দি হাম্বা ফ্যাক্টরি: এর চেয়ে খাঁটি দুধ ঢাকার কোথাও পাবেন না

প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৪৮

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

দেড় বছরের শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে কুলসুম বেগম এসেছেন দুধ কিনতে। যেখানে এসছেন সেটা একটা গরুর খামার। এই খামার মালিকের দাবী এরচেয়ে খাঁটি দুধ ঢাকার আর কোথাও পাওয়া যায় না। কুলসুম বেগম সেটাই পরখ করে দেখতে এসেছেন। খামারের রাখালকে বললেন দেশী গরুর দুধ দুই কেজি দিতে। রাখাল বলল, একটু দাড়াতে হবে। তিনি জানতে চাইলেন কেন? উত্তরে রাখাল কিছু বলে না, হাসে। একটু পরই সেই লোক খামারের একটা গরুর দুধ দোয়াতে শুরু করলেন। দুধ দোয়ানো শেষে সেখান থেকে মেপে দুইকেজি তুলে দিলেন কুলসুম বেগমের হাতে। কুলসুম অবাক। হাতে সদ্য দোয়ানো গরুর দুধ তখনো গরম। এবার বুঝলেন কি করে এর খামারের মালিক এমন দাবী করতে পারে, কি করে সত্যি সত্যিই তিনি ১০০ ভাগ খাঁটি দুধ গ্রাহককে দেয়ার নিশ্চয়তা দেন। সন্তুষ্ট হন কুলসুম বেগম। এখান থেকে বাচ্চার জন্য দুধ কিনতে আর কোনোদিন দুবার চিন্তা করতে হবে না তাকে।

কুলসুমের পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন শ্যামলীর কেরামত মিয়া। তিনিও এসেছেন দুধ কিনতে। তার অবশ্য আগে থেকেই জানা শোনা আছে ‘হাম্বা ফ্যাক্টরি’র খবর। তিনি রাখাল তিন কেজি দুধ দিতে। প্রায় সাথে সাথেই পেয়ে গেলেন কাঙ্কিত দুধ।

ব্যাতিক্রমী এমন দুগ্ধ খামার গড়ে উঠেছে খোদ রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার ভাঙ্গা মসজিদ সংলগ্ন এলকায়। নাম “দি হাম্বা ফ্যাক্টরি”। কুলসুম ও কেরামত মিয়ার মতো অনেকে প্রতিদিন দুই বেলা লম্বা লাইনে দাড়িয়ে দুধ সংগ্রহ করেন এই দুগ্ধ খামার খেকে।

ব্যাতিক্রম এই দুধ উৎপাদনকারী খামার থেকে দেশী, অষ্ট্রেলিয়ান ও ফ্রিজিয়ান জাতের প্রায় ৫৫টি গরু থেকে ক্রেতাদের চাহিদা মতো দুধ বিক্রি করা হয়। আর এ কারণে এখানকার খামারীরা বলে থাকেন ‘নিজের কেনা দুধ নিজেই দোয়ান।’

প্রায় দশ কাঠা জমির উপরে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার। যেখানে গেলেই শোনা যাবে গরুর ‘হাম্বা হাম্বা’ ডাক। প্রতিদিন খামারের প্রধান ফটকে সকাল সাতটা ও বিকাল পাঁচটায় দেখা যাবে দীর্ঘ লাইন। দুধ নেবার জন্য পাত্র হাতে দাড়িয়ে আছে ক্রেতারা। নিরাপত্তারক্ষী যে কোন ব্যাক্তিকে খামারের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। লাইনে দাড়িয়ে থাকাদেরই কেবল দুধ নেবার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় দাড়াতে দেওয়া হয়। অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়ে থেকেও অনেকে দুধ না পেয়ে ফিরতে দেয়া যায়।

খামার ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচটি লম্বা লাইনে সারিবদ্ধ ভাবে রাখা আছে দেশী, অষ্ট্রেলিয়ান ও ফ্রিজিয়ান জাতের ৫৫টি দুধেল গরু। এর মধ্যে দেশী উন্নত জাতের ৫টি গরু ছাড়া বাকিগুলো অষ্ট্রেলিয়ান ও ফ্রিজিয়ান। ৭ জন রাখাল সব সময় গরুগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছে, কেউ গরুর দুধ দোয়াচ্ছে, কেউ বা গরুর চিকিৎসায় ব্যস্ত। এরাই আবার গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক দুধ দুইয়ে দেন সাথে সাথেই।

খামারের তদারকির দায়িত্বে থাকা রাসেল ঢাকাটাইমস কে জানান, চার বছর আগে এই খামারটি গড়ে তোলা হয়। খামারে প্রায় ৫৫টি দুধেল গাভী আছে। বর্তমানে ৩৫টি গরু থেকে দুধ পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত। বাকি গরুগুলোর বাচ্চা হবার সময় এসেছে বলে দুধ দেওয়া বন্ধ রয়েছে।

তিনি জানান, এখন প্রতিদিন দুই বেলা দুধ দোয়ানো হয়। এতে ৩৫টি গরু থেকে প্রতিদিন ২৫০ কেজি দুধ পাওয়া যাচ্ছে। খামারে ৭০ টাকা কেজি দুধ বিক্রি ও আউটলেটে ৮০ টাকা কেজি দরে দুধ বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা ও বিকাল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে না এলে দুধ পাওয়ার সম্ভবনা নেই বলছিলেন রাসেল।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার জালাল উদ্দিন মোহন বলেন, ‘এরই মধ্যে ‘দি হাম্বা ফ্যাক্টরি’ নামে রাজধানীতে দুটো আউটলেট খোলা হয়েছে। একটি আদাবর থানার পাশে অন্যটি মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে। প্রতিদিন খামার থেকে উৎপাদিত গরুর দুধ খামারে ও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে বিক্রির পর বাকি দুধ আউটলেট গুলোতে রেখে বিক্রি করা হয়।’

খামারে গরুর দেখ-ভালের দায়িত্বে আছেন স্বপন। তিনি বললেন, ‘ কেমিকেল এর সাথে সম্পর্ক আছে এমন কোনো প্রকার খাবার গরুগুলোকে দেওয়া হয় না। শুধু মাত্র সবুজ কাঁচা ঘাস, চালের খুদ, ছোলা, গম, ভূষিসহ বিভিন্ন প্রকার খাবার দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশ কেজি সবুজ ঘাস খাওয়ানো হয় খামারের গরুগুলোকে।’

তিনি আরো জানান, প্রতি বছর গাভী থেকে ষাটটির মতো বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চাগুলো বাহিরে বিক্রি করা হয় না। ‘দি হাম্বা ফ্যাক্টরি’র নরসিংদীতে আরেকটি খামার আছে। সেই খামারটি কেবল মাত্র মাংসের জন্য পালা গরুর। সেখানেই মূলত বাচ্চা গরুগুলোকে মাংসের জন্য তৈরি করা হয়। পরে এসব গরুকে বাজারে বিক্রি করা হয়।

আকিজউদ্দিন শেখ নামে এক রাখাল বলেন, ‘আমি মেলাদিন ধরে এখানে দুধ গরু দেখভালের কাজ করি, দুধ দোয়াই। মালিক পক্ষ সব সময় তদারকি করেন যাতে কোন দুধে কোন প্রকার ভেজাল না দেওয়ায় হয়। আর সেজন্যই আজ পর্যন্ত কোনোদিন ভেজাল দুধের কোন অভিযোগ কোনো কাস্টমার করেনি।’

তোফায়েল আহমেদ নামে এক গ্রাহক অবশ্য সেকথাতেই সায় দিলেন। বললেন, ‘লোক মুখে শুনেই মূলত এখানে দুধ কিনতে আসা। তবে দুধের চাহিদা প্রচন্ড। সময় মতন না এলে কোনো ভাবেই পাওয়া যায় না। আমি এর আগে একদিন এসে ফিরে গেছি দুধ না পেয়ে। তাই এবার আগে ভাগে এসেই দুধ কিনেছি। একবারে দশ কেজি দুধ কেনার ইচ্ছে ছিল। পাওয়া গেলো না, তাই পাঁচ কেজি কিনতে পেরেছি।’

(ঢাকাটাইমস/ ২৯ সেপ্টেম্বর/সিসা/কেএস)