শাস্ত্রীয় সুরের ঝংকারে সঙ্গীত গুরুর জন্মদিন উদযাপন

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:০৬

সঙ্গীতের মানুষ পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী ৯০ বছরে পা দিয়েছেন গত ১৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন বাড়িতে ঘরোয়াভাবে কেক কেটে উদযাপন করা হয়েছিল তার ৮৯তম জন্মদিন। তবে আসল আয়োজনটা হলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সুরের ঝংকারেই উদযাপন করা হলো উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের গুণী এই শিল্পীর জন্মদিন।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত অমরেশ রায় চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সঙ্গীতাশ্রম’ রাজশাহী মহানগরীর একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। তবলার ধ্বনি আর বাঁশির সুরে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সুরের মুর্ছনায় হারিয়ে যান উপস্থিত অতিথিরা। বেহালার করুণ সুর তাদের নিয়ে যায় সঙ্গীতের আদিপর্বে।

বয়সের ভারে পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী সব কথা এখন স্পষ্ট নয়। তবু এই সন্ধ্যায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি প্রমাণ করলেন সঙ্গীত তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এছাড়া অনুষ্ঠানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রখ্যাত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত সাধক মঞ্জুশ্রী রায়, প্রফেসর ড. অসিত রায়, তালযন্ত্র শিল্পী যতন কুমার পাল, বাঁশরিয়া আবদুস সালাম ও ডা. জগদানন্দ রায়।

তবলায় ছিলেন- উত্তম কুমার হালদার, ড. যতন কুমার পাল আর ড. দীনবন্ধু পাল। বাঁশি বাজান আবদুস সালাম। নাট্য ব্যক্তিত্ব সুখেন মুখোপাধ্যয় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এ অনুষ্ঠানে পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরীর জীবনী পাঠ করে শোনান দিলীপ কুমার মৈত্র। এছাড়া রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শরৎ চন্দ্র সরকার সূচনা সঙ্গীতের পরিচালনা করেন।

সঙ্গীত গুরু অমরেশ রায় চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে পরিবেশনা উপভোগ করেন এবারের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী বজলার রহমান বাদল।

বিশেষ অতিথি ছিলেন- ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন ও বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক হাসান আখতার।

অতিথিরা অমরেশ রায় চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে তাকে নিয়েই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।

সঙ্গীত গুরু পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী ১৯২৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের চৌদ্দরাশি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার বাইশরশির জমিদার রায় বাহাদুর মহেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর চার ছেলের একজন অবিনাশ রায় চৌধুরী। অবিনাশের একমাত্র ছেলে অমরেশ রায় চৌধুরী।

স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে অমরেশ রায় তার মা রাজলক্ষ্মী রায় চৌধুরীকে নিয়ে রাজশাহীতে চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। রাজশাহী নগরীর রানীবাজারে তিনি নিজেই ‘সঙ্গীতাশ্রম’ নামে ওই সঙ্গীতের স্কুল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

রানীবাজারে অমরেশ রায় চৌধুরীর ‘মোহিনী নিকেতন’ নামে একটি স্থায়ী বাড়ি ছিল। বছর দুয়েক আগে নতুন রাস্তা করতে গিয়ে তার বাড়িটি ভাঙা পড়ে। তিনি এখন মিয়াপাড়া এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সহধর্মিণী সোনালী রায় চৌধুরী, দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিদের নিয়েই তার সংসার।

গত ২০১৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমি আয়োজিত বিশেষ সম্মাননা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের এই গুণী শিল্পীর হাতে ‘শিল্পকলা পদক-২০১৪’ তুলে দেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে তুলে দেন ‘একুশে পদক-২০১৬’। এছাড়া পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী বহু সংগঠনের সংবর্ধনা ও পদক লাভ করেছেন, পেয়েছেন বহু উপাধি।

অমরেশ রায় বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী কেন্দ্রের এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘ক’ শ্রেণির একজন নিয়মিত উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী। অমরেশ যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকেই তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিতে শুরু করেন। তারপর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকেই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান করে সারাজীবন সাধনায় অতিবাহিত করেন তিনি। এই একনিষ্ঠতা তাকে এনে দিয়েছে উপমহাদেশজুড়ে খ্যাতি ও সম্মান।

নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী বললেন, আমি সঙ্গীতের একজন সেবক মাত্র। সঙ্গীতকে সেবা করা আমার ধর্ম। সারাজীবন সঙ্গীতের সাধনা করে গেলাম। সঙ্গীতে শক্তি, সঙ্গীতে মুক্তি, সঙ্গীতে ভক্তি- এই তিন ধারণা নিয়ে সারাটা জীবন সঙ্গীতকে লালন-পালন করলাম। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন সঙ্গীতের সেবাই করব।

(ঢাকাটাইমস/২১সেপ্টেম্বর/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :