ঝিনাইগাতীতে আকস্মিক ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

মো. আব্বাস উদ্দিন, ঝিনাইগাতী (শেরপুর) থেকে
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৩৯

গত দু’দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সদরসহ প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় আরও ব্যাপক এলাকার প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানির তোড়ে আজ শনিবার ভোররাত চারটার দিকে উপজেলার মহারশি নদীর রামেরকুড়া বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। এতে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন অফিসসহ সদর বাজার প্লাবিত হয়। বাজারের বেশীর ভাগ ব্যবসায়ীদের মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে মসজিদ রোড, মধ্যবাজার ও কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীদের মাল সব নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক কয়েক কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। চোখের সামনে এভাবে মালামাল নষ্ট হয়ে যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এছাড়া আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পুরো এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। উঠতি রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

প্লাবিত গ্রামগুলো হচ্ছে, ঝিনাইগাতী সদর বাজার, রামেরকুড়া কোদালজানি, দিঘীরপাড়, চতল, বনগাও, মাটিয়াপাড়া, কালীনগর, সারিকালীনগর, দড়িকালীনগর, সুরিহারা, দাড়িয়াপাড়, পাগলারমুখ, হাতিবান্ধা, উত্তর কান্দুলী, জিগাতলা, বগাডুবি, বাগেরভিটা, ধানশাইল, দুপুরিয়া, আয়নাপুর, বিষ্ণপুর, ফুলহারী, ভালুকা, রাঙ্গামাটিয়া, হাসলিবাতিয়া, হাসলিগাঁও, জোলগাঁওসহ আরও অনেক গ্রাম।

বন্যার পানির কারণে এই সব এলাকাগুলোর সাথে উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বহুপরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চার ফুট বন্যার পানির কারণে রান্নাবান্না করতে না পেরে খাওয়া-দাওয়ার কষ্টের মধ্যে পড়েছে বন্যা আক্রান্তরা।

ঢল কবলিত এলাকাগুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম, ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার বিশ^াস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. লাইলী বেগম, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবু তাহের, ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন পরিদর্শন করেছেন। এখন পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়াও শেরপুর সদর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম প্লাবিত এলাকা দেখতে আসে।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লাইলী বেগম ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন ঝিনাইগাতী সদরের আশপাশের গ্রামের বন্যায় কবলিত পরিবারগুলোর মধ্যে কিছু চিড়া মুড়ি বিতরণ করেছেন।

উল্লেখ্য যে, রামেরকুড়া বেড়িবাঁধটি গত প্রায় চারবছর পূর্বে পাহাড়ি ঢলে ভেঙে যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত সংস্কারের কোন উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়নি। এছাড়াও ঝিনাইগাতী বাজারের গরুহাটি ও কাচারি অফিস সংলগ্ন পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ড্রেন দুটির পানি বন্ধকরণের কোনরুপ ব্যবস্থা না থাকায় হঠাৎ করে বাজারের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ে। এতে বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছেন। এর পরেও স্থানীয় প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং ড্রেন দুটি সংস্কারের কোন উদ্দ্যোগ নিচ্ছেন না। যে কারণে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসী মহারশি নদীর রামেরকুড়া বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও বাজারের প্রধান ড্রেন দুটি সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

এবছর দফায় দফায় বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তাতে শেরপুর জেলার দরিদ্র কৃষক ও প্রান্তিক চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। পাশাপাশি বোরো ও আমন ফসল ক্ষতি হওয়ার কারণে গো খাদ্যের জন্য খড়ের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকরা গরু পালনে মহা বিপাকে পড়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :