রোহিঙ্গা আশ্রয়ে উখিয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া (কক্সবাজার)
 | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:২০

গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা এসে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারে। জেলার উখিয়া উপজেলায় এ পর্যন্ত ছয়টি ক্যাম্পে ও বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিড়িয়ে অবস্থান করছে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা স্থান না পেয়ে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসন শ্রেণিকক্ষে মেডিকেল টিম, আনসার পুলিশ ব্যারাক ও বিদ্যালয় মাঠে লঙ্গরখানা স্থাপন করার কারণে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রশাসন বলেছে সেনাবাহিনী কাজ করছে যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রোহিঙ্গা সেবা কার্যক্রমের আওতার বাইরে রাখা যায়।

সরেজমিনে কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পালংখালী এলাকায় অবস্থিত প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও ইবতেদায়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ হয়। তারা জানান, দিনের বেলায় রোহিঙ্গারা ত্রাণের আশায় রাস্তার পাশে অবস্থান নিলেও রাতে তারা আশেপাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। এমতাবস্থায় যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ করার ফলে জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক অবনতির পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পরিবেশের বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার আবদুল মন্নান ঢাকাটাইমসকে জানান, তার বিদ্যালয়টি জেডিসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তিনি জানান, এ পরিস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন করা যায় তা নিয়ে বিচলিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

পাশে অবস্থিত কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার হাবিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, তার বিদ্যালয়ে আট শতাধিক নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত আনসার, পুলিশ শ্রেণিকক্ষে অবস্থান করছে। বিদ্যালয় খেলার মাঠে লঙ্গরখানা স্থাপন করার কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানসহ সার্বিক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।

এই শিক্ষক বলেন, সামনে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা। এসময় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান দিতে না পারলে পরীক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা আছে।

বেশ কয়েকটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, রোহিঙ্গাদের এলোপাতাড়ি চলাচলের ভেতরে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় শিক্ষার্থীদের হারিয়ে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না।

একথার সত্যতা স্বীকার করে কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, রোহিঙ্গা অবস্থান নেয়ার পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হার অনেক কমে গেছে।

থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক কমরুউদ্দিন মুকুল ঢাকাটাইমসকে জানান, স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গার অনেকেই রাতের বেলায় স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নেয়। স্কুল আশেপাশে তারা মলমুত্র ত্যাগ করে। এছাড়া ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেখানে পাঠদানের পরিবেশ নেই।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুক্তার আহমদ শিক্ষাঙ্গনে রোহিঙ্গাদের প্রভাব পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই দুঃসময়ে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করা কারো উচিত হবে না। যেহেতু সরকার এসব রোহিঙ্গাকে মানবিক সেবা দিয়ে আসছে, আমাদেরকে তা মেনে নিয়েই চলতে হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনুদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশনসহ যাবতীয় মানবিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য সেবাবাহিনী কাজ করছে। শিক্ষাঙ্গনে সাময়িক নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও পরবর্তী সময়ে তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।

ইউএনও বলেন, রোহিঙ্গাদের একটি সীমাবদ্ধ গণ্ডির ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিন হাজার একর জমিতে শেড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটি নির্মাণ হলে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :