রাজবাড়ী-২: আ.লীগ ও বিএনপির দুই রকম লড়াই

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী
| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:৪৯ | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:০৭

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজবাড়ী-২ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন মুখরিত। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগাম প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর দলগতভাবে ঘর গোছাতেও ব্যস্ত দুই দল।

পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ২১০-এ এরই মধ্যে ছেয়ে রংবেরঙের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে। এসব আয়োজনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের নামে শুভেচ্ছাবার্তার মাধ্যমে ভোটার ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভোটের আবহ তৈরি করেছেন।

বর্তমানে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। তাদের লক্ষ্য আসনটি ধরে রাখা। আর বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। কিন্তু জেলার রাজনীতিতে দুই দলেই অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব-কোন্দল বিদ্যমান। দুই দলেরই জেলা কমিটি করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। ফলে কমিটি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দুই দলের কর্মীদের মাঝেই।

আওয়ামী লীগে অতীতের তুলনায় দলাদলি তীব্র থাকলেও তা খুব একটা প্রকাশ্য নয়। অন্যদিকে বিএনপির কমিটি ঘোষণা নিয়ে পুরনো বিরোধ নতুনভাবে বেড়েছে। দুই দলেই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নিজেদের মতো করে আগাম প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন।

জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজবাড়ী-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু, স্বাধীনতা চিকিৎসক লীগের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক নুরে আলম সিদ্দিকী হক ও বঙ্গবন্ধু যুব আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট চৌধুরী মনিরুল লিংকন।

আর বিএনপির মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নাসিরুল হক সাবু, জেলা সেক্রেটারি হারুন-অর-রশিদ ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কালুখালি উপজেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক খান।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন পাংশা উপজেলা সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা শামিম আহমেদ ও কালুখালি উপজেলার সভাপতি মো. আবুল হোসেন।

ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৪৫ হাজার ৩৯২ জন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকটাই সংসদ সদস্য কেন্দ্রিক। সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনসহ তিনবার এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কালুখালী, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন তিনি।

পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল মোর্শেদ আরজ জানান, জিল্লুল হাকিম জেলা অভিভাবক। তার রাজনৈতিক দক্ষতা দিয়ে তিনি দলকে সুসংগঠিত করেছেন। জিল্লুল হাকিম ছাড়া অন্য কাউকে রাজবাড়ী-২ আসনের প্রার্থী হিসেবে চিন্তাও করা যায় না। দলের দুঃসময়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। তাই আগামী নির্বাচনে দল জিল্লুল হাকিমের প্রতিই আস্থা রাখবেন বলে তার বিশ^াস।

আওয়ামী লীগের অন্য শক্তিশালী মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের হলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. এম ইকবাল আর্সলান। তিনি দীর্ঘ ৩৫ বছর বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পিতা মরহুম ডা. আসজাদ রাজবাড়ী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আমি এই আসন থেকে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’

কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। বর্তমান সাংসদের সমালোচনা করে সোহেল রানা বলেন, ‘জিল্লুল হাকিম ও তার সর্মথকদের বাইরে দলীয় নেতাকর্মীরা অবহেলিত।’ তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সমর্থকদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। একাদশ নির্বাচনের প্রার্থী হবার ঘোষণা দেবার পর রাজবাড়ী-২ আসনের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক এবার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, ‘এ আসনে প্রার্থী বদল জরুরি। তাতে এলাকার উন্নয়ন হবে, দলের জনপ্রিয়তা বাড়বে।’ নুরে আলম সিদ্দিকী হক গত ২০১৫ সালে কালুখালি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মো. নাসিরুল হক সাবু নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় ব্যপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে রেখেছেন। সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই সাবেক এমপি বলেন, ‘জনগণের জন্য রাজনীতি করি, এ আসনের জনগণ আমার অনেক আপন।’ তিনি এর আগে এ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। এবারও দলীয় সভানেত্রী তাকে মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি আশা করেন।

নাসিরুল হক সাবু ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে এক লাখ ৩৭ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি এক লাখ ৪২ হাজার ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জিল্লুল হাকিমকে পরাজিত করেন। এর আগে ৯০ সালে পাংশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

নাসিরুল হক সাবুকে মনোনয়ন দিলে আনসটি পুনরুদ্ধারে তারা সক্ষম হবেন বলে জানান পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য মো. হাবীবুর রহমান রাজা, জেলা ও পাংশা উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা তরুণ দলের নেতা মিজানুর রহমান মিলন।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এবং তিনি রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে দল যাকেই প্রার্থী করুক তিনি তা মেনে নিয়ে একত্রে কাজ করবেন বলে জানান।

ছাত্রদল নেতা সবুজ সরদার মনে করেন, হারুন অর রশিদকে দল মনোনয়ন দিলে বিএনপি এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় মাঠে থেকেছেন দাবি করে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কালুখালী উপজেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘আশা করি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা ভুলে যাবেন না। দল মনোনয়ন দিলে এ আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব।’

কালুখালি উপজেলা যুবদলের নেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি তাকে মনোনয়ন দিলে ভোটাররা রাজ্জাক খানকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে।

জাতীয় পার্টির মনোনয়ন-প্রত্যাশী পাংশা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও যুবসংহতির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য শামিম আহমেদ বলেন, পাংশা শহরের নিজ বাড়িতে থেকে তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণ ছাড়া আ.লীগের আর কোনো অর্জন নেই : এবি পার্টি

‘দেশে ইসলামবিদ্বেষী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’

ক্ষমতাসীনদের কেউ ভালো নেই: গয়েশ্বর

সিন্ডিকেটকে কোলে বসিয়ে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপাচ্ছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ

ইফতার পার্টিতে আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আ.লীগের গিবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই: ওবায়দুল কাদের

দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন মঈন খান

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী: আ.লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় চরমোনাই পীরের উদ্বেগ 

শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে কুরআনের শিক্ষা চালু করতে হবে: মুজিবুর রহমান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :