সাপ্তাহিক পর্যালোচনা: সূচকের পতনে দু:শ্চিন্তায় বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:১৯

ইউনুছ আলী আলাল

কয়েক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন ও সূচক অনেকটা ইতিবাচক ছিল। পুঁজিবাজার চাঙ্গা হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই কমে সূচক। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমানও।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে যেন আগ্রহী নয়। কিছুটা লাভ হলেই প্রফিট টেকিংয়ের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ডে ট্রেডারদের ন্যায় আচরণ করায় গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে অনেকটা পতন নেমে আসে বলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান।

গত কয়েক কার্যদিবসের হঠাৎ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দু:চিন্তায় পড়েছেন। তারা বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছেন। আবার কেউ কেউ বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। গত এক মাস ধরে ব্যাংক খাতের শেয়ারের টানা দরবৃদ্ধিতে অস্থিরতায় পড়ে যায় বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে জুন ক্লোজিং হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ক্রয় থেকে বিরত ছিলেন।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই কমেছে সূচক। বাকি দুই কার্যদিবস সূচক বাড়লেও এর মাত্রা ছিল সামান্য। তাই গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক কমেছে। তবে চতুর্থ কার্যদিবসে ব্যাংক খাতের নেতিবাচক প্রভাবে কারেকশন হয়েছে সূচকে। গত সপ্তাহজুড়েই বিনিয়োগকারীরা প্রফিট টেকিং মুডে ছিলেন।

এদিকে সূচকের পাশাপাশি ৭০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। আর গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। আলোচিত সপ্তাহটিতে লেনদেন কমেছে ০.৯৬ শতাংশ।

সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরণের মূল্য সূচক কমেছে। সপ্তাহশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে দশমিক ৫৪ শতাংশ বা ৩৩.৪৩ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই৩০ সূচক কমেছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ বা ২৭.৬৫ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরীয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ২৩.৩৯ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির। আর লেনদেন হয়নি একটি কোম্পানির শেয়ার। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন হয় ৬ হাজার ১০৫ কোটি ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ১২৮ টাকার শেয়ার। যা এর আগের সপ্তাহে ছিলো ৬ হাজার ১৬৪ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৮ শেয়ার। সেই হিসেবে গত সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৫৯ কোটি ৫ লাখ ২৭ হাজার ৪৩০ টাকা।

সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯১ দশমিক ৪২ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৭১ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৯০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২০০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির। আর সপ্তাহশেষে লেনদেন হয়েছে ৪৩০ কোটি ৯০ লাখ ৫৭ হাজার ২১৬ টাকা।

সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে ১৮ খাতে: সদ্য সমাপ্ত সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই) দর (রিটার্নে) কমেছে ১৮ খাতে। আর দও বেড়েছে ২ খাতে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, আলোচিত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি লেনদেন কমেছে সিরামিক খাতে। বিদায়ী সপ্তাহে এই খাতে শেয়ার দর ৪.৭৯ শতাংশ কমেছে। এরপরেই আছে পেপার ও প্রিন্টিং খাত। গত সপ্তাহে এ খাতে দর কমেছে ৩.৫৭ শতাংশ।

দর কমার অন্যান্য খাতের মধ্যে সিমেন্টে খাতে ১.৩৬ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ২.৯৫ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতে ১.৩৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ০.১২ শতাংশ, জেনারেল ইন্স্যুরেন্স খাতে ৩.১৫ শতাংশ, আইটি খাতে ৩.৩০ শতাংশ, জুট খাতে ০.৯৯ শতাংশ, বিবিধ খাতের ১.৫৭ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ০.১৯ শতাংশ, আর্থিক খাতে ১.১৫ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ২.০৬ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ২.৬৭ শতাংশ, ট্যানারি খাতে ২.২৩ শতাংশ, টেলিকমিনিকেশন খাতে ২.১৬ শতাংশ, বস্ত্রখাতে ২.৭৮ শতাংশ এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ১.৬৪ শতাংশ দর কমেছে।

তবে দর বাড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ব্যাংক খাতে। বিদায়ী সপ্তাহে এ খাতে দর কমেছে ২.৮৭ শতাংশ। আর লাইফ ইন্সুরেন্স খাতে ১.৩২ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।

ডিএসইর পিই রেশিও কমেছে: সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কমেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৯২ শতাংশ। ফলে আগের তুলনায় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা সামান্য কমছে বলে অভিমত দিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারনা, পিই রেশিও যতদিন ১৫ এর ঘরে থাকে ততদিন বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৬.৫৫ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৬.৭০ পয়েন্ট। ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ১১.৪৩ পয়েন্টে, আর্থিক খাতের ২১.৫৬ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতের ২০.৯১ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২৪.৩৭ পয়েন্ট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৩.৯১ পয়েন্ট, পাট খাতের মাইনাস ১৩২.২৮ পয়েন্ট, বস্ত্র খাতের ১৯.৬২ পয়েন্ট, ওষুধ খাতের ২০.৪০ পয়েন্ট, পেপার ও প্রিন্টিং খাতের মাইনাস ৮৭.৭১ পয়েন্ট, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ২৭.৭৩ পয়েন্ট, সেবা ও আবাসন খাতের ১৩.৮৯ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতের ৩৬.৭৮ পয়েন্ট, আইটি খাতের ২৯.৪০ পয়েন্ট, চামড়া খাতের ১৮.৬২ পয়েন্ট, সিরামিক খাতের ২৪.৯৭ পয়েন্ট, বীমা খাতের ১৭.৬৬ পয়েন্ট, টেলিযোগাযোগ খাতের ১৯.৬৩ পয়েন্ট এবং বিবিধ খাতের ২৮.০৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/ওয়াইএ/এমআর