ইয়াবাসহ বাস আটক নিয়ে পুলিশের ধান্দা!

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৮

চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান, ঢাকাটাইমস

ইয়াবাসহ শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস আটক করা হয়েছে গত শনিবার দুপুরে। আর তা নিয়ে হিসাব কষতে পুলিশের সময় লেগেছে দুই দিন। আটক বাস মালিকসহ চারজনকে ছেড়ে দেয়ার চুক্তিতে টাকাও নিয়েছেন চার লাখ ৬০ হাজার।

কিন্তু দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় চারজনকে আসামি করে মামলা দিয়ে আজ সোমবার আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড থানার পুলিশ। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাসিম এসব ঘটনার অন্তরালে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্যামলী পরিবহনের ওই বাসের মালিক মো. জোবায়েরের পরিবার।

জোবায়েরের পরিবার সূত্র জানায়, ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক মো. নাসিম গত শনিবার দুপুরে নগরীর শাহ আমানত সেতুর এলাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাস (নং-৮৭৭) আটক করে ইপিজেড থানায় নিয়ে আসে। এ সময় গাড়ির চালক ও দুই সহকারীকে আটক করে।

খবর পেয়ে গাড়ির মালিক মো. জোবায়ের ইপিজেড থানায় গেলে উপপরিদর্শক মো. নাসিম তাকে আটক করে জেলহাজতে রেখে দেন। এরপর ৫০০০ ইয়াবাসহ গাড়ি আটক এবং আটক মালিক, চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীর বিরুদ্ধে মাদক পাচার আইনে মামলা দেয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে বাস ও আটককৃতদের ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকায় দফারফার একপর্যায়ে তাকে প্রথমে এক লাখ পরে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা দিলেও তিনি দফারফা থেকে উল্টে যান। হিসাব-নিকাষ আড়াল করতে আটক বাসটি তিনি থানায় না রেখে নগরীর লেবার কলোনির পূর্ব গেইটে নিয়ে রাখেন বলে জানানো হয়।

এ ব্যাপারে গতকাল রবিবার দুপুরে মুঠোফানে জানতে চাইলে উপপরিদর্শক মো. নাসিম প্রথমে ইয়াবাসহ কোনো বাস আটক করা হয়নি বলে জানান। পরে লেবার কলোনির পূর্ব গেইটে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, না বাসটি ছাড়া হয়নি। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলেই মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

এরপর বিস্তারিত জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে অপর একটি নম্বর থেকে ফোন করা হলে রিসিভ করেন তিনি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মামলার বাদী হিসেবে তথ্য দেয়ার কোনো রাইট নেই। আপনি ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন।

ডিউটি অফিসারের কক্ষে ল্যান্ডফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি কেউ। পরে ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মোহাম্মদ আহসানুল ইসলামের সাথে মুঠোফানে যোগাযোগ করার পর রবিবার রাত ১১টার দিকে মুঠোফোনে ম্যাসেজ যোগে তথ্য পাঠান।

ম্যাসেজে বলা হয়, শ্যামলী পরিবহনের বাস থেকে ৩০০০ হাজার ইয়াবাসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন- মো. জোবায়ের (২৮), রুবেল (১৮), করিম (২৮), মিনার (২২)। তাদরেকে বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে ম্যাসেজে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ সোমবার দুপর ২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটককৃতরা থানা হাজতেই রয়েছেন। অথচ আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটকৃকতদের আদালতে সোপর্দ করার নিয়ম রয়েছে।

আটককৃত পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং ইয়াবার সংখ্যার তারতম্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সোমবার দুপুর দুইটায় ওসি সৈয়দ মুহাম্মদ আহসানুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, কোনো টাকা নেয়া হয়নি। ইয়াবার সংখ্যা বেশি হলেও নরম জিনিস নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকায় একটু কম দেখানো হয়েছে। আটককৃতদের আদালতে সোপর্দ করার কথা বললেও কবে করা হয়েছে তা এড়িয়ে যান তিনি। 

থানা সূত্র জানায়, গোপন সংবাদে খবর পেয়ে ইপিজেড থানার উপপরিদর্শক মো. নাসিম একদল পুলিশ নিয়ে গত শনিবার দুপুরে নগরীর শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি আটক করে। এ সময় বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৫০০০ ইয়াবাসহ বাসটির চালক ও সুপারভাইজার ও হেলপারকে আটক করে। পরে থানায় আসলে বাসের মালিক জোবায়েরকেও আটক করা হয়।   

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/আইকে/জেবি)