স্থিতিশীলতার শেয়ারবাজারে হঠাৎ ছন্দপতন

ইউনুছ আলী আলাল, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ০৭:৩৮

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরেছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে এখন যারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগ দীর্ঘদিন থেকে লোকসানে রয়েছেন। বিশেষ করে যারা ২০০৯-১০ সালে বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের পোর্টফোলিওতে এখনও লোকসান রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। ফলে নতুন করে লোকসান হলে তাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। যে কারণে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

শেয়ারজবাজারে ছাত্র থেকে শুরু করে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী রয়েছেন। এদের কেউ অন্য পেশায় থেকে শেয়ার ব্যবসা করছেন। কেউ জীবনের শেষ সম্বল পেনশনের টাকা নিয়ে এসেছেন এ মার্কেটে। এখানে এমন অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যাদের শেয়ার ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু নেই। এককথায় তাদের সংসারে চলে শেয়ার ব্যবসা করে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বর্তমানে বিও রয়েছে প্রায় ২৯ লাখ ২১ হাজার। তবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ বাজারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেড় কোটি মানুষ। এসব মানুষের ভালো থাকা, না-থাকা নির্ভর করে শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থার ওপর। বাজার ভালো থাকলে এরা ভালো থাকেন, আবার বাজার মন্দা গেলে এদের অবস্থা খারাপ হয়। শুরু হয় ভাগ্য নিয়ে টানাটানি। যে কারণে এ বাজারের ধারাবাহিক গতিশীলতা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তারা।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিনই কমেছে সূচক। বাকি এক কার্যদিবস সূচক বাড়লেও এর মাত্রা ছিলো সামান্য। তাই গত সপ্তাহে (২৪-২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক কমেছে। এদিকে সূচকের পাশাপাশি প্রায় ৭৮ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। আর গত সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। আলোচিত সপ্তাহটিতে লেনদেন কমেছে ৪৩.৬০ শতাংশ। আর প্রধান সূচক কমেছে ৭৭.৬৪ শতাংশ।

সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের মূল্যসূচক কমেছে। সপ্তাহশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৭৭.৬৪ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই৩০ সূচক কমেছে দশমিক ১৯.৯২ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরিয়াহ বা ডিএসইএস সূচক বেড়েছে ১৬.০৩ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৮টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২৬১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির। আর লেনদেন হয়নি একটি কোম্পানির শেয়ার। এগুলোর ওপর ভর করে গত সপ্তাহে লেনদেন হয় তিন হাজার ৪৪৩ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৬ টাকার শেয়ার। যা এর আগের সপ্তাহে ছিলো ছয় হাজার ১০৫ কোটি ২৪ লাখ ৫৫ হাজার ১২৮ শেয়ার। সেই হিসাবে গত সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ২ হাজার ৬৬১ কোটি ৬৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৯২ টাকা।

সমাপ্ত সপ্তাহে ‘এ’ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। ‘বি’ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে চার দশমিক ২০ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে চার দশমিক ১৩ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে এক দশমিক ৮৫ শতাংশ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ১৬৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৮৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২৩২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির। আর সপ্তাহশেষে লেনদেন হয়েছে ৫০২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৩ হাজার ২৮৮ টাকা।

সাপ্তাহিক রিটার্নে দর কমেছে

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দর (রিটার্ন) কমেছে ১৭ খাতে। অন্যদিকে দর বেড়েছে মাত্র তিন খাতে। লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেড সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে পাট খাতে। এই খাতে আট দশমিক ৫৩ শতাংশ দর কমেছে। এরপরে ভ্রমণ-অবকাশ খাতে তিন দশমিক ৬৮ শতাংশ দর কমেছে। অন্য খাতগুলোর মধ্যে সিমেন্ট খাতে এক দশমিক ৫৯ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে এক দশমিক ৭৩ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাতে তিন দশমিক ৪০ শতাংশ, সাধারণ বীমা খাতে দশমিক ৭৯ শতাংশ, জীবন বীমা খাতে এক দশমিক ২৬ শতাংশ, বিবিধ খাতে দুই দশমিক ছয় শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে এক দশমিক ৪২ শতাংশ, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতে এক দশমিক ২৪ শতাংশ দর কমেছে। এছাড়া ওষুধ-রসায়ন খাতে দশমিক ৬৭ শতাংশ, সেবা-আবাসন খাতে তিন দশমিক ৪২ শতাংশ, ট্যানারি খাতে দশমিক ৯৭ শতাংশ বস্ত্র খাতে তিন দশমিক ১৫ শতাংশ ও ভ্রমণ-অবকাশ খাতে তিন দশমিক ৬৮ শতাংশ দর কমেছে।

অন্যদিকে ব্যাংক খাতে দশমিক দুই শতাংশ, আইটি খাতে দশমিক ৫৫ শতাংশ ও টেলিকমিউনিকেশন খাতে দশমিক ৮৭ শতাংশ দর বেড়েছে।

ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে

সমাপ্ত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কমেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৪৭ শতাংশ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৬ দশমিক ৩১ পয়েন্টে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ১৬ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট।

সপ্তাহ শেষে খাতভিত্তিক ট্রেইলিং পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে ১১ পয়েন্টে, সিমেন্ট খাতের ২৮.৭ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ২৫.৫ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ২৪.৬ পয়েন্টে, খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের ২৭.৭ পয়েন্টে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ১২.৯ পয়েন্টে, সাধারণ বিমা খাতে ১৩.৭ পয়েন্টে, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ২৬.৫ পয়েন্টে। এছাড়া পাট খাতের পিই রেশিও মাইনাস ২৫.৩ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ২৮.৫ পয়েন্টে, এনবিএফআই খাতে ২০.৫ পয়েন্ট, কাগজ খাতের মাইনাস ৫০.২ পয়েন্টে, ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৯.৯ পয়েন্টে, সেবা ও আবাসন খাতের ১৮.৩ পয়েন্টে, চামড়া খাতের ১৯.৩ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতে ১৭.৯ পয়েন্টে, বস্ত্র খাতের ২৪.৮ পয়েন্টে এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ২২.৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

(ঢাকাটাইমস/৩অক্টোবর/ইউএ/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

পাটজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজারকে কাজে লাগাতে হবে: পাটমন্ত্রী

অধ্যাপক খলীলী ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত

স্বর্ণের দাম কমল ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা

জনতা ব্যাংকের ম‌্যানেজার্স ইন্ডাকশন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে স্থানান্তরিত হলো ন্যাশনাল ব্যাংক ডিজাস্টার রিকভারি সাইট

ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে ওয়ালটন, মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা

মিনিস্টারের শতকোটি টাকার ঈদ উপহার জিতে আনন্দিত ক্রেতারা 

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স উদ্বোধন

জনতা ব্যাংকের অফিসারদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :