‘বড় আকারের রোবোটিক অবজারভেটরি বানাতে চাই’

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১০:১১ | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:২২

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে রোবোটিক অবজারভেটরি। এর মাধ্যমে আকাশ এবং চাঁদ পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি তৈরির রূপকার দুই তরুণ। এদের একজন প্রকৌশলী তারিফ এইচ শান্ত। যিনি একজন অ্যামেচার রেডিও অপারেটরও। তিনি এই রোবোটিক অবজারভেটরি তৈরির গল্প শুনিয়েছেন ঢাকাটাইমসকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান

রোবোটিক অবজারভেটরির তৈরির পেছনের গল্প শুনতে চাই

২০০৯ সালে আমরা একটা অবজারভেটরি বানিয়েছিলাম।

আমরা বলতে কারা?

আমি এবং নাইমুল অপু।

এটা কি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল? নাকি কোনো প্রতিষ্ঠানের হয়ে?

না আমরা ব্যক্তিগত উদ্যেগেই তৈরি করেছিলাম। আমরা নাইমুল অপু ভাইয়ের বাসায় বানিয়েছিলাম। ওটা রাখাছিল ওই বাসার ছাদে। ওটা আমরা কিছুদিন পরিচালনা করার পরে ওটা আর কন্টিনিউ করতে পারিনি। কারণ এক হচ্ছে যে, ওটা মেইনটেন্যান্স করার একটা বিষয় ছিল আর আর্থিক সহায়তাও আমরা পাইনি কোথাও।

তারপর?

আমাদের ইচ্ছা ছিল আমরা বাংলাদেশে একটি রোবোটিক অবজারভেটরি বানাবে যেটা হবে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এটা দিয়ে দেশের শিক্ষার্থীরা যেন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। তারা এটাকে ব্যবহার করতে পারবেন। সেটার পরিকল্পনা চলতে থাকে। একসময় এটুআইর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। আমরা এটুআইকে বলি আমাদের একটি রোবোটিক অবজারভেটরি বানানোর প্লান আছে।

এটুআই কি আপনাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে?

হ্যাঁ, এটুআই আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে। তারা জানায়, তাদেরও একটি পরিকল্পনা আছে রোবোটিক অবজারভেটরি বানানোর। এরপর আমরা আমাদের আইডিয়া তাদের আইডিয়া ব্যাংকে জমা দিলাম। এটুআইর আইডিয়া ব্যাংকে অনেক ধরনের আইডিয়া জমা হয়। সেখান থেকে আমাদের আইডিয়া এটুআইর পছন্দ হয়। এরই প্রেক্ষিতে তারা রোবটিক অবজারভেটরি তৈরির জন্য ফান্ড মঞ্জুর করে।

আপনাদের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে কী ছিল?

আমাদের এই রোবোটিক অবজারভেটরির তৈরির পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল বেশিসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষার্থী যেন এই অবজারটরিতে এক্সেস দেয়া যায়। যাতে করে সে দেশের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করে অবজারভেটরিটা পরিচালনা করতে পারে।

অবজারভেটরির তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন

দেশের প্রথম এই রোবোটিক অবজারভেটরিটা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এর ৮০ শতাংশ হাতে বানানো। এর ডোমটার পুরোটা হাতে বানানো। এই ডোমটার মধ্যেই টেলিস্কোপটা বসানো আছে। ডোমটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলে আবার বন্ধ হয়।

আমাদের পরিকল্পনা ছিল এটি পুরোপুরি অটোমেটেড করার। সেই কারণে আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে এর মেকানিক্যাল সিস্টেম এমন হতে হবে যে যাতে করে আপনি এটাকে সুইজ টিপ দিলে অটোমেটিক্যালি খোলে আবার বন্ধ হয়। যাতে করে হাতের স্পর্শ প্রয়োজন না হয়। হাতের স্পর্শ থাকতে পারে কিন্তু মেকানিক্যালি অটোমোশন থাকতে হবে। সেরকম একটা ডিজাইন আমরা অনেকদিন চিন্তা ভাবনা করেছি। আমরা চিন্তা করলাম এটাকে ফুলের মতো করেই খুলবো এবং বন্ধ করবো। যাতে করে যেকোনো জায়গায় থেকেই এটা খোলা যায়। সেভাবেই আমরা আমাদের ডিজাইন দাঁড় করাই।

এটা তৈরি করতে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন?

এই রোবোটিক অবজারভেটরির তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল এটি তৈরির ম্যাটেরিয়ালস। এটি তৈরির বিভিন্ন কম্পোনেন্টের মধ্যে কিছু অংশ সংগ্রহ করেছি জাহাজ শিল্প থেকে। পুরনো ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু অংশ সংগ্রহ করতে হয়েছে। কিছু অংশ ডিজাইন করে হাতে বানানো হয়েছে। এভাবেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই এর বেজড তৈরি করতে হয়েছে।

এই কাজটা কি আপনারা দুজনেই করেছিলেন?

হ্যা আমরা দুজনেই এই পুরো কাজটায় হাত দেই এবং শেষও করি।

এরপর কীভাবে কাজ আগায়

বেজডটা বানানোর পর ডোমের শেডটা বসাই। আমাদের ফাইনাল শেডটার ডিজাইন করাতে বেশ সময় লেগেছিল। আমাদের ফাইনাল শেপটা ছিল দুইটা এক্সিসের মাঝখানে দুইটা ডোমের শেড ঘুরবে। এবং সেই এক্সিস দুইটা লিনিয়ার অ্যাকটুয়েটর দিয়ে মুভ করবে। লিনিয়ার অ্যাকটুয়েটর দিয়ে মুভ করানোর সুবিধা হলো-এটা খুব সহজেই অটোমেট করা যায়। এর মাধ্যমে ইলেকট্রোনিক সার্কিটে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এভাবেই আমরা ওটাকে বানাই।

আর টেলিস্কোপের কাজ?

ডোমটা বানানোর পরেই আমরা টেলিস্কোপের কাজ হাত দেই। যদিও টেলিস্কোপ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ এখন টেলিস্কোপ তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেনি।

এই কাজে কি আপনাদের এটুআই সহযোগিতা করেছিল

আসলে এটুআই আমাদের ফান্ডের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু এই রোবটিক অবজারভেটরি ডিজাইন ও এটা বানানোর পুরো প্রক্রিয়া আমরাই সম্পন্ন করেছি।

আপনারা এই প্রকল্প তৈরির জন্য কত টাকা অর্থ বরাদ্দ পেয়েছিলেন?

এটা ছিল ২৪ লাখ টাকার প্রকল্প।

সব টাকাই কি খরচ হয়েছে?

আসলে পুরো টাকা লাগেনি। এখন পর্যন্ত ফান্ডের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ টাকার খরচ হয়েছে। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। যেটা আমরা করবো। কারণ আমাদের শুধু এটা বানানোর প্রকল্প ছিল না। এটাকে পাইলটিং করা, জনসাধারণের কাছে নিয়ে যাওয়ার কাজগুলো আমরা পরবর্তী ধাপে করবো। যদিও এই কাজ অনেকখানি হয়ে গেছে। গত দুই তিন মাস আমরা অবজারভেটরিটাকে ভালোভাবে পরিচালনা করেছি।

আপনারা এই রোবোটিক অবজারভেটরিটাকে কবে সম্পূর্ণ চালু করতে পেরেছিলেন?

আমরা এই গত ঈদুল ফিতরের আগের দিন চাঁদ রাতে এটি উন্মুক্ত করি। সেময় ঈদের চাঁদ এই অবজারভেটরির মাধ্যমে অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন। কেউবা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ দেখেছেন।

অবজারভেটরিটা এখন কোথায় স্থাপন করা আছে?

রোবটিক অবজারভেটরিটা ঢাকার আগাঁরগাওয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে এটুআইয়ের ইনোভেশন ল্যাবে রয়েছে।

ওটা কি ওখানেই থাকবে?

আমরা আপাতত ওটাকে ওখানে রাখবো। যদি কোনো সহায়তা পাওয়া যায় যে ঢাকার বাইরে রাখার কোনো ব্যবস্থা হয় তবে সেখানেই রাখবো।

অবজারভেটরি নিয়ে আপনাদের ভবিষৎ পরিকল্পনা কী?

আমাদের ভবিষৎ পরিকল্পনা হলো যে, যেহেতু আমরা একটা বানিয়েছি। তাই এটার ফুল ইউটিলাইজড করতে চাই। এটা ইউটিলাইজড করতে হলে আমাদের এটাকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য আমরা সবার কাছে সহায়তা চাই। আমরা দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে নিয়ে গিয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে এটাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। এটা আমাদের প্রথম পরিকল্পনার অংশ। আমাদের দ্বিতীয় পরিকল্পনা হচ্ছে আমরা বড় আকারের রোবোটিক অবজারভেটরি করতে চাই। যেটা হবে ফুল ফেজ। আয়তনেও হবে বড়। আসলে ২৩-২৪ লাখ টাকায় বড় আকারের অবজারভেটরি বানানো সম্ভব নয়।

এজন্য কত টাকা লাগবে বলে ধারণা করছেন?

বড় আকারের রোবটিক অবজারভেটরি করতে ১০ থেকে ২০ কোটি টাকা লাগবে। আমাদের দেশ বাদে যদি বলি যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। সেখানে প্রায় ৩০০ বছর আগে থেকেই টেলিস্কোপ আছে, অবজারভেটিভ আছে ওদের।

আপনাদের নির্মিত অবজারভেটরি ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনো অবজারভেটরি আছে?

না নেই। যদিও বিজ্ঞান জাদুঘর একটি অবজারভেটরি তৈরি করেছিল কিন্তু সেটা আর এখন নেই। বাংলাদেশে অনেক সংস্থাই জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করে কিন্তু তাদের অবজারভেটরি নেই। তবে তাদের হয়তো টেলিস্কোপ আছে।

টেলিস্কোপ না অবজারভেটরি কোনটা বেশি কাজের?

আসলে টেলিস্কোপ থাকার চেয়ে অবজারভেটরি থাকার সুবিধা অনেক। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় বাসায় বসে পড়াশোনা করা আর স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়াশোনার করার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কারণে সেখানে একটি ইনস্টিটিউট আছে। সেখানে কেউ আপনাকে মেন্টরিং করবে। ওখানে আপনি পড়াশোনার জন্য রিসোর্স পাবেন। আপনি হাতে-কলমে শিখতে পারবেন। তেমনিভাবে অবজারভেটরি দিয়ে মহাকাশ সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

আপনার মহাকাশ নিয়ে গবেষণার ইচ্ছা কেন জাগলো?

আমি একটি বিজ্ঞান সংগঠনে কাজ করতাম। নাম অনুসন্ধিৎসু চক্র। ওই সংগঠনটি জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে। আমি ডেমরা শাখায় কাজ করতাম। ওখান থেকে আকাশ খুব পরিষ্কার ছিল। আমি ৮-১০ বছর আগের কথা বলছি। ওই সময় লোডশেডিংয়ের সময় ছাদে পাটি নিয়ে বসতাম। গ্রহ নক্ষত্র দেখতাম। তখন আমরা মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটা টেলিস্কোপ বানাই। ওটা দিয়ে আমাদের মহাকাশ পর্যবেক্ষণে হাতেখড়ি হয়। এছাড়াও আমাদের কাছে ছোট ছোট বাইনোকুলার ছিল। সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের তারা মন্ডল, তারার ক্লাস্টার, অ্যান্ডোমিডা গ্যালাক্সি পর্যবেক্ষণ করতাম। এভাবেই আমার মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ জন্মে।

দ্বিতীয় পর্বে সমাপ্ত

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এজেড/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :