সোনাগাজীতে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা: ৪৫ বছর পর মামলা

ফেনী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৩

ফেনীর সোনাগাজীতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা এফএফ কমান্ডার নুরুল আফছার হত্যাকাণেডর ঘটনায় দীর্ঘ ৪৫ বছর পর আদালতের নির্দেশে দুই উপজেলা কমান্ডারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে নিহত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আফছারের ছোট ভাই প্রবাসী গোলাম কিবরিয়ার দেয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়েছে।

মামলায় সোনাগাজী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন (৭৫), সাবেক উপজেলা কমান্ডার মোশারফ হোসেন (৬৬), মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম (৬০), রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবর (৬৭)সহ অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর সোনাগাজী ও ৬ ডিসেম্বর ফেনী জেলা শত্রু মুক্ত হয়। পরে সোনাগাজীর এফএফ কমান্ডার নুরুল আফছার তার সহযোগিদেরকে নিয়ে সোনাগাজীতে অবস্থানরত রাজাকারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনমত গঠন করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধের বিএল গ্রুপের কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন তার ভাই সোনাগাজীর ‘রাজাকার কমান্ডার’ শাহজাহান আকবরকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন, মোশারফ হোসেন, আবুল কাশেমসহ কয়েকজন মিলে যোগসাজসে রাজাকার কমান্ডার ভাইকে বাঁচাতে কৌশলে থানায় নিয়ে রাখেন।

এদিকে নুরুল আফছার রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবরকে বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন ভাই রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবরের সঙ্গে কয়েকজন মিলে ১১ ডিসেম্বর বিকেল ৩ টার দিকে নুরুল আফছারকে থানায় ডেকে নিয়ে কৌশলে গুলি করে হত্যা করেন। পরে তার লাশ গুম করে ফেলা হয়। এসময় নুরুল তাকে বাঁচাতে গিয়ে আবু তাহের (৭৮) ও দুলাল আহাম্মদ (৭৫) নামে নুরুল আফসারের দুই সহযোগী আহত হন। পরে হত্যাকারীরা পুরো থানা এলাকায় কারফিউ জারি করে সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এমনকি তারা নুরুল আফছারের পরিবারের সবাইকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেছিল। নিহত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আফছারের পিতা মৌলভী আহাম্মদ করিম থানায় হত্যা মামলা দিতে চাইলেও হত্যাকারীদের ভয়ে তৎকালীন পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে তিনি ঢাকা গিয়ে তৎকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান শেখ ফজলুল হক মনির শরণাপন্ন হয়ে ছেলের লাশ ফেরত পাওয়ার আবেদন করেন। শেখ ফজলুল হক মনি ও সাব সেক্টর কমান্ডার জাফর ইমাম বীর বিক্রমসহ ফেনী মহকুমার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের হস্তক্ষেপে ১৯৭২ সালের মার্চের ১৫ তারিখে সোনাগাজী থানার পেছনের পুকুরের উত্তর-পশ্চিম পাশ থেকে নুরুল আফছারের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানাজা শেষে তুলাতলী গ্রামে তার লাশ দাফন করা হয়।

দীর্ঘসময় মামলা করতে না পারায় স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর গত ১৪ এপ্রিল ফেনীর আদালতে নিহত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আফছা্েরর ছোট ভাই প্রবাসী গোলাম কিবরিয়া বাদী হয়ে সোনাগাজী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন (৭৫), সাবেক উপজেলা কমান্ডার মোশারফ হোসেন (৬৬), মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম (৬০), রাজাকার কমান্ডার শাহজাহান আকবরকে (৬৭)সহ অজ্ঞাতনামা ৭ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত সাপেক্ষে গত শুক্রবার রাতে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ নাছির উদ্দিন বলেন, মামলায় তাদের কিছুই হবে না। শুধুমাত্র তাদেরকে জিম্মি করে রাখার জন্য এবং তাদের মানহানি করার লক্ষে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার ইন্ধনে মামলাটি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নুরুল আফছার নিহত হয়েছিল। এ ঘটনায় তার পরিবারের লোকজন মামলাও করে ছিল। কিন্তু পরে তারা সে মামলা নিজেরাই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, তার ভাই শাহজাহান রাজাকার ছিল। কিন্তু তিনি কারো ক্ষতি করেননি। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর মামলা করার কোন কিছুই নেই। তারা মামলাটি আইনিভাবে মোকাবেলা করবেন।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আফছার হত্যাকা-ের ঘটনায় উপজেলা কমান্ডারসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/ ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :