বিষমুক্ত টাটকা শাকের কারবারি

আসাদুজ্জামান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৫

জুরাইন রেলগেট। ঠিক তার উত্তর পাশেই লাইনের দুধারে কাঁচাবাজার। ট্রেন এলে বিক্রেতা ও ক্রেতারা নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। এই বাজারের এই নিয়ম। ঝুঁকি নিয়ে চলে কেনাবেঁচা। লাইনের হাত দুয়েক দূরে প্লাস্টিকের চটে বেশ কয়েক পদের শাক স্তূপ করে সাজানো।

একটি বস্তার মুখ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সবুজ লতা। সবুজ শাকগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। কাছে যেতেই চোখে পড়ল গাঢ় সবুজ আর টাটকা হেলেঞ্চা, মাঞ্চল, কলমী, কচুশাক আর লাউশাক। আছে প্রায় হারিয়ে যাওয়া নুনে শাকও। এমনকি ঔষুধি গুণে ভরা তেলাকচুর পাতাও আছে। এসব শাকের পসরা সাজিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন মোহা. আলী। তার কাছে প্রথমেই জানতে চাই গ্রামীণ এই শাকগুলো কোথায় পেলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এগুলো গ্রাম থেকে আনা।’ ‘শাক-সবজি তো গ্রামেই হয়, তবে এগুলো আর আলাদা কি?

এতটুকুও বিরক্তি প্রকাশ না করে বলেন, ‘বাবা, এগুলো আমার স্ত্রী কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খাল-বিল ও চর থেকে তুইল্লা আনছে। চাষ করা শাক না।’

এবার কৌতুহলটা আরো বেড়ে যায়। কেননা, নগরের বাজারগুলোতে যেসব সবজি মেলে তার বেশির ভাগই চাষ করা। এগুলো উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় রাসায়নিক সার। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দূরে রাখতে প্রয়োগ করা হয় কীটনাশক। ফলে এসব সবজি খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যকার তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কতটা রোগ-বালাই হতেই পারে। কিন্তু মোহা আলীর সংগৃহিত শাকগুলো এসব থেকে মুক্ত। প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা শাকগুলো তিনি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতে এসেছেন।

মোহা আলী জানান, তার গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় পশ্চিম কলসপাড় ইউনিয়নে। আগে কড়াইলে মাটি কাটার কাজ করতেন। মাস তিনেক হলো উঠেছেন ইকুরিয়ায়। সেখানে একটি বাসায় স্ত্রী ও শিশুপুত্র নিয়ে ভাড়া থাকেন। গ্রামে থাকতে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তার ঢাকার জীবন খুব বেশি দিনের নয়। বছরই পার হয়নি। ‍

মোহা আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জুরাইন বাজারে শাক বেঁচি তুই তিন মাসতন। আগে ছিলাম কড়াইল। ওহতন মাটি কাইটতম। ঢাকা আইছিন অল্প দিন আগেতন। গ্রামে থাকতইন ক্ষেত নাড়াইতাম।’

এই বাজারে অন্যসব ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে সবজি কিনে এনে বাজারে বিক্রি করেন। আপনি কেন চর থেকে কুড়িয়ে আনা শাক বিক্রি করেন? মোহা. আলী বলেন, ‘এগুলোতন চড়ে হইয়া থাকে। কিইন্না আনোন লাগে না। এগুলো সার ও বিষ দেওন নাই। খাইলে ক্ষতি হইবো না ।’

মাহা আলী জানান, তার স্ত্রী সারাদিন ইকুরিয়ার খাল-বিল ও চড়ে চষে বেড়িয়ে শাকগুলো তুলে আনেন। ভোরে সেগুলো নিয়ে বাজারে আসেন মোহা।

এই শাক বিক্রির টাকা দিয়ে তার সংসার চলে। ছেলের পড়ানোর খরচেরও কিছুটা ওঠে।

এদিকে মোহ. আলীর সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে হুইসেল বাজিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ছুটে আসে একটি কমিউটার ট্রেন। রেল লাইনের বুকের উপর দিয়ে দ্রুত গতিতে কলমাপুরের দিকে ছুটে যায় সেটি।

ওদিকে বেলা বাড়লে বাজারে ক্রেতাসমাগম হয়। মাহা আলীর শাক কিনতে ভিড় করেন দু’একজন। এদেরই একজন দোলোয়ার হোসেন। তিনি থাকেন জুরাইনে। তিনি বলেন, ‘গ্রামে থাকতে এসব শাক খেতাম। ঢাকায় এসে এগুলো খুব একটা মেলে না। এর কাছে এসে শুনলাম এগুলো বিল থেকে সংগ্রহ করা তাই কিনব ভাবছি। বিষমুক্ত টাটকা সবজি খাওয়ার মজাই আলাদা।’

প্রায় বিলুপ্তির পথে এই শাক কিনতে আসা শরীফা বেগম নামের এক নারী ক্রেতা জানান, তার নুনে শাক খুব পছন্দ। এই বাজারে কদাচিৎ এই শাক বিক্রি হয়। আজ হাতের কাছে পেয়েছেন। কিনবেন বলে ঠিক করেছেন।

গ্রামের খাল-বিলের পানিতে পরিচর্যাহীন ও প্রাকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা শাকের মতই মাহা আলীর জীবন। তার পুঁজি নেই। তাই বড় কোনো ব্যবসার স্বপ্নও নেই। আগামীদিনগুলোতে কীভাবে তার সংসার সংসার চলবে তা নিয়ে সন্দিহান। তবে এ নিয়ে অক্ষেপ নেই। ভবিষৎত সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে নিয়ে নির্ঝঞ্জাট জীবন যাপন করতে চান।

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :