ঢাকা-১৭: এবার দলের প্রার্থী চান আ.লীগের নেতাকর্মীরা

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:১১

গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের কোনো সংসদ সদস্য নেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ গুলশান, বনানী, ভাসানটেক নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনে। কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত এই আসনে এমনকি গত দুই সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের কাউকে মনোনয়ন দেয়নি ক্ষমতাসীন দলটি। দীর্ঘদিন ধরে হাতছাড়া এই আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী চান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন পেতে ও নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন কয়েকজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া আছেন ক্ষমতাসীন দলটির একই ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান।

তবে এই আসনে প্রার্থী মনোনয়নে চমক দেয়া হতে পারে বলে জানায় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র। চমক হিসেবে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানকে এখানে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি বর্তমানে গোপালগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য।

বিগত কয়েকটি নির্বাচনের তথ্য থেকে জানা যায়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এলাকাটি ঢাকা-৫ আসনের অন্তর্গত ছিল। তখন এর সংসদ সদস্য ছিলেন বিএনপির মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম। এর আগে ১৯৯6 সালের নির্বাচনে গঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমত উল্যাহ।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আসন বিন্যাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ ওয়ার্ড এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে গঠিত হয় ঢাকা-১৭ আসনটি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন। এরপর বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির আব্দুল লতিফ মন্ডলকে হারিয়ে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনএফের আবুল কালাম আজাদ।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনে জোটের শরিক দলের জন্য আসনটি ছেড়ে দেয়ায় রাজনৈতিকভাবে ওই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আর ছাড় দেয়ার পক্ষে নয় স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দল থেকে এ আসনে প্রার্থী দেয়ার দাবি তাদের।

গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কূটনৈতিক পাড়ার অবস্থান এ আসনে হওয়ায় কূটনীতিকদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে ঢাকা-১৭ আসনের এমপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু দেশ-বিদেশ তো দূরের কথা সরকারের উন্নয়নের প্রচারণা চালিয়ে গুলশানেই একটি ফেস্টুন ওঠেনি সাংসদের উদ্যোগে। ভিন্ন দলের হওয়ায় আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচি কিংবা কার‌্যক্রমে স্থানীয় এমপিকে পাওয়া যায় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল। তাই আগামী দিনে এ আসনে নৌকার নিজস্ব লোক চাই।’

ভাসানটেক থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনের দাবিও একই। তিনি বলেন, দুই মেয়াদে দল ক্ষমতায়, অথচ এ আসনে নৌকার ভোট নিয়ে যারা এমপি হয়েছেন তারা আমাদের নাগালের বাইরে। এবার এ আসন থেকে দলের প্রার্থীকে নৌকা দেবেন- দলীয় সভানেত্রীর কাছে এই দাবি জানাই। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াকিল উদ্দিন আমাদের সুখে-দুঃখে রয়েছেন, তাকেই প্রার্থী চাই।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী ওয়াকিল উদ্দিন ১৯৭২ সালে গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন। গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন ধরে। গত বছর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের পদে মনোনীত হন। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য।

ওয়াকিল আহমেদ তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান, পরবর্তী সময়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হন। তার সমর্থকরা বলেন, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গদলের সব সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন রাজনীতি করার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার গড়ে উঠেছে সাথে আস্থার সম্পর্ক। তাই তাদের প্রত্যাশা, তার দীর্ঘদিনের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করবে দল।

ওয়াকিল উদ্দিনও মনে করেন এবার দলের কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে ঢাকা-১৭ আসনে। আর সে ক্ষেত্রে নিজের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। তিনি বলেন, ‘দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর দাবি নিজ ঘরের প্রার্থী যেন এবার নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন। আমার বিশ্বাস, রাজনৈতিক অবদান, স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাওয়া এবং মাঠের জরিপ মিলিয়ে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন। নেত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আমাকে কিংবা দলের যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক, নেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন তা মেনে চলব।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খানও একজন প্রবীণ রাজনীতিক। দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য অবদানের মূল্যায়ন চান তিনি। স্বাধীনতার পরে ভোলা কলেজের ভিপি, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন কাদের খান। তিনি ৭২ নম্বর ওয়ার্ড (সাবেক) শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি, গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন। গত বছর ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ আগে কখনো সংসদ নির্বাচনের জন্য দলের মনোনযন চাননি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কাদের খান বলেন, দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করেছি। এখন বয়স হয়েছে, এবার আজীবনের স্বপ্ন সংসদ নির্বাচনে প্রাথী হয়ে নেত্রীকে আসনটি উপহার দেব। আমরা বংশধররা বলতে পারবে যে আমার ত্যাগের মূল্য দিয়েছেন নেত্রী।

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিক পিটিয়ে হত্যায় বিএনপির উদ্বেগ, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়: রিজভী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :