যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান ভারতের

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:১১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, মার্কিন প্রশাসনের সরাসরি অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত এখনই আফগানিস্তানে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত নয়। খবর বিবিসির।

দিল্লিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, অন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলেও 'আফগানিস্তানের মাটিতে ভারতীয় সেনাদের পা পড়বে না'।

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী দিন কয়েক আগেই মন্তব্য করেছিলেন আফগানিস্তানে তারা ভারতকে কোনও ভূমিকাতেই দেখতে চায় না- কিন্তু দিল্লি এদিন আভাস দিয়েছে, কোনও সামরিক হস্তক্ষেপে না-জড়ালেও কাবুলের ওপর তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

গত মাসে যখন ভারতকে আফগানিস্তানে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নতুন নীতি ঘোষণা করছিলেন, তখন থেকেই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এ নিয়ে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

গত সপ্তাহেই পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি নিউইয়র্কে বলেন, আফগানিস্তানে ভারতের রোল হওয়া উচিত 'জিরো'।

কিন্তু আজ ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস দিল্লি সফরে এসে বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিশদ আলোচনা করেছেন।

বৈঠকের পর ম্যাটিস বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে দেয়া যাবে না- এ নিয়ে সারা বিশ্ব একমত। আর সেই লক্ষ্যেই আমরা ভারতের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই। জঙ্গিদের মোকাবিলায় বহু দেশই এখন তাদের সেনাদের বিদেশে পাঠাচ্ছে, পুলিশবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে - সহযোগিতার পরিসর ক্রমশ বাড়ছে।’

তিনি যে ভারতীয় সৈন্যদেরও আফগানিস্তানে দেখতে চান - সেটা বোঝাতে বস্তুত ম্যাটিস কোনও লুকোচুরি করেননি।

তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও জানিয়ে দেন, ভারত সেখানে উন্নয়ন সহযোগীর ভূমিকাতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখবে।

তার কথায়, ‘বহু বছর ধরে ভারত আফগানিস্তানের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে - হাসপাতাল, স্কুল থেকে বাঁধ- সব কিছুই বানাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। তাদের কর্মকর্তাদের সুশাসনের জন্য আমরা প্রশিক্ষণও দিচ্ছি, সারা দেশে চিকিৎসা সহায়তাও দিচ্ছি- কিন্তু ভারতের সেনাদের বুটের পদধ্বনি সেখানে শোনা যাবে না। তবে বাদবাকি সবই বজায় থাকবে।’

বস্তুত আফগানিস্তানে নিজেদের প্রভাব তৈরির জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে বহুদিন ধরেই - আর অনেকটা সে কারণেই ওই দেশে উন্নয়ন খাতে ভারত এ যাবৎ ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করেছে।

কিন্তু সরাসরি সেনা না-পাঠিয়ে দিল্লি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষক রেজাউল হাসান।

তিনি বলছিলেন, ‘পাকিস্তান কখনওই চায়নি কাবুলে একটা শক্তিশালী, মজবুত সরকার ক্ষমতায় আসুক। তারা আফগান ভূখণ্ডকে শুধু নিজেদের 'স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ' বাড়ানোর জমি হিসেবেই দেখে এসেছে - আর সেই ভুল নীতিরই মাশুল দিয়েছে।’

‘ভারত সেখানে সেনা পাঠালে পরিস্থিতি আরও জটিল হত। বরং যতদিন পাকিস্তান আফগানিস্তানকে শুধু সেই চোখে দেখবে, তাদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি এমনিতেই বাড়তে থাকবে, ভারতকে বাড়তি কিছু করতে হবে না।’

ইসলামি কূটনীতির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামার আগাও মনে করেন, পাকিস্তানের কাছে আফগানিস্তানে রপ্তানি করার মতো সম্পদ বা প্রযুক্তি কিছুই ছিল না - ফলে তারা প্রভাব বিস্তারের জন্য বেছে নিয়েছিল ধর্মকে।

‘কিন্তু তালেবান এক্সপেরিমেন্টের পর তা ব্যাকফায়ার করেছে, হামিদ কারজাই থেকে শুরু করে এখন প্রেসিডেন্ট গনিও বারবার বলেছেন তাদের সব সমস্যার উৎস হল পাকিস্তান। পাকিস্তান এখন আরও বিচলিত কারণ ইরানের চাবাহার বন্দর আর আফগান ভূখণ্ডের মধ্যে দিয়ে ভারত এখন সরাসরি মধ্য এশিয়াতেও অ্যাকসেস পেতে চলেছে’- বলছিলেন তিনি।

আসলে ভারত মনে করছে, উন্নয়ন ও সহযোগিতার যে মডেল দিয়ে তারা আফগানিস্তানকে গত পনেরো-ষোলো বছর ধরে সাহায্য করে এসেছে এখন তার সুফল মিলতে শুরু করেছে।

সামরিক সহযোগিতার নামে সেনা পাঠিয়ে তারা সেই সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় না, যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস ভারত সেনা পাঠালেই আরও ভালো করত।

(ঢাকাটাইমস/২৬সেপ্টেম্বর/এসআই)