প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা ও কিছু কথা

কাওসার শাকিল
| আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৪৬ | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ১১:৪৪

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দেবেন দলের নেতাকর্মীরা। এই সংবর্ধনা শুরু হবে এয়ারপোর্ট থেকে, শেষ হবে গণভবনের সামনে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে লন্ডন হয়ে সেদিন দেশে ফিরবেন। এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে থেকে ওয়াশিংটন যান চিকিৎসার জন্য।

প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে গেলে রাজধানীজুড়ে যানজটের আশঙ্কা থেকে যায়। এ ব্যাপারে যদিও ওবায়দুল কাদের জনদুর্ভোগ হবে না বলে নিশ্চিয়তা দিয়েছেন। কিন্তু এই দেড় কোটি মানুষের শহরে একটা গাড়ি রাস্তার মাঝখানে নষ্ট হয়ে পড়ে গেলেও মানুষের ভোগান্তি হয়। আর সেখানে বিপুল নেতাকর্মী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা দেবে অথচ কারো কোনো ভোগান্তি হবে না এটা একেবারেই অলীক কল্পনা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি পত্র-পত্রিকা পড়ে জেনে থাকবেন এ শহরে সাম্প্রতিক সময়ে কী পরিমাণ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ট্রাফিক জ্যাম। এই শহরের রাস্তায় যারা প্রতিদিন নামে তারা জানে তাদের জানের ওপর দিয়ে কতটা যায়। যানজট নিয়ে এ শহরের মানুষ যতটা আতঙ্কে থাকে, খুব সম্ভবত অন্য কোনো কিছুতে এতটা হয় না তাদের।

আপনি একজন বিপুল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আপনাকে সংবর্ধনা দিতে যে লাখো নেতাকর্মীর সমাগম ঘটবে এয়ারপোর্ট থেকে গণভবন পর‌্যন্ত, ভাবতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ঢাকা শহরের অবস্থা সেদিন কী হবে?

আপনি মানবতার জন্য কাজ করেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের জন্য জাতিসংঘে কথা বলেছেন। এই অসহায় উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের মানুষ, আমরা সবাই আপনার এই মানবিক আচরণে মুগ্ধ। আমরা জানি আপনি যে পরিবারের মানুষ, যে বাবার মেয়ে, তার কাছ থেকে এ রকমটাই স্বাভাবিক। এটাই আপনার বিশেষত্ব।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এর আগেও দেখেছি আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে শুনে ঢাকার লোকজনকে আতঙ্কে পেয়ে বসে। সেদিন মানুষ ঠেকায় না পড়লে রাস্তায় নামে না। অফিস ছুটি হয়ে যায় আগেভাগে। পারতপক্ষে মানুষ ঘর ছেড়ে বের হতে চায় না, কারণ জানে দুর্বিষহ যানজটে ওই দিন রাস্তাতেই আটকে থাকতে হবে।

কিন্তু যাদের আর কোনো উপায় নেই তারা কী করবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? একজন অসুস্থ অসহায় মানুষ কী করে সেদিন হাসপাতালে পৌঁছুবে? একজন বাবা সেদিন কী করে তার দুধের শিশুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে? একজন সন্তান কী করে তার বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে চিকিৎসা করাবে? সাধারণ মানুষের জন্য এ শহরে খুব বেশি বিকল্প পথ তো নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি মানবিক মানুষ, আমরা সেটা জানি। এর আগেও আপনি এ ধরনের গণসংবর্ধনার উদ্যোগ বাতিল করেছেন। দেশের জন্য আপনার কাজের স্বীকৃতি মানুষ ভালোবাসার মাধ্যমেই দিচ্ছে। চেনা বামনের যেমন পৈতা লাগে না, বঙ্গবন্ধু-কন্যার জন্য এ ধরনের সংবর্ধনারও কোনো প্রয়োজন নেই। আপনাকে পছন্দ করি বলেই বলছি, ৭ তারিখের সংবর্ধনা বাতিল করুন। নানা হিতকর কাজের জন্য বহু মানুষ আপনাকে দোয়া করছে, আরো বহু মানুষের দোয়া পাবেন আপনি।

লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :