প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য: ৮ বছরেও স্থানান্তর কার্যকর হয়নি

দুলাল হোসাইন, জামালপুর
| আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:২০ | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪০

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়েছিলেন আট বছর আগে, তারপরও পাঁচ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থানান্তর বা আত্মীকরণ কার্যকর করা হয়নি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া শহীদ শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ সমাপ্ত পাঁচটি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বা আত্মীকরণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়ায় নির্ধারিত বেতনের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী উন্নয়ন প্রকল্পেই এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রায় ২০ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করায় দুর্মূল্যের বাজারে আর্থিক সংকটের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর জামালপুরে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জামালপুর ও শেরপুর জেলার ৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির কাছে কাছে এক আবেদনে মানবিক এই বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। এসময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া শহীদ শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম ২০০৬ সালে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রকল্পগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় শেষ হয়ে যাবার পরও এদের কার্যক্রম চলতে থাকে। চলমান প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের পক্ষে প্রকল্পের জনবল উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব স্থানান্তর বা আত্মীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ সেলিনা খাতুন ২০০৯ সালের ২২ মার্চ তারিখে ১২.৩৯.১৬.০০.০০.০১.২০০৯নং স্মারকমূলে চারটি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বা আত্মীকরণ করে নেয়।

অভিযোগ রয়েছে, একই পত্রে তিন মন্ত্রণালয় সরকারি উন্নয়ন খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করলেও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা আর গাফেলতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের আট বছরেও অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রকল্পের (সারাদেশ) ১ হাজার ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়নি।

একপর্যায়ে ২০১৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে গোলাম মোস্তাফা বাদী হয়ে যুব ও ক্রীড়া, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবকে বিবাদী করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের জন্য ৩৪.০০.০০০০.০৬০.০৪.০০২.১৬ স্মারকমুলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়কে পত্র প্রেরণ করে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পত্রের জবাবে আইন মন্ত্রণালয় সল-মিস-৪৪/২০১৬ (রীট-২)-৬৯ তারিখ ১৭/০৮/২০১৬ তারিখের এক স্মারকমূলে উল্লেখ করেন সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ৪৩১/২০১৬, ৩১৮/২০১৬. ৩২৭/২০১৬, ২৬৯১/২০১৫ এবং ২৪৩/২০১৬ মামলায় আপিল বিভাগকর্তৃক গত ৩১/৩/২০১৬ তারিখে প্রদত্ত রায়/আদেশসমূহের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের কররে কোন ফল আসবে না। বরং সরকারের আর্থিক ও সময়ের অপচয় হবে মর্মে মতামত/পরামর্শ দেয় হয়।

এরপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব স্থানান্তর বা আত্মীকরণ না করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩৪.০০.০০০০.০৬০.০৪.০০২১৬ (অংশ-১)-৩২ স্মারকমূলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে পত্র প্রেরণ করা হয়।

ওই পত্রের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একই সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আবেদনকারীদের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানিতে পার হয়ে গেছে আট বছর। এরপরও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা রহস্যজনক কারণে আবেদনকারীদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পে থাকাবস্থায় ১৪ জন কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করায় তাদের পরিবার-পরিজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে যারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর তাদের উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বা আত্মীকরণের নির্দেশের ৮ বছরও বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীরা। তারা দ্রুত তাদের রাজস্ব খাতে নেয়ার জন্য আবারও প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/কেএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

উপজেলা নির্বাচন: রূপগঞ্জে ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল

কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় 

শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে নিহত ১

বগুড়ায় বাবার ব্যাগে থাকা চাকু পেটে ঢুকে শিশুর মৃত্যু

জামালপুরে অতিরিক্ত গরমে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে শিশু নিখোঁজ

বাউফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ, হাসপাতালে স্যালাইনের সংকটসহ নানা সমস্যা

বিপুল টাকাসহ পাবনা পাউবোর দুই প্রকৌশলী আটক, পালাল ঠিকাদার!

ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজনের পর মারা গেল মা, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬

ফরিদপুরে দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :