প্যানেল মেয়র হিসেবে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নিয়েছি
লন্ডনে চিকিৎসাধীন মেয়র আনিসুল হকের অনুপস্থিতিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ওসমান গণি। এত বড় দায়িত্ব এর আগে পালন করেননি বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের এই সভাপতি। ১৫ সেপ্টেম্বর এই নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর ওসমান গনির কাজের ধারা, পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে তার মুখোমুখি হয়েছিল ঢাকাটাইমস। সিটি করপোরেশন নিয়ে মেয়র আনিসুল হকের পরিকল্পনা আর উদ্যোগগুলো এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি নিজের ভাবনাগুলোর কথাও তুলে ধরেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহিউদ্দিন মাহী।
কেমন আছেন?
তেমন ভালো নেই। ঠান্ডা লাগছে। আসলে আমরা সার্বক্ষণিক এসিতে থাকতে অভ্যস্ত নয়। এখানে এসিতে থাকতে হয়। আমরা তো মাঠে-ঘাটের মানুষ। কিন্তু এই সার্বক্ষণিক এসির মধ্যে থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। একটু ঠাণ্ডা সমস্যা হচ্ছে। এমনিতে আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
মেয়রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইছি।
এই মুহূর্তে মেয়রের অবস্থা সম্পর্কে বলতে পারব না। তার ছেলে যখন তাকে দেখতে গেছেন তখন তার সঙ্গে কথা হয়েছে। ছেলে ফিরে এলে কথা বলে জানা যাবে। তবে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। এই মানুষটা দরকার দেশের জন্য, এই সিটির জন্য। আমাদেরকে তার দরকার নেই, কিন্তু তাকে আমাদের দরকার। আমাদের স্বার্থেই তাকে এই পদে দরকার।
আপনি এখন মেয়রের দায়িত্বে আছেন। কেমন লাগছে এই দায়িত্ব?
ভালোই লাগছে। এত বড় দায়িত্ব আগে কখনো পালন করি নাই। এই প্রথম বড় দায়িত্ব পেয়েছি। প্রেশার একটু বেশি যাচ্ছে। আমার বাবা আমাকে বলতেন, আমি একটু অলস মানুষ। কিন্তু এই দায়িত্ব পাওয়ার পর দেখছি অলসতা আর কাজে আসছে না।
আনিসুল হকের অসুস্থতায় আপনি দায়িত্ব পেয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আপনি কতটা প্রস্তুত ছিলেন?
আমার মোটেও কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ মেয়র মহোদয় অসুস্থ হবেন, আমি দায়িত্ব নেব- এমন চিন্তা তো মাথায় আসতে পারে না। তবে ঘটনাচক্রে এসব হয়ে গেছে। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করছি।
কাউন্সিলর থেকে মেয়র- নিজেকে কীভাবে মানিয়ে নিয়েছেন?
আমি সহজেই মানিয়ে নিতে পেরেছি। কারণ আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিকভাবেও অনেক দায়িত্ব পালন করেছি। সে হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে। আমি বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য। দলের বড় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি।
নতুন দায়িত্ব। কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে না?
তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এই সিটি তো আমার দীর্ঘদিনের চেনা জায়গা। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও আমার সহকর্মী কাউন্সিলররা আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। এ কারণে কাজ করতে সমস্যায় পড়িনি। এখানে সবাই খুব সহযোগিতাপরায়ণ। আর সমন্বয়ের ক্ষেত্রে একটি সিস্টেম তো আমাদের মেয়র মহোদয় চালু করে গেছেন। সেভাবেই সবকিছু চলছে।
আপনার কাজের অগ্রাধিকার নিশ্চয় নির্ধারণ করেছেন এত দিনে?
গত মাসের ৫ তারিখে কাগজে-কলমে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি ইস্যু হলেও ১৫ তারিখে থেকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। আমি রাজনৈতিক কর্মী হওয়ায় কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এ দায়িত্বভার গ্রহণ করি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নিয়মিত সিটি কর্পোরেশনের অফিসে বসছি।
এখন বর্ষাকাল হওয়ায় আমি জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তাঘাট মেরামতের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছি। মানুষের ভোগান্তি লাঘবে চেষ্টা করছি বেশি।
নতুন কী পরিকল্পনা করছেন?
মেয়র সাহেব (আনিসুল হক) যেসব কাজের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর বাইরে নতুন করে কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কারণ মাত্র অল্পদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। তবে পরিকল্পনা তো করতেই হবে। সেটি আস্তে-ধীরে নেব।
আনিসুল হকের উদ্যোগে যেসব কাজ হয়েছে, সেগুলোর ফলোআপ কীভাবে করছেন?
মেয়র মহোদয় যেসব কাজ শুরু করে গেছেন সেগুলো আমি শেষ করার চেষ্টা করছি। নিয়মিত সেগুলো মনিটরিং করছি। যেসব কাজের টেন্ডার হয়েছে সেগুলো আগে করার চেষ্টা করছি।
আনিসুল হক মাঠে সরব ছিলেন, নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সব সময় মিডিয়ায় আলোচিত হন। আপনার কাজের ধরনটা কেমন হবে?
আমি আসলে মেয়র মহোদয়ের কাজগুলোই চালিয়ে নিচ্ছি। তিনি যেসব পরিকল্পনা করেছেন, সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। অনেকেই আমাকে অনেক কথা বলেন কিন্তু আমি তাদের বলেছি মেয়র মহোদয়ের পরিকল্পনা ও নির্দেশিত কাজের বাইরে আমাকে কেউ কোনো অনুরোধ করবেন না।
আপনি একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। পুরো উত্তরের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের এলাকাবাসীকে নিশ্চয়ই সেভাবে সময় দিতে পারছেন?
না, বিষয়টি সে রকম না। এখন তো দায়িত্ব বাড়ছে। কিন্তু এলাকার মানুষকেও আমি সময় দিচ্ছি। হয়তো আগের মতো আর দেয়া সম্ভব না। তবে এ নিয়ে এলাকাবাসীর কোনো অনুযোগ বা অভিযোগ নেই। তারা বরং খুশি।
প্রগতি সরণিতে পানি নিষ্কাশন নালা, সাইড ড্রেন, ফুটপাত উন্নয়ন কাজ চলছে। অভিযোগ আছে, ধীরগতিতে কাজ চলছে বলে যানজট বেড়েছে।
কাজ ধীরে চলছে বিষয়টি সে রকম না। অনেক সময় বৃষ্টির কারণে কাজ দ্রুত করতে সমস্যা হয়। তবে ওই কাজগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুত শেষ হবে।
বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল থেকে রামপুরা টেলিভিশন পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা। এই সড়ক ভালো হবে কবে?
বনশ্রী আইডিয়াল থকে রামপুরা টিভি সেন্টার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। এটি নির্মাণের জন্য আমাদের মেয়র মহোদয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমি সেটি অবশ্যই বাস্তবায়ন করব। এটি নির্মাণের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি আগামী দেড় মাসের মধ্যে ওই রাস্তার কাজ শুরু হবে।
ঢাকার উন্নত সেবা দিতে পুরো ঢাকায় উন্নত বাস নামানোর পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন আনিসুল হক। সেই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে আপনি কিছু করছেন?
এটি নিয়েও কাজ চলছে। ঢাকা পরিবহন সেক্টরটা শৃঙ্খলায় আনতে কাজ হচ্ছে। নতুন বাস আরও আসবে।
এবারের বর্ষায় রাজধানীর রাস্তাঘাট, ফুটপাত অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কী করছেন?
আমরা এই বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। রাস্তাঘাট, ফুটপাত মেরামত করছি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি।
আপনি একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এলাকার সমস্যা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের চাহিদা সম্পর্কে আপনি একজন মেয়রের চেয়ে বেশি জানেন। এখন মেয়র হিসেবে আপনি এ ব্যাপারে কী ভাবছেন?
ঢাকা উত্তরের সমস্যা সমাধানে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। কাউন্সিলরদের চাহিদামতো আমরা সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছি। এখন এই বর্ষা মৌসুমে বেশি সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিয়ে। এটি নিয়ে আমরা যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি।
অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অভিযোগ করেন- ওয়াসার আওতাধীন ড্রেনগুলো পুরনো এবং এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে জলাবদ্ধতা প্রকট হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না?
আমাদের জলাবদ্ধতা সমস্যাটা বেশ বড়। এটির সঙ্গে ওয়াসা জড়িত। আর এ বিষয়টি সবারই জানা। এখানে নীতিনির্ধারী বিষয় আছে। সেটি সরকারের উপরের মহলের বিষয়। এটি নিয়ে আসলে আমার কিছু করার নেই।
কাউন্সিলরদের পদমর্যাদার বিষয়টি একটু বলুন।
একজন কাউন্সিলর জনপ্রতিনিধি। এর চেয়ে বড় পদমর্যাদার আর কী আছে। তারপরেও পদমর্যাদার বিষয় কথা হচ্ছে। সেটি মন্ত্রণালয়ে আছে। এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকে ও ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ।
[গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত কাজে লন্ডনে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে গেলে গত ৪ আগস্ট পরীক্ষা চলার মধ্যেই তিনি সংজ্ঞা হারান। পরে চিকিৎসকরা জানান, তিনি মস্তিষ্কের রক্তনালির প্রদাহে ভুগছেন। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মেয়রের অনুপস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্যানেল মেয়র ঘোষণা করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, কোনো কারণে মেয়র দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে কাউন্সিলরদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে মেয়রের প্যানেলের কোনো সদস্য তার সব দায়িত্ব পালন করবেন।
জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে প্যানেল মেয়ররা হলেন- ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ওসমান গণি; ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা এবং ৩১, ৩২ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আলেয়া সারোয়ার ডেইজী।]
(ঢাকাটাইমস/৭অক্টোবর/মোআ)