পাউল হরনার, সুবীর ভৌমিক এবং তার বশংবদরা...

মাহবুব রেজা
 | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৪০

পাউল হরনার। বয়স আটত্রিশ। দেখতেও বেশ সুদর্শন। বাচিকশিল্পী হিসেবেও কম যান না। ভদ্রলোককে সবাই সাংবাদিক হিসেবেই চেনেন। বিশ্ব গণমাধ্যমে তিনি বেশ পরিচিত, বিশেষ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে। তবে তার এই ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ের ভেতর আরও একটা পরিচয় লুকিয়ে রয়েছে। সেটা কি? এই পাউল হরনার হলেন একজন স্বীকৃত ভুয়া সাংবাদিক। মার্কিন মুল্লুকে তার পরিবেশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কা- ঘটে গেছে। পাউল হরনার করেন কি নিষ্ঠার সঙ্গে সত্যের মতো করে ‘ভুয়া সংবাদকে’ এমন কায়দা-কানুন করে পরিবেশন করেন যা পড়ে বা দেখে পাঠক একেবারে বিভ্রান্ত করে পড়েন। শুধু পাঠককেই নয় তার পরিবেশিত ‘ভুয়া সংবাদ’ রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষ পর্যায়ের হোমরা-চোমরা এমনকি নীতিনির্ধারকদের মাথামুণ্ডু পর্যন্ত ঘুরিয়ে দিতে পারে। নিকট অতীতে তার পরিবেশিত জ্বলজ্বলে সত্যের মতো ‘ভুয়া সংবাদ’ বিশ্ব রাজনীতিকে জটিল করে তুলতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। পাউল হরনার মূলত বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন ইন্টারনেটে ভুয়া সংবাদ পরিবেশনের জন্য। তার পরিবেশিত ভুয়া সংবাদ সাধারণ মানুষের মধ্যে দারুণ আলোড়ন তুলত। তার পরিবেশিত এসব সংবাদ দ্রুতই ভাইরাল হয়ে পড়ত। বিশেষ করে গত মার্কিন নির্বাচনের আগে পাউলের একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পাউল তার সংবাদে ট্রাম্পবিরোধী প্রচারকরা রাস্তায় অংশ নেয়া প্রতিবাদকারী সংগ্রহ করতে ব্যাপক অর্থ খরচ করেছে বলে উল্লেখ করেন। পাউলের লেখা এই সংবাদটিকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরা জয়ের জন্য মন্ত্র হিসেবে শেয়ার করে কাজে লাগান। পাউলের এই ভুয়া সংবাদটি বিশ্ব গণমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তার এই সংবাদ হিলারি শিবিরে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যার ফল গিয়ে পড়ে নির্বাচনে।

নিশ্চিত বিজয়ী হিলারি ক্লিনটনের অভাবিত পরাজয়ের পেছনে পাউলের ভুয়া সংবাদ ট্রাম্পের জন্য বিশেষ আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সেদেশের নির্বাচন ও গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা। নির্বাচনে ট্রাম্প রূপকথায় বর্ণিত রাজকুমারের মতো বিজয়ী হয়ে বিশ্বের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। নির্বাচনের পর পাউল অবশ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেকে ট্রাম্পের সমর্থক নন এমন দাবি করে জানান, ‘ট্রাম্পের জয়ের পেছনে তার ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’ পাউল হরনার অবশ্য তার এ ধরনের ভুয়া সংবাদ পরিবেশনের জন্য কখনোই নিজের অনুতাপ স্বীকার করেননি। তিনি বরং আরও জোর গলায় (কথায় আছে না চোরের মা’র বড় গলা...) বলতেন, তিনি ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করছেন না বরং বিদ্রƒপ করছেন। এখন কেউ যদি তা গুরুত্ব সহকারে তার সংবাদ গ্রহণ করে এবং শেয়ার করে তিনি তাদের নিন্দাই জানান।

দুই. কয়েকদিন আগে ফিনিক্সে এই সাংবাদিককে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মার্ক কেসি গণমাধ্যমকে জানান, ‘পোস্টমর্টেমের প্রাথমিক ফলাফলে পাউলের মৃত্যুর পেছনে অস্বাভাবিক কোনো কারণ পাওয়া যায়নি। তবে অতীতে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেয়া ওষুধের অপব্যবহার করেছিলেন। ঘটনাস্থলে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ দেখে মনে হচ্ছে, এটা ঘটনাক্রমে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফল।’

প্রথম দিকে সংবাদমাধ্যমে পাউলের মৃত্যু সংবাদ বিশ্বমিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে মার্কিন পাঠক থেকে শুরু করে সবাই এই মৃত্যু সংবাদটিকে ‘ভুয়া সংবাদ’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারা ধরেই নিয়েছিলেন একজন ভুয়া সাংবাদিকের কি কখনো মৃত্যু হতে পারে! পরে অবশ্য তাদের মতিভ্রম কাটে।

তিন. সম্প্রতি আমাদের দেশের কয়েকটি গণমাধ্যম পাউলের অনুসারী সেজে প্রধানমন্ত্রীর হত্যা ষড়যন্ত্রবিষয়ক একটি কল্পকাহিনি পরিবেশন করেছে। সুবীর ভৌমিক নামের এক পাউল-গোত্রীয় সাংবাদিকের করা সংবাদকে ‘কোট’ করে তারা সংবাদটি পরিবেশন করে দেশের ভেতরে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পাঁয়তারায় নেমেছে বলে বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন। জাতিসংঘে যোগ দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হত্যা প্রচেষ্টার বানোয়াট, মিথ্যা সংবাদ দায়িত্বের সঙ্গে পরিবেশন করে মূলত এসব পাউলার অনুসারীরা দেশের মানুষের কাছে একটি বার্তা পরিষ্কার করেছে বলে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এসব দলকানা, সুবিধাবাদীরা বিভিন্ন সময় সরকারে থেকে নিজেদের আখের গোছানো হয়ে গেলে এরা তৃতীয় পক্ষের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে এধরনের অপকর্ম (ভুয়া সংবাদ) পরিবেশনসহ অন্যান্য কর্মকা- দেশে ওয়ান-ইলেভেনসহ অপরাপর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নামিয়ে আনে যার ভুক্তভোগী হয় গণতন্ত্রসহ দেশের সাধারণ মানুষ।

মাহবুব রেজা: কথাসাহিত্যিক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :