেখা ব্যানারে এই জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে “বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, মানহানিকর তথ্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে ক্ষমা চাওয়ার” আহ্বান জানিয়েছিল। তা না হলে অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের বিচার করার হুমকিও দিয়েছিল এরা।

শুধু তাই নয়, এই নিবন্ধ প্রকাশ করার দায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম মুখপাত্র দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দেয় জামায়াতের এক সময়ের “ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক” বলে পরিচিত গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক (https://www.dailyjanakantha.com/editorial/date/2016-06-20)।

জনকণ্ঠ পত্রিকায় দেশের প্রগতিশীল সংস্কৃতি আন্দোলনের বীরযোদ্ধা স্বদেশ রায় লিখেছেন, “সম্প্রতি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত পিটিআইকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যার ভেতর দিয়ে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হিন্দুদের বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়াতে বলেছেন। এটা শুধু অন্যায় নয়, পাকিস্তানি নিশানের মতোই তিনি ভারতীয় নিশান হয়ে গেছেন। রানা দাশগুপ্তের এ বক্তব্য হিন্দু কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়েছে। কারণ যিনি দশ হাতে বাংলাদেশে হিন্দুদের রক্ষা করে আসছেন সেই শেখ হাসিনাকে তিনি অপমান করেছেন। শেখ হাসিনা নির্মোহভাবে যোগ্যতার মূল্য দিয়ে সবাইকে সমান অবস্থানে নিয়ে গেছেন। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি কোন নেতিবাচক দৃষ্টি দেননি, এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখন যদি বাংলাদেশে রানা দাশগুপ্তের প্রতি কেউ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা মাইনরিটিদের যেভাবে ক্ষমতায়ন করেছেন ভারতে কি সেভাবে মাইনরিটিদের ক্ষমতায়ন হয়- রানা দাশগুপ্ত উত্তর দিতে পারবেন? নিতে পারবেন সে চ্যালেঞ্জ?

সর্বশেষ ঢাকার শাহবাগের একটি ঘটনা দেশের মূলধারার গণমাধ্যম রহস্যজনকভাবে সযত্নে এড়িয়ে গেলেও জনসাধারণের নজর এড়ায়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ গাড়িতে করে শাহবাগ পার হচ্ছিলেন। তখন সেখানে আন্দোলনরত হিন্দু মহাজোটের সদস্যরা তাঁর গাড়িতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাঁর গাড়িতে লাথি মারে, জুতা নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিশ্চয় এই হামলা করেনি।

হিন্দু মহাজোট কিংবা বিজেপি দেশের হিন্দুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় চাচ্ছে। কেন দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় কি শুধু এদেশের মুসলমানদের? সরকারি নানা তহবিল কি শুধু মসজিদ মাদ্রাসায় যায়? তাহলে একটা হিসেব হয়ে যাক। সরকারি কত টাকা মসজিদ, মাদ্রাসায় যায়? কত টাকা মাদ্রাসা, এতিমখানায় যায়? পূজার সময় সরকারের কত টাকা মন্দিরে যায় আর ঈদের সময় কত টাকা ঈদগাহে যায়? এই হিন্দু মহাজোট সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন দাবি করেছে! তাহলে এখন যদি খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এবং মুসলমানরাও এমন দাবি করে তাহলে অবস্থা কী দাঁড়াবে?

হিন্দু মহাজোটের প্রতিটি দাবি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। এভাবে দেশের হিন্দু সমাজকে কট্টরপন্থি করে তোলে কার লাভ হবে? লাভ হবে নিশ্চিতভাবেই দেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর। দেশের সব হিন্দু যদি শুধু হিন্দু হয়ে যায়, আর মুসলমানেরা যদি শুধু মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে কী হবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের?

দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকার, প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রতিষ্ঠানসমূহের সবাইকে উপরের কথাগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। এদেশ কোন সাম্প্রদায়িক হিন্দুর বা সাম্প্রদায়িক মুসলমানের না। এদেশ সকল বাঙালির, সকল বাংলাদেশির। এদেশের আইন, সংসদ, বিচারব্যবস্থা সকলের জন্যই করা হয়েছে। যে আইন মুসলমানের, সে আইন হিন্দুরও। এখানে আলাদা হওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলন্ঠিত করা।

লেখক: সাংবাদিক ও শিক্ষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :