১১১ পোশাক, যা বদলে দিয়েছে পৃথিবীকে
আপনার কাছে যা ছেড়া জিন্স, কারো কারো কাছেই সেটাই পরম আরাধ্য ফ্যাশন। আপনার কাছে যেটা লাল টুপি, কারো কারো কাছেই সেটাই ব্যাক্তিতের অনুসঙ্গ। ফ্যাশনের দুনিয়ায় কখন কোনটা কার ভালো লেগে যায় তার কোনো কিছুই আগে থেকে বলা যায় না। বলা হয় একই ফ্যাশন ৩০ বছর পর পর ঘুরে ঘুরে একটু ভিন্ন চেহারা নিয়ে ফিরে আসে। কথাটা হয়তো খুব একটা মিথ্যে নয়। আবার এটাও ঠিক যে কিছু কিছু ফ্যাশন দুনিয়াকে বদলে দিয়েছে।
নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, আনুমানিক ৫০০০ বছর আগে থেকে মানুষ কাপড় পরা শুরু করে। তবে সেসময় এখনকার মতো কাপড়ের পোশাক ছিল না। তারা পশুর চামড়া, ফার্ন, ঘাস, পাতা, এবং হাড় দিয়ে মিলিয়ে শরীর ঢাকতো। এরপর মধ্যযুগে এসে বদলেছে বস্ত্রের ধরণ। আর গত কয়েক শতাব্দীতে পোশাকে এসেছে বিপ্লব।
আদিবাসী জনপদ ছাড়া পোশাক পরা এখন অধিকাংশ মানুষের চরিত্রগত ও সামাজিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন কাপড়ে ও পোশাকে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসছে। মানুষ আগে একধরনের কাপড় পড়ত। এখন অন্য ধরনের কাপড় পরে। দিন দিন এই পরিবর্তন চলতেই থাকবে।
বস্ত্র ও পোশাক খাতে গত ১০০ বছরে বিশ্বব্যাপী গার্মেন্টসের কী প্রভাব ছিল? এটা হয়তো অনেকেই জানেন না। এর সহজ ও সুন্দর উত্তর পাওয়া যায়, নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (MoMA) এর প্রদর্শনীতে ঠাই পাওয়া জনপ্রিয় ফ্যাশনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ১১১ টি পরিধেয়র প্রদর্শনে।
জাদুঘরটি ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শুরু থেকেই এতে স্থাপত্য এবং নকশা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু কিছু কারণে ফ্যাশন সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। ফ্যাশন ছাড়া আধুনিক আর্কিটেকচার এবং ডিজাইনের কথা বলা কিছুটা না অনেকটাই অদ্ভুত শোনায়। কারণ ফ্যাশন হল ডিজাইনের একটি ফর্ম।
এই মিউজিয়ামের একটি অসাধারণ ব্যাপার হলো যে, ১৯৪৪ সালে এখানে একটি ফ্যাশন প্রদর্শনী হয়েছিল যা স্মরনীয় হয়ে থাকবার মতন।
ইটালিয়ান লেখক ও নিউ ইয়র্ক সিটির মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (MoMA) এর পরিচালক পাওলা এনটনেলি একটি ফোন সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ‘এটিই ছিল শেষ সংগ্রহের উদ্যোগ, এর পর আমরা আর ফ্যাশন আইটেম সংগ্রহ করিনি।‘
কিউরেটর পাওলার ভাষ্যমতে, ‘১৯৪৪ সালের শো বিস্ময়ের কারণ শুধুমাত্র এটি নয় যে কাপড় আধুনিক ছিল। আরও একটি কারণ হলো পুরা সিস্টেম টাই আধুনিক ছিল।’
যদিও ১১১ টি আইটেম তালিকাভুক্ত করা হয়, কিন্তু সব মিলিয়ে আনা হয়েছিল প্রায় ৩৫০ টি আইটেম।
তালিকাটির মধ্যে রয়েছে- বাইকারদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি চামড়ার জ্যাকেট, কালো রঙের সাধারন পোশাক, মাথায় বাধবার ব্যান্ডেনা, বেসবল ক্যাপ, পোলো শার্ট, ট্রেঞ্চ কোট, হাওয়াই চপ্পল, চিয়োনস, যোগ ব্যায়াম করার পোশাক। এর মধ্যে আরও রয়েছে বিকিনি, হিজাব, কেফ্রিহ, কেন্ট, কিল্ট, শাড়ি এবং বালাক্লাভা, ফ্যানি প্যাক, সাফারি স্যুট, স্পিডোস, সানস্ক্রিন এবং অস্ত্রোপচারের জন্য পরিধেয় মাস্ক।
কিছু ক্লাসিক জিনিষ যেমন বেসবল ক্যাপ, স্কারভ এবং সানগ্লাস প্রদর্শনী হবার পর মানুষের এতটাই ভাল লেগেছে যে মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য জিনিষ গুলকে দোকানে উঠানো হয়।
এনটনেলি বলেন- ‘কিছু জায়গায় কালো রং কে খুব প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ কালো রঙে সবাইকে মার্জিত দেখায়।’
আর তার নিজের খুব প্রিয় একটি জিনিস এর মধ্যে ঠাই পেয়েছে। সেটা হলো হুডি, যা খেলোয়াড় কিংবা স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোশাক। এটি প্রশিক্ষণের আগে বা পরে ক্রীড়াবিদদের রোদের হাত হতে রক্ষা করার জন্য ব্যাবহার করা হয়। কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা এটা ফ্যাশনের অনুসঙ্গ হিসেবেই পরে। আর এটা এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে শুধু খেলোয়াড় নয়, সাধারন মানুষের কাছেও এটা খুবই পছন্দের এক পোশাক। জনপ্রিয়তার কারনেই দিন দিন এটি আরও আধুনিক হয়ে উঠছে।
তবে পাওলা হুডি নয়, খুবই যত্নের সাথে একটি মাত্র পোশাকের জন্য আলাদা একটি ঘর বানিয়েছেন, আর সেটা হচ্ছে একটি ঐতিহ্যবাহী ফ্ল্যাট টুপি যা সিসিলিতে কোপোলা হিসাবে পরিচিত।
আজ ১ লা অক্টোবর ২০১৭ থেকে ২৮ শে জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক এর আধুনিক শিল্পের যাদুঘরে এসব পোশাক নিয়ে একটি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে যার শিরনাম-‘আইটেমস- ফ্যাশন কি আধুনিক?’
তথ্য সুত্রঃ সিএনএন
(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এইচএস/কেএস)