আগামী মার্চে নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে আ.লীগের নতুন ভবন

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে শেষ হবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভবনটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

গত বছরের ১৭ জুলাই দলের পুরনো ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। এরপর চলতি বছরের ২৩ জুন ১০ তলা নতুন ভবনের ভিত্তিফলক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে অবশ্য ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়ে যায়।

ভবনটির নির্মাণে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কমফোর্ট নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এই ভবন নির্মাণের কাজ করছে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জানায়, আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে শেষ হবে ভবনটির মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ। মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হলেই শুরু হবে ভেতরের সাজসজ্জার কাজ। বর্তমানে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন শ্রমিক নির্মাণকাজ করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরনো কার্যালয়ের স্থানে মাটির নিচের একটি তলাসহ ১০ তলা নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে নয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে সর্বশেষ ১০ তলার কাজ। সেটি ঢালাইয়ের কাজ শেষ হলে ভেতরের বিভিন্ন কাজ শুরু হবে।

জানা গেছে, ১০ তলা ভবনটির প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪১০০ বর্গফুট। চতুর্থ তলা থেকে উপরের সব কটি ৩১০০ বর্গফুটের।

কমফোর্টের পক্ষে ফোরম্যানের দায়িত্বে থাকা মো. ইসমাইলের সঙ্গে কথা হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে। তিনি বলেন, ‘নয় তলার অর্ধেক ও দশ তলার ছাদের কাজ বাকি আছে। মাস দুয়েকের মধ্যে এগুলোর কাজ শেষ হবে। তারপর ভেতরে পার্টিশন দেয়াল, ইলেক্ট্রিক, স্যানিটারি ও রংয়ের কাজ শুরু হবে। আশা করি, আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

ইসমাইল জানান, ভবনের টাইলস, লিফট ও ডেকোরেশনের কাজ তাদের প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি। মূল ভবনের কাজ শেষ হলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভবনের সাজসজ্জা সংক্রান্ত কাজগুলো করা হবে।

আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, দলের নিজস্ব ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বিশ্বমানের ভবনটির সামনের দুই পাশের দেয়াল কাচ দিয়ে ঘেরা থাকবে। আর মাঝখানে সিরামিকের ইটের বন্ধনে গড়ে উঠবে। এর সামনের দেয়াল জুড়ে দলের সাইনবোর্ডসহ দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, চার মূলনীতি, ভাষা আন্দোলন ৫২, মুক্তিযুদ্ধ '৭১ প্রভৃতি শব্দ খোদাই করা থাকবে। ভবনের সামনে-পেছনে হবে ফুলের বাগান।

ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভী রহমানের ছবি রাখারও পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা গেছে, ১০ তলা ভবনের ৪ ও ৫ তলায় থাকবে আওয়ামী লীগের সহযোগী, অঙ্গসংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয়। সাত, আট ও নয় তলায় দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ থাকবে।

ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকবে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম এবং সাংবাদিক লাউঞ্জ।

ভবনের নকশা থেকে জানা যায়, আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মীয়মাণ ভবনটিতে থাকবে দুটি স্বতন্ত্র কার পার্কিং, একাধিক লিফট, সিঁড়ি, কারলিফটসহ ভূমিকম্প ও অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। ভবনের ছাদে থাকবে হেলিপ্যাড।

আগামী মার্চ মাস নাগাদ ভবনের সব কাজ শেষ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ভবনের নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

আওয়ামী লীগের পুরনো কার‌্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চারতলা ভবনটি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেই সময় তা অসমাপ্ত ছিল। পরে বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে ওই লিজ প্রক্রিয়া শেষ হয়। পাশে আরো কিছু জায়গা দলীয় ফান্ড থেকে কেনা হয়।

লিজ ও জমি কেনার প্রক্রিয়া শেষ হলে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। পরে নকশা প্রস্তুত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদনের পর গত বছরের শেষ দিকে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/টিএ/মোআ)