যাদুকাটার নদীর জলে মেঘের খেলা

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৩৬

বিপুল সম্ভাবনা আর প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের ডালা সাজিয়ে আছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা। দেশের এই প্রান্তিক জনপদে বিধাতা যেন অকৃপন হাতে বিলিয়ে দিয়েছেন অফুরন্ত সম্পদ, সম্ভাবনা আর অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য। নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা। কখনো জমাট, আবার কখনো হালকা বাতাসে দলছুট হয়ে পাগলা ঘোড়ার মত উত্তরে দাঁড়ানো আকাশে ছোঁয়া বিশাল মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ে গিয়ে আঁছড়ে পড়ছে।

সে দৃশ্যই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত যাদুকাটা নদীর প্রান্তে ফুটে উঠে, তখন যে কেউ কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সীমান্ত নদী যাদুকাটার যেন কোন রূপের শেষ নেই। এই রূপে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত হাজার হাজার দর্শনাথী ও পর্যটক। দিন বাড়ছে যাদুকাটা নদীর প্রতি সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটকের সংখ্যা।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল দুইটি ইউনিয়নের মধ্যে এই যাদুকাটা নদী। ভারতীয় মেঘালয়ের বুক চিড়ে বয়ে আসা এই পাহাড়ি নদী সংলগ্ন রয়েছে শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ও ৭শ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বারেকটিলার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকেও এসে ভিড় করছেন শত শত সৌন্দর্যপিপাসু পর্যটক। যাদুকাটা নদী রূপের নদী, সম্পদের নদী, শ্রমের ও সমৃদ্ধির নদী। সৌন্দর্যের ১৬ কলাই পরিপূর্ণ এক লীলাভূমি যাদুকাটা।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের বুক চিড়ে পাহাড়ি ঝর্ণার পানি মিলিত হয়েছে সীমান্ত নদী যাদুকাটায়। এই যাদুকাটা নদী ২৩ কিলোমিটার দৈঘ্য হওয়ায় উপজেলার সব চেয়ে বড় নদী। এ নদীতে সকাল থেকেই শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত বছরের ১২ মাসেই ২০ হাজারের বেশি পাথরশ্রমিক পরিবার জীবিকার তাগিদে বালু, পাথর, নুড়ির আরোহন করছেন।

বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও যুবলীগ সভাপতি সেলিম হায়দার, বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি মাসুক মিয়া, ছাত্রলীগ নেতা রাহাদ হায়দারসহ স্থানীয়রা জানান, এই নদী থেকে আরোহিত বালু, পাথর ও নুড়ি পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগায়। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে জলের স্রোতে ধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়ায় যাদুকাটার বুকে দেখা যায় দু-দু বালুচড়ে এ যেন আরবের কোন এক মরুভূমি। ভারতের সারি সারি উঁচু নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ যাদুকাটায় বেড়াতে আসা পযটকদের আরো আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। পাহাড়ে বসবাসকারী গারো সম্প্রদায়দের আধো আধো বাংলা কথা বলার চেষ্টা বেশ আনন্দ পায় বেড়াতে আসা পর্যটক ও দর্শণার্থীরা।

যাদুকাটা নদীর বুকে তারা কখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ডিঙ্গি নৌকা, কখনো তীর ঘেষা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাদুকাটার সৌর্ন্দয উপভোগ করেন। যাদুকাটা নদী, বারেক টিলায় বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানসহ তার বন্ধুরা জানান, এই অপরূপ সৌন্দর্যের রূপের রানী যাদুকাটার তুলনা হয় না। এত সুন্দর পাহাড়ি নদীর সম্মিলন খুব একটা দেখা যায় না।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান- টাংগুয়ার হাওর, টেকেরঘাট, বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীতে দেশ-বিদেশের পর্যটক সারাবছরেই বেড়াতে আসেন। এখানে একটি সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ইকোটুরিজম স্থাপন করা হলে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় হবে, তেমনি এই এলাকার স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

যাতায়াত: ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অথবা মোটরসাইকেল অথবা লাইটেস দিয়ে লাউড়েরগড়-যাদুকাটা নদী।

ভাড়া: সুনামগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেল জনপ্রতি ১শ টাকা দু জনে ২শ টাকা। সিএনজি জন প্রতি ১শ টাকা পাঁচজনে ৫শ টাকা।

(ঢাকাটাইমস/৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :