কমদামে কাঠের আসবাব

কাজী রফিকুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ০৮:১৭

ইট-পাথরের শহরে কাঠের আবেদন কমে গেছে এই কথা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। তবে আসবাবপত্রের ব্যবসায়ীরা বলেন তাদের ব্যবসা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে। বোর্ড, স্টিল আর প্লাস্টিকের সাথে পাল্লা দিতে হচ্ছে তাদের।

বিলাসী ও রুচিশীল আসবাব বলতে এখনো লোকে কাঠের আসবাবপত্রই বোঝে। কেননা শহরের ঘর সাজাতে কাঠের ফার্নিচারের বিকল্প নেই। নামজাদা ফার্নিচারের দোকানে তাই এখনো ভিড় দেখা যায় একই রকম। শহুরে বিলাসিতার এই স্রোতে খানিকটা ভাটা হয়তো পড়েছে, তবে সেটার কদর কমেনি একটুও।

বিলাসীতা নয়, প্রয়োজনে আসবাবপত্র কেনেন এমন মানুষের সংখ্যাও এ শহরে কম নয়। আর তাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছে অনেক ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান ও দোকান। তেমনি বেশকিছু ফার্নিচার দোকান রয়েছে লালবাগে।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের উল্টো পাশে নবাবগঞ্জ। সেখানে যেতে হলে প্রথমে পৌঁছাতে হবে সিকসন। সিকসন থেকে পঞ্চাশ গজ পশ্চিমে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বেড়িবাঁধের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ১৫-১৬টি আসবাবপত্রের দোকান। লালবাগ-হাজারীবাগ এলাকার শুধু নয়, আশপাশের প্রায় সব এলাকার মানুষের কাঠের আসবাবপত্র তৈরি হয় এখানে। তাও আজ থেকে নয়, সেই ১৯৯৫ সাল থেকে।

দোকানে দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতন। হাতুড়ি-বাটালের সাহায্য কাঠে এঁকে দিচ্ছেন নানান নকশা। এর মধ্যেই খদ্দের আসছে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই যে দোকানের আসবাবপত্রের ডিজাইন ভালো, সেখানেই খদ্দেরের আনাগোনা বেশি। ছোট-বড় খাট, কাঠের আলমারি, ড্রেসিংটেবিল, ওয়ারড্রোব, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চসহ সব ধরনের কাঠের আসবাবপত্র পাওয়া যাচ্ছে এসব দোকানে।

এসব দোকানে দাম তুলনামূলক কম। দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় পাওয়া যাবে ডাবল খাট। কিছুটা নকশাকরা একই আকারের খাট পাওয়া যাচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়।

নকশার বাইরেও কাঠের ভিন্নতার কারণে আসবাবপত্রের দামের ভিন্নতা রয়েছে।

একটু ভালো মানের কাঠ দিয়ে আসবাব বানালে দামও বাড়ে তার সাথে সাথে।

আসবাব বানানোর ব্যস্ততার মাঝে কথা হলো মো. মোতালেবের সঙ্গে। মোতালেব একজন ডিজাইনার। চল্লিশ বছর ধরে এ পেশায় আছেন। কাজ করেছেন রাজধানীর অন্যান্য দোকানে। নবাবগঞ্জের এক দোকানে পার করছেন প্রায় এক যুগ। তাদের এ শিল্প সম্পর্কে ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘কাম শিখছি এইডা, আর করুম কি? কোনোমতে পেট চলে। স্টিল-পারটেক্স আওয়ার পর, কাঠের মাল কমই চলে। অহন তো আমরা স্টিল পারটেক্স-এর কাম শিখতে পারুম না, তাই এইডাই কইরা যাইতাছি। যেমনে দিন যায় যাউক।’

কাঠের আসবাবের দোকানের কোল ঘেঁষেই বিক্রি হচ্ছে স্টিলের তৈরি ফার্নিচার। বিক্রি হচ্ছে দোকানদারদের চাহিদা অনুপাতেই। তবে, কাঠের ফার্নিচার যারা কিনতে আসেন তারা স্টিলের আসবাব কেনেন না। এমন দাবি এখানকার ফার্নিচার বিক্রেতা ও কর্মচারীদের।

গৃহিণী রাহেলা খাতুন বউবাজার থেকে এসেছেন কাঠের খাট কিনতে। খাট কেনা শেষে কথা হয় তার সাথে। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘জিনিস ভালো আর জায়গাটাও কাছাকাছি। আমরা একটু সুবিধাই পাই। দামও ঠিক আছে।"

দূর থেকে আসা খদ্দেরও কম নয়। মোহাম্মাদপুর তাজমহল রোড থেকে এসেছেন জুনায়েদ খান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘খোঁজ-খবর নিয়েই এসেছি। আমাদের টাউন হল বাজারে যে ফার্নিচার বিক্রি হয়, তাও এখান থেকেই যায়। ওরা আবার ঝামেলা করে, পুরান জিনিস বার্নিস করে নতুন বলে চালিয়ে দেয়। তার থেকে এখান থেকে নেয়াই ভাল। একশটা দেখে একটা কিনব। তবে, এখানকার ঝামেলাটা হলো পরিবহন। ভ্যানওয়ালারা ভাড়া খুব বেশি চায়।’

অনেকেই হয়তো জানেন না যে প্রায় একই রকমভাবে সস্তায় আসবাবপত্র পাওয়া যায় রাজধানীর কাঁটাবনে। পশুপাখির দোকানের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে কাঠের আসবাবের দোকান। যারা জানেন তাদের অনেকেই এখানে আসেন সস্তায় কাঠের আসবাব তৈরি করতে। এখানকার দোকানগুলোর সুবিধা হলো খুবই অল্পসময়ের মধ্যে আপনার প্রয়োজন এবং পছন্দমতো আসবাববা নিয়ে নিতে পারবেন চাহিদামাফিক। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানকার খদ্দেররা ওয়ারড্রোব, বুকশেল্ফ, আলমারি বানাতে আসে।

পড়ার টেবিল, ডাইনিং টেবিল, কম্পিউটার টেবিলসহ সব ধরনের টেবিলের বিপুল চাহিদা আছে বলে জানান এখানকার দোকানিরা। কেরোসিন কাঠ দিয়ে মূলত আসবাবপত্র তৈরি করেন এখানকার কারিগররা। তাই দামটা থাকে সাধ্যের মধ্যে। তাছাড়া কেরসিন কাঠেসহজে ঘুণে না ধরার সুনাম আছে। তাই ভালোই ক্রেতা পান কাঁটাবনের আসবাব দোকানিরা।

এখানকার একজন দোকান মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ স্বপন। মেসার্স সাফিন ফার্নিচারের মালিক। তাদের পণ্যের দাম কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাঠ আমরা সরাসরি কিনি, তাই দামটা কম পড়ে। বিক্রি ভালো থাকলে কম লাভ করলেই পোষায়। অন্যান্য জায়গায় যেমন ওরা ফার্নিচার বাইরে থেকে কিনে এনে বিক্রি করে, তাই মানের ব্যাপারটা ওদের হাতে থাকে না। কম দামে কিনে বেশি দামে বেচে।’

নিজের পছন্দমতো ফার্নিচার তৈরি করে নেয়ার সুযোগ থাকায়, অনেকেই এখানে এসে নিচ্ছেন সে সুযোগ। এলিফেন্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টারে চাকরি করেন মো. হাসান হাওলাদার। দুপুরের বিরতিতে এসেছেন কাঁটাবন। উদ্দেশ্য নিজ বাসার জন্য একটি ওয়ারড্রোব তৈরি করবেন।

ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘জানি এখানে ভালো ফার্নিচার পাওয়া যায়। সহকর্মীরা অনেকে নিয়েছে। ভালোই। আমি আবার নিজে ডিজাইন নিয়ে এসেছি। সে অনুপাতে বানিয়ে নিবো। দামটাও যে বেশি পড়ছে তা বলব না। সব মিলিয়ে ঠিক আছে।"

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/কারই/কেএস/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :