কুর্দি গণভোট: উদ্বিগ্ন ইরান, তুরস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:৩৯

ইরাকের আধা-স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে আজ সোমবার গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই গণভোট নিয়ে ইরাকের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা।

ইরাক ছাড়াও তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া এবং আর্মেনিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে কুর্দিরা বাস করে। তাদের সংখ্যা আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটির মতো। মধ্যপ্রাচ্যে এরা চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী, কিন্তু তারা কখনোই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পায়নি।

কুর্দরা মেসোপোটেমিয়ার সমভূমি আর পার্বত্য এলাকাগুলোর আদি বাসিন্দা। এই এলাকা ভাগ হয়ে দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক, উত্তর পূর্ব সিরিয়া, উত্তর ইরাক, উত্তর পশ্চিম ইরান ও দক্ষিণ পশ্চিম আর্মেনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে কুর্দিরা। এরা একই নৃগোষ্ঠী, নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ভাষার বন্ধনে আবদ্ধ। কুর্দিদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলিম, তবে অন্য ধর্মের লোকও আছে।

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবি উঠতে শুরু করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে পশ্চিমা দেশগুলোর করা ১৯২০ সালে সেভরেস চুক্তিতে কুর্দি রাষ্ট্রের কথা ছিল। কিন্তু তিন বছর পর লুজান চুক্তিতে যে আধুনিক তুরস্কের মানচিত্র তৈরি হলো, সেখানে কুর্দি রাষ্ট্রের ধারণা বাদ পড়লো। কুর্দি এলাকাগুলো একাধিক দেশে ভাগ হয়ে গেল এবং কুর্দিরা হয়ে গেল সংখ্যালঘু। এরপর কুর্দিরা যখনই কোথাও স্বাধীনতার চেষ্টা করেছে, তাদের সেই আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে।

সিরিয়ার কুর্দি সংগঠনগুলো জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু আইএস বিরোধী যুদ্ধে তুরস্ক তাদের সহযোগিতা করছে না। কারণ তুরস্ক রাষ্ট্র এবং সেদেশের ১৫-২০ শতাংশ কুর্দিদের মধ্য গভীর অবিশ্বাস ও বৈরিতা রয়েছে। ১৯৭৮ সালের আবদুল্লা ওচালান পিকেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার লক্ষ্য ছিল তুরস্কের কুর্দিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ছয় বছর পর সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে ৪০ হাজার লোক নিহত এবং লাখ লাখ লোক গৃহচ্যুত হয়। এখন পিকেকে স্বাধীনতার পরিবর্তে স্বায়ত্বশাসন চাইছে। যুদ্ধবিরতি হলেও লড়াই পুরোপুরি থামেনি।

তুরস্কে ১৯২০ এবং ১৯৩০ সালে দুইবার কুর্দি অভ্যুত্থানের পর এখন সেখানে কুর্দিদের নাম ও পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকী কুর্দি ভাষার ব্যবহারও সীমিত করা হয়। কুর্দিদের এখণ ডাকা হয় 'পাহাড়ি তুর্কি' বলে। এদিকে কুর্দিরা মনে করে তুরস্ক তাদেরকেই আসল শত্রু ভাবে, ইসলামিক স্টেটকে নয়।

সিরিয়ায় কুর্দিদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৭ থেকে ১০ শতাংশ। এখানকার কুর্দি নেতাদের কথা হলো সিরিয়া সমস্যার সমাধান করতে হলে তাতে কুর্দিদের অধিকার এবং স্বীকৃতি থাকতে হবে।

ইরাকেও কুর্দিদের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মতো। সেখানে কুর্দিদের সশস্ত্র লড়াই প্রথম শুরু হয় ১৯৬১ সালে । এরপর ১৯৭০ সালে তাদের কার্যত স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয় কিন্তু তা অচিরেই ভেঙে পড়ে। সত্তরের দশকে কুর্দিদের বিভিন্ন এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে আরবদের বসতি স্থাপন শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় কুর্দিরা ইরানকে সমর্থন দেয়। এরপর সাদ্দাম হোসেন তার প্রতিশোধ নেন নির্মম অভিযান চালিয়ে। ১৯৮৮ এবং ১৯৯১ সালে দুটি কুর্দি বিদ্রোহ দমন করা হয়। এরপর মার্কিন মিত্ররা সেখানে নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তারপরও ১৯৯৪ সাল থেকে অভ্যন্তরীন সংঘাত চলতেই থাকে। তবে ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর ইরাকের তিনটি প্রদেশ ইরবিল, ডোহুক ও সুলাইমানিয়ায়, কুর্দিরা আঞ্চলিক সরকার গঠন করে সর্বোচ্চ স্বায়ত্বশাসন ভোগ করছে।

ইসলামিক স্টেট ২০১৪ সালে উত্তর ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নেয়। সে সময় থেকেই কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার গণভোটের কথা ওঠে কুর্দি পার্লামেন্টে। ২০০৫ সাল থেকে ইরাকি কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি বলেন, এ গণভোটের ফল মানতেই হবে তা নয়।

ইরাকি কুর্দিস্তানের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং সেনাবাহিনী আছে। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের আছে তেল। তবে আশপাশের দেশে থাকা সব কুর্দিদের নিয়ে একটি দেশ গঠনের স্বপ্ন অনেক কুর্দিই দেখে থাকেন, তবে সেরকম কিছু কায়েম করার বাস্তবতা যে এখন নেই এটাও বোঝেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/জেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

দুবাই বিমানবন্দরে জলাবদ্ধতায় চরম বিশৃঙ্খলা, যাত্রীদের দুর্বিষহ অবস্থা

ইসরায়েলি হামলায় গাজা একটি ‘মানবিক নরকে’ পরিণত হয়েছে: গুতেরেস

ইরানের ওপর ফের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

যে কারণে ৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল

ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ২৮ কর্মীকে বরখাস্ত করলো গুগল

আমিরাতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত, দুবাই বিমানবন্দরে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা

ভারতে প্রথম দফায় লোকসভা নির্বাচন শুরু শুক্রবার

ইরানের হাতে রাশিয়ার এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা!

নেসলের বেবিফুডে অতিরিক্ত চিনি  

ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য সবকিছু করবে: নেতানিয়াহু 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :