জ্যেষ্ঠ নেতারা জেলে, অভিভাবকহীন বগুড়া বিএনপি

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:০৩

প্রতীক ওমর, বগুড়া

দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে আছেন। অনেক নেতাকর্মী কারাগারে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা হলে কারান্তরীন। ফলে  অনেকটাই অভিভাবহীন হয়ে পড়েছে বগুড়া জেলা বিএনপি।

কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য ৯ দিনের কর্মসূচি দিয়েও তাতে তেমন উপস্থিতি নেই কর্মীদের। তারাও মূলত পুলিশের ভয়ে কর্মসূচিতে আসতে ভয় পাচ্ছেন।  

২০১৩ সালের ৩ মার্চ জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ‘চাঁদে দেখা’ নিয়ে বগুড়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ মামলা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে। পরবর্তী সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আরও শতাধিক মামলা করে পুলিশ। একের পর এক মামলা আর পুলিশি হয়রানির ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে ফেরারি বহু নেতাকর্মী।

কারাগারে যেসব জ্যেষ্ঠ নেতা

জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম এখন আছেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়ার বারোপুরে ট্রাক ভাঙচুর ও ট্রাকে আগুন দেওয়ার পৃথক দুটি মামলায় ২১ সেপ্টেম্বর জামিনের জন্য আদালতে হাজির হয়েছিলেন তিনি।  জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আদালত তাকে ভাঙচুর মামলায় জামিন এবং আগুনের মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

জেলা বিএনপির  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলা হয় ৩৮টি। জামিনে ছাড়া পেয়ে বছর খানেক কারামুক্ত ছিলেন। এই ফাঁকে তার নামে আরো কিছু মামলা যোগ হয়। সেই মামলায় আবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন বিএনপির এই নেতা। ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত কারাগারে পাঠান তাকে।

সম্প্রতি হরতালে গ্রেপ্তার ১৩ নেতা

সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে জেলা বিএনপি গত ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলায় অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেয়। হরতালের পক্ষে সকালে বের করা একটি মিছিল থেকে পুলিশ ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমু, জাসাসের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, ছাত্রদলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু।

এদিকে শহর যুবদলের সভাপতি মাসুদ রানা ২০১৫ সালের মার্চে বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে আছে ১০৮টি মামলা। বর্তমানে তিনি জামিনে জেলখানার বাইরে থাকলেও স্বস্তিতে নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়ার বিরোধীদলীয় জোটের এক নেতা জানান, গোটা জেলায় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ৩০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী প্রায় ৬ বছর ধরে বাড়িছাড়া। অনেক নেতাকর্মী জেলখানায় আটক আছেন মাসের পর মাস। জামিন হলেও তাদের মুক্তি মিলছে না। জেলগেটে আবার গ্রেপ্তার করে মামলা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরিবারের কোনো সদস্যকে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুলকে ইতোমধ্যে বগুড়া কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলের স্ত্রী শামীমা শারমীন চৌধুরী জানান, তার স্বামীর পায়ে অপারেশন করতে হবে। ডাক্তারা তাকে জরুরিভাবে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কারাগার থেকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে না। তার সঙ্গে তাদের কারাগারে দেখাও করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপির নেতা মাজেদুর রহমান জুয়েল জানান, বিএনপি বড় দল হলেও সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতির কারণে দলে বেশ প্রভাব পড়ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮সেপ্টেম্বর/মোআ)