ময়মনসিংহে নির্যাতিত কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার

মনোনেশ দাস, ময়মনসিংহ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:২৬ | প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:১২

ময়মনসিংহে চুরির অভিযোগে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের শিকার কিশোর সাগর ওরফে টোকাই সাগরের (১৬) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার গৌরীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশেই একটি ছনক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। হত্যার শিকার ১৬ বছর বয়সী সাগর ময়মনসিংহ শহরের শিববাড়ি রেল লাইন বস্তির বাসিন্দা ছিলো। গতকাল সোমবার তাকে গৌরীপুরে পিটিয়ে হত্যার পর মৃতদেহ গুম করা হয়।

খবর পাওয়ার পর মৃত সাগরের বাড়ি শিববাড়ি বস্তিতে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের লোকজন বলছেন, খুন হওয়া কিশোর সাগর টোকাই শ্রমিকের কাজ করতো। তার বাবা শিপন নেশাগ্রস্ত। সাগর পাঁচ ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে ময়মনসিংহ শহরের শিববাড়ি রেল লাইন বস্তিতে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতো। টোকাই পেশাবৃত্তির আয় দিয়ে মায়ের উপার্জনের সাথে সমন্বয় করে জীবন কাটাতো অতিকষ্টে।

গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার আহাম্মদ ঢাকাটাইমসকে জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর গৌরীপুর থানায় আনা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

ওসি বলেন, পরিবার থেকে মামলা দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার সকালে গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের চর শিরামপুর গ্রামের আক্কাস আলী, তার ছেলে ও ভাইয়েরা মিলে চুরির অপরাধে সাগরকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ছনখেতে গুম করে রাখে। আজ সকালে পুলিশ সেই লাশ উদ্ধার করেছে। আক্কাস আলী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। ঘটনার পর থেকেই আক্কাস আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়েছে। পুলিশ তাদের ধরার চেষ্টা করছে।

যে ভাবে হত্যা করা হয় সাগরকে

প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রভাবশালী আক্কাস আলীর ভয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, চোর সন্দেহে সোমবার ভোরে সাগরকে আটক করেন গাউসিয়া ফিশারির মালিক আক্কাস আলি ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফিশারির সাইনবোর্ডের খুঁটির সাথে বেঁধে সাগরকে আক্কাস আলি ও তার পরিবারের সদস্যরা লাঠিসোটা ও গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক পিটুনি দেন। এসময় তার শরীর বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়তে থাকে। পরে মৃত জেনে হাসপাতালের নেওয়ার কথা বলে সাগরের লাশ একটি অটোতে করে তুলে নিয়ে যায় অজানা স্থানে। সুযোগ বুঝে আবার ফিরে আসে ঘটনাস্থলের পাশেই ছনক্ষেতে রাখে। সেখানেই মাটিচাপা দিয়ে লাশ গুম করেন আক্কাস আলী। পুলিশ আজ সকালে অভিযান চালিয়ে ছনক্ষেত থেকে সাগরের লাশ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে ডৌহাখলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি মেম্বার আবুল কালাম বলেন, হ্যা, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন কিন্তু যাকে মারধরা করে হত্যা করা হয়েছে তাকে এলাকার কেউ চেনে না। সে বহিরাগত। ডৌহাখোলা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার বলেন, ভোর পাঁচটায় এক যুবক আমাকে ফোন করেছিল। সন্ধ্যায় সে সরাসরি তাকে ঘটনাটি জানিয়েছেন। অনেকের মোবাইল ফোনে খুঁটিতে বাঁধা রক্তাক্ত শরীর মাথা নিচে হেলে পরা ছবিটি তিনিও দেখেছেন। তাতে মনে হয়েছে সে মৃত, যোগ করেন শহীদুল। এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ওসি দেলোয়ার আহামেদ সাংবাদিকদের বলেন, হ্যাঁ, একজনকে মারধর করার পর অটোতে করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে তিনি খবর পেয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এরকমের আহত বা মৃত কারো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পুলিশ অভিযানে আছে, হয় জীবিত বা মৃত সেই অজ্ঞাতকে খুঁজে বের করা হবে। ঘটনার পর থেকেই আক্কাস আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক বলেও জানান ওসি।

এর আগে ২৬ আগস্ট শাওন (২২) নামে গোরীপুরের এক য্বুকে মোবাইল চুরির অভিযোগে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে শাওনের ভাই বাদী হয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও পুলিশ আজো জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানা গেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এমডি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :