সাইনবোর্ডেই ঝুলছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নিরাপত্তা

রাইয়ান বিন আমিন, জাবি
 | প্রকাশিত : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:১৩

‘বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’ ‘গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কি.মি.।’ ‘রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন।’ এসব সাবধানবাণী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মহাসড়কের ওপর লাগিয়েছে চালকদের সতর্ক করতে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি থেকে বিশ মাইল পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে গাড়িচালক ও শিক্ষার্থীদের সতর্কতাস্বরূপ এ রকম বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা নির্দেশিকার সাইনবোর্ড লাগিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সাড়ে তিন মাস পার হলেও মহাসড়কের নিরাপত্তা আদতে এখনো সাইনবোর্ডেই ঝুলে আছে।

গত ২৭ মে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল প্রশাসন। যার প্রাথমিক কাজ হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এসব নিরাপত্তার সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার সাড়ে তিন মাসেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পুলিশ ও পরিবহন বিভাগ সংশ্লিষ্ট রয়েছে। ফলে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শেষ করার।

আর শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বরাবর এমনই হযে আসছে। কোনো একটা প্রাণ হারালে এদিক-সেদিক কোনো একটা ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়, এরপর সব চুপচাপ হয়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। আবার একটা প্রাণ ঝরলে তবে নড়বে প্রশাসন।

দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ডে সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণের কথা লেখা থাকলেও সেই নিয়ন্ত্রণ কিংবা সিসি ক্যামেরার দেখা নেই। প্রান্তিক গেটে সবে ধন নীলমণি যে একটি সিসি ক্যামেরা আছে, সেটি গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। ফলে সেই ক্যামেরা কতটুকু নিরাপত্তা দিতে পারছে, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোট ১৬টি আইপি ক্যামেরা বসানো হবে বলে জানা গেছে।

বিষয়টি দেখভাল করার জন্য গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদারকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইপি ক্যামেরা বসানোর জন্য যে পরিমাণ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দরকার তা আমাদের নেই। এ জন্য কাজ শেষ হতে একটু দেরি হচ্ছে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।

ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পুলিশ বক্স বসিয়ে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। যেখানে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা হওয়ার কথা ছিল ৩০ কি.মি. সেখানে সর্বনিম্ন গতিসীমা হচ্ছে ৩০ কি.মি.। কিন্তু এই গতিসীমাও চালকদের মানতে বাধ্য করার কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিডব্রেকার বসানো হলেও শুধু সেখানেই গাড়ির গতি কমানো হয়, পার হয়ে গেলেই গতি আবার বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

মীর মশাররফ হল গেট সংলগ্ন মহাসড়কে যে স্পিডব্রেকার বসানো হয়েছিল, সেগুলো অনেকটাই সমান হয়ে রাস্তার সঙ্গে মিশে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি গেটের মধ্যে ডেইরি গেট ও প্রান্তিক গেট দিয়েই শিক্ষার্থীদের চলাচল সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ দুটি গেট দিয়ে চলাচল করলেও প্রান্তিক গেটে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। আন্দোলনের মুখে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত ছিঁটেফুটা উদ্যোগও দৃশ্যমান নয়।

অন্যদিকে ডেইরি গেটে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও তার নিরাপত্তা খুব একটা নেই। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ছিনতাইয়ের ভয়ে কোনো শিক্ষার্থী এ ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে সাহস পান না।

মহাসড়কের বাম পাশে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের নামানো ও ওঠানোর কথা থাকলেও ডেইরি গেটে অধিকাংশ বাসই রাস্তার মাঝখানেই বাস থামিয়ে শিক্ষার্থীদের ওঠানামা করায়। অনেক সময় চলন্ত অবস্থায় যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। এতে বাস থেকে নামতে গিয়ে রাস্তার মাঝখানে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ ক্ষেত্রে বাসের চালকদের মধ্যে কাজ করে আগে যাওয়ার প্রবণতা। বাম পাশে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করালে দেরি হয়ে যায়, ফলে অন্য কোম্পানির বাস আবার আগে চলে যায়। এ কারণে তারা অধিকাংশ সময়েই রাস্তার মাঝখানে ওঠানামা করিয়েই দ্রুত চলে যায় পরের স্টপেজের যাত্রী নেয়ার জন্য। আর এমনটাই জানালেন পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইতিহাস পরিবহনের এক চালক।

এসব বিষয়ে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বললেন, ওভারব্রিজ নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আমরা যত দূর জেনেছি ডিজাইন হয়ে গেছে। এখন বাজেট পেলেই কাজ শুরু করবে।

তবে বাজেট পেতে কত দিন লাগতে পারে তার নিশ্চিয়তা দিতে পারেননি তিনি।

অন্যদিকে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে আমাদের কথা হয় তখন তারা বলে যেসব ঠিক থাকবে। কিন্তু পরে তারা সব ভুলে গিয়ে তাদের মতো করে গাড়ি চালায়।’

তাহলে আপনাদের বলার মধ্যে কোনো ঘাটতি আছে কি না? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। দ্রুতই পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে সমাধান করব।’

জাবিতে সড়ক দুর্ঘটনায় এর আগেও একজন শিক্ষকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বেপরোয়া যানের চাকায় প্রায়ই পিষ্ট হলেও এর কোনো প্রতিকার নেই, নেয়া হয়নি কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। আন্দোলনের মুখে স্পিডব্রেকার বসানো হলেও ভিভিআইপিদের নিয়মিত চলাচলের অজুহাতে সেগুলো আবার উঠিয়ে নেয়া হয়। ফলে অবস্থা তথৈবচ। আবার এটা নিয়ে আন্দোলন করতে গেলেও মামলা- হামলার শিকার হতে হয়। ফলে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আর যেন কোনো প্রাণ ঝরে না যায়, সে ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/কেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :