নরসিংদীতে দুর্গাপূজায় থাকছে পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার বাকি রয়েছে আর মাত্র ৫ দিন। নরসিংদীতে আসন্ন পূজা উপলক্ষে পুরোদমে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি । দুর্গা দেবীকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে রং তুলির আঁচড়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
অন্যদিকে দুর্গাপূজা উদযাপনে পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আমেনা বেগম।
ষষ্ঠীবোধনীতে দেবী দুর্গাকে পূজামণ্ডপে পৌঁছে দিতে কাজ চলছে দিন-রাত। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার ব্যাপক আয়োজন। শেষ মূহূর্তে চলছে প্রতিটি মণ্ডপের সাজ সজ্জার কাজের আমেজ।
পূজাকে ঘিরে নরসিংদী জেলা পুলিশ নিয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি। পুলিশ বলছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহৎ এ উৎসবকে ঘিরে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, এবার নরসিংদী জেলায় ৩২৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও দর্শনার্থীদের চাহিদা পূরণে কমতি রাখেনি শহরের বড় বড় দুর্গা পূজা মণ্ডপ কমিটি।
শহরের সেবা সংঘ, বাগ বিতান কাব, শিববাগ, অগ্রণী সংঘ, ক্রীড়া চক্র, বীরপুর দুর্গা বাড়ী, বৌয়াকুড় দুর্গা মণ্ডপের পাশাপাশি মাধবদীর রঞ্জিত সাহার বাড়ির পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রস্তুতির কমতি নেই। পূজা মণ্ডপে দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা, বৈচিত্র সাজসজ্জা, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ও সাউন্ড সিস্টেমের সমারোহ ঘটিয়েছে আয়োজকরা।
অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও জেলার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দুর্গা পূজার আয়োজন করছে শহরের মধ্যকান্দাপাড়ার বাগবিতান ক্লাব। তৈরি হচ্ছে নাগ মন্দির।
নরসিংদীর তুর্য্য প্রতিমা শিল্পালয়ের সত্ত্বাধিকারী দুলাল পাল বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরনের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে- তাতে প্রতিমা তৈরিতে তেমন লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কারণ ক্রেতারা আগের দামেই প্রতিমা তৈরি করে নিতে চাচ্ছেন। আর প্রতিমা তৈরিতে আগের মত কারিগর পাওয়া যেমন দুষ্কর, তেমনি আগের তুলনায় অনেক পালরাও তাদের পূর্বপুরুষের পুরানো পেশা ঐতিহ্য ছেড়ে ঝুকেছেন অন্য পেশায়।
বিশ্বকর্মা প্রতিমা শিল্পালয়ের সঞ্জিত পাল বলেন, এখন প্রায় কাজ শেষ পর্যায়ে আর বাকি রংয়ের প্রলেপ ও অঙ্গ সজ্জার কাজ। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে দিতে হবে প্রতিমা। তাই এই মূহূর্তে আমাদের এখন যেন দম ফেলার সুযোগ পাচ্ছি না।
নরসিংদীর এসব প্রতিমা তৈরির কারখানা থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, বি-বাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিমা সরবরাহ করা হয়। এবার পূজায় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে।
নরসিংদী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রফেসর সূর্য্যকান্দ দাস বলেন, পূজা উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই জেলা প্রশাসনসহ পুলিশ প্রশাসনের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। জেলার সকল মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকির জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।
পুলিশ সুপার আমেনা বেগম (বিপিএম) বলেন, দুর্গা পূজাকে ঘিড়ে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৫ শতাধিক পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। তাদের সহযোগিতার জন্য থাকবে প্রায় আড়াই হাজার আনসার ও মণ্ডপের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল। এছাড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বেশ কয়েকটি স্পেশাল টিম নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পূজা মন্ডপগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে সনাতন ধর্মের বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবে সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)