শুভ জন্মদিন

সাবিহা ইয়াসমিন ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:২৮

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সাবেক গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলা এবং টুঙ্গিপাড়া উপজেলা)।

সেই হিসাবে আজ ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭১তম শুভ জন্মবার্ষিকী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে আমার অতি সামান্যতম যে অভিজ্ঞতা আছে তাতে তাঁর সম্পর্কে কিছু লিখার স্পর্ধার আগে তাঁর ৭১তম জয়ন্তীতে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের যত শুভেচ্ছাবাণী ফেসবুকের মাধ্যমে গতকাল থেকে পোস্ট করা হচ্ছে, তার কিছু সংগৃহীত অংশ এখানে তুলে ধরছি:

- “আপনার সুদীপ্ত মেধার আলোয় আলোকিত হোক আগামী প্রজন্ম এবং সাফল্যের দীপ্তচ্ছটায় উদ্ভাসিত হোক বাংলাদেশের হীরক উজ্জ্বল অনাগত আগামী।

সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার সুস্বাস্হ্য, দীর্ঘায়ু ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।”

- “শুভ জন্মদিন! প্রিয় মমতাময়ী আপা- গরিব, দুঃখী, মেহনতি মানুষের শেষ ঠিকানা- বাংলার সফল প্রধানমন্ত্রী, প্রাণপ্রিয় নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার বছর বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশা।”

- “প্রিয় নেত্রী, আপনি হাসলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো হাসে। শুভ জন্মদিন আপনার ৭১তম জন্মদিনে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনার দীর্ঘ সুন্দর, নিরাপদ, সফল ও সুখী জীবন কামনা করছি। শুভ হোক আপনার প্রতিটি দিন।”

-“বিশ্বশান্তির অগ্রদূত, মানবতার জননী, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, আপনার জন্মদিনে শুভেচ্ছা। আল্লাহ্ আপনার দীর্ঘায়ু দান করুন।”

-“আজ আপনার জন্মদিন, আজকের এই দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার জন্য রইল শুভকামনা, বেঁচে থাকুন হাজার বছর, বাংলার পথে প্রান্তরে। আপনার দৃঢ় মনোবল, উদারতা, সাহসিকতা ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীজুড়ে। শুভ জন্মদিন হে মহান নেএী।”

-“সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ়চিত্তে পথ চলা, সমকালীন বিশ্বের এক অন্যতম প্রভাবশালী নেতা, আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, আপোষহীন অথচ মমতায় ঘেরা এক কোমলমতি, নারী নেতৃত্বের অহংকার, মানণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই। দীর্ঘজীবী হউন। আপনার সুস্থতা কামনা করি।”

-“শুভ জন্মদিন। বিশ্বমানবতার প্রতীক, মানবতার জননী, শান্তিময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত, জননেত্রী শেখ হাসিনা।”

জন্মসূত্রে পরম সৌভাগ্যক্রমে আমি গোপালগঞ্জের আলো-বাতাসে বড় হয়েছি, মানুষ হয়েছি। আমাদের আদি পৈত্রিক এবং মাতৃক নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বর্ণী ইউনিয়নে। শিশুকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে এসেছি আব্বা-মায়ের মুখে। গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর আদি পৈত্রিক নিবাস আর আমাদের নিবাস একই পাড়াতে প্রায় পাশাপাশি। তবে এই বাড়িতে আমি বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে কখনো বসবাস করতে দেখিনি। আমি ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি যে গ্রাম থেকে গোপালগঞ্জ শহরে কলেজে ভর্তি হতে আসা ছেলেরা বিনা খরচে বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সহযোগিতায় সেই বাসাতে থেকে পড়াশোনা করত। আব্বার কাছে শুনেছি একদম ছোটবেলাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই বাসাতে থেকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করতেন। আমার আব্বাও সে সময় ওই মিশন স্কুলে পড়াশোনা করেন।

১৯৭০ সালে আমার খুব ছোট বয়সে আমি বঙ্গবন্ধুকে একদম কাছ থেকে, কেউ একজন আমাকে তাঁর মঞ্চে টেনে তুলে তাঁর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু পরম স্নেহে আমার মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন অথবা তিনি আশীর্বাদ করেছিলেন। মঞ্চটি ছিল একদম আমাদের বাসার সামনে এবং সেই সুবাদেই এই পরম সৌভাগ্য অর্জন। বঙ্গবন্ধুকে আর কোনোদিন দেখার সৌভাগ্য হয়েনি আমার। তবে আমার পরিপূর্ণ বয়সে বারবার বহুবার বিভিন্ন উপলক্ষে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখার বা তাঁর অতি সাধারণ ঘরোয়া জীবন যাপন সম্পর্কে জানার সুযোগ এসেছে আমার। তাঁর সম্পর্কে কিছু লিখার ধৃষ্টতা মানে শুধু সেগুলোই এখানে তুলে ধরা।

আমি তাঁকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) প্রথম দেখেছি সম্ভবত ১৯৮৪ সালে ঢাকা এলিফান্ট রোডে, তাঁর গাড়িটি রাস্তার পাশে একটি দোকানের সামনে পার্ক করা ছিল। কেউ হয়তো গাড়ি থেকে নেমে দোকানের ভিতর গিয়েছেন। তিনি হাসিমুখে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর গাড়ির প্রায় কাছাকাছি আমরা আমাদের গাড়িটি পার্ক করে গাড়ি থেকে নেমে দোকানের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। আমার স্বামী আমার খুব কাছে এসে চোখ ইশারা করে আমাকে বলেন, “পাশে তাকিয়ে দেখো গাড়িতে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা।” আমি ঘাড় ফিরিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেছিলাম আশ্চর্য সুন্দর নিষ্পাপ মুখ, আর সেই মুখে মিশে আছে চকচকে প্রসন্ন শুভ্র হাসি। তাঁর ঠোঁটের হাসি সবটুকু ছড়িয়ে ছিল তাঁর গভীর সমুদ্রতুল্য নীল দুই চোখে। এরপর সুদীর্ঘ সময় পার হয়েছে তাঁকে দেখার সুযোগ হয়নি।

১৯৯৫ সালে আমার স্বামী যখন সুদূর পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক তখন মাননীয় শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসাবে পঞ্চগড় গিয়েছিলেন। তাঁর আগমনী সংবাদ জানার পর থেকেই আমি আমার স্বামীর কাছে বায়না করে আসছিলাম আমি তাঁকে কাছ থেকে দেখতে চাই, যেভাবেই হোক আমাকে যেন সুযোগ করে দেয়া হয়। তিনি কথা দিয়েছিলেন কিন্তু কথা রাখতে পারেননি। ইলেকশনের আগে ওনার চারদিকে, ওনার পক্ষে জনস্রোত। সরকারি, বেসরকারি সবাই নিশ্চিত পরবর্তীতে তিনিই সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। সবাই তাঁকে ঘিরে উত্তেজিত ব্যস্ত। আমার আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত! আমি হাল না ছেড়ে আমার স্বামীকে অনুরোধ করেছিলাম “অন্তত এতটুকু ওনাকে জানিও যে তুমি গোপালগঞ্জের জামাই, তাঁরই এলাকাতে তুমি বিয়ে করেছো, শুধু নির্বাচনী প্রচারণা নয়, শুধু দলীয় আপনজন নয় বরং উনি যেন অনুভব করেন যে উনি তাঁর এলাকার আপনজনদের কাছে বেড়াতে এসেছেন (তখন আমাদের অনুভূতি এ রকম ছিল যে আমরা যে যেখানে যেমনই থাকি না কেন সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং মর্মান্তিকভাবে পরিবার হারিয়ে, সবাইকে হারিয়ে ভয়ানক দুঃখী, নিঃসঙ্গ বঙ্গবন্ধু-দুহিতা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন)।

১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিরংকুশ ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন। তিনি সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী হবার পরে আরও দুইবার পঞ্চগড় সফর করেন, এ সময় আমি তাঁকে দেখার দুঃসাহসিক বায়না করে আমার স্বামী বা প্রশাসনকে বিব্রত করিনি। দূর থেকে শুভকামনা ছিল– তিনি ভালো থাকুন! এ সময় শুরু হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে বিভিন্ন সংগঠনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম/উদ্বোধন/সম্মেলন। তেমনি একটি সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা। ততদিনে ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময় আমার স্বামী পঞ্চগড় থেকে সিরাজগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসাবে বদলি হন। আমি জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভানেত্রী হিসাবে সেই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করি প্রধান অতিথি হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখব বলে...। তিনি একসময় সভামঞ্চে উপস্থিত হন। অত্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপে তিনি মঞ্চে ওঠেন। তাঁর পদক্ষেপের দৃঢ়তা, ক্ষিপ্রতা চোখে পড়ার মতো। আমার দৃষ্টি তাঁর শুভ্র হাসি থেকে আঁটকে যায় তার পদক্ষেপের দৃঢ়তায়, বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি সুদৃঢ় আস্থাদাত্রী সেই সুলক্ষণার দিকে।

এরপর তাঁকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে) দেখি ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন তিনি গ্রেফতারকৃত এবং আটক জীবন যাপন করছেন। মাঝে মাঝে তাঁকে সংসদ ভবনের বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। আমি নিজে আইনজীবী হিসাবে এনং বিশিষ্ট আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের অ্যাসোসিয়েট হিসাবে সংসদ ভবনের সেই বিশেষ আদালতে নিয়মিত উপস্থিত থেকেছি। এরই মধ্যে আমরা কয়েকজন ঢাকা বার থেকে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নমিনেশন নিয়ে বিভিন্ন পদে ইলেকশনের প্রস্তুতি নেই। নমিনেশনের পর প্রস্তুতি পর্বের শুরুতে প্রচারণা শুরু করার আগে মাননীয় শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করা হয়। তাঁকে বিশেষ আদালতে হাজির করা হয়। চারদিকে লোকে লোকারণ্য। এরই মধ্যে আমি বিশেষ ব্যবস্থাতে সুযোগ পেয়ে যাই তাঁর সাক্ষাতের। তাঁকে এবং জনাব শেখ সেলিমকে আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। তাঁর বিভ্রান্ত চেহারা! (আমার তাই মনে হয়েছিল) আমি তাঁর পাশে গিয়ে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে ঢাকা বার-এ আমাদের ইলেকশনের নমিনেশনের বিষয়টি তাঁকে জানাই। মুহূর্তে আমার মনে হলো তাঁর চোখে-মুখে আনন্দমাখা বিস্ময়ের ছাপ। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন আর শুভ্র দাঁতের ফাঁকে, গভীর নীলাভ চোখে চকচকে হাসি ছড়িয়ে সস্নেহে শুধু একটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন “তাই?”

আমরা ঢাকা বার ইলেকশনে জিতে যাই। কিছু পরে দেশে জাতীয় ইলেকশন হয়। আওয়ামী লীগ ইলেকশনে জিতে গিয়ে সরকার গঠন করে। মাননীয় বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আইনজীবী হিসাবে এবং আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসাবে আনেকবার গণভবনে তাঁর সাথে সাক্ষাতের পরম সৌভাগ্য হয়েছে। প্রতিবারই আবিষ্কার করেছি একজন অবিশ্বাস্য সহজ স্বাভাবিক মমতাময়ী বাঙালি নারীর মহীয়সী রূপ। তাঁকে দেখেছি বারবার বঙ্গভবনে দূর থেকে। প্রতিবারই সেই দৃঢ় মহীয়সী রূপ। তাঁকে দেখেছি গোপালগঞ্জ সমিতির আয়োজিত সভায়। দৃঢ়তার পাশাপাশি আহ্লাদি কন্যা বা মায়াবতী জ্যেষ্ঠ ভগ্নী রূপে।

তাঁকে শেষ দেখেছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। দূর থেকে দেখা যদি ভুল না হয়, কেন জানি না মনে হয়েছে শোকের পাশাপাশি তাঁর কণ্ঠে ছিল বিষণ্ণতা আর অভিমানের আবেগী সুর।

শুভ জন্মদিন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সুকন্যা, ক্ষণজন্মা সুলক্ষণা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা!!!

লেখক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ; সাবেক প্রেসিডেন্ট, রোটারি ক্লাব ঢাকা পূর্বাশা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :