আবারো মাঠ মাতাতে চান মুরাদ

প্রতীক ওমর, বগুড়া
 | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৫:১৬

জীবন যৌবন কেটেছে মাঠে মাঠে। কখনো খেলোয়াড়, আবার কখনো রিফারি, আম্পায়ারের ভূমিকায় ছিলেন। প্রশিক্ষক হিসেবেও তিনি বগুড়াসহ উত্তর জনপদের ক্রীড়াঙ্গণে ব্যাপক পরিচিত। মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো এক সময়ের তুখোড় ক্রীড়া সৈনিক ফজলুল হক মুরাদ।

আপাতত তার বসবাস হাসপাতালের বিছানায়। ২০১৩ সালে ডায়াবেটিক রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর আস্তে আস্তে শরীরে দেখা দেয় নানা রোগ। সেই থেকে তিনি চলে যান লোক চক্ষুর আড়ালে। মাঠের বাইরের তার এই জীবন মোটেও সুখকর হয়নি। জীবনের বড় একটা অংশ খেলাধুলায় পার করার কারণে সম্পত্তি অর্জনে তিনি কখনোই সময় দেননি। অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় এখন তিনি অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন। তার অসংখ্য ভক্ত থাকলেও অনেকেই জানেন না তার বর্তমান পরিস্থিতির খবর।

নিজেকে সবসময় আড়ালে রাখতেন মুরাদ। নিজের অসুস্থতার খবরটাও ছড়িয়ে দেননি তিনি। এখন তার শরীরের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, ঠিক মতো কথাও বলতে পারছেন না। কাছের মানুষরা সবসময় খোঁজ-খবর রাখছেন ঠিকই, কিন্তু তার চিকিৎসার ব্যায় বহন করার মত এখনো কোন গোষ্ঠী তার পাশে দাঁড়ায়নি।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগে সপ্তাহখানেক আগে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ডা. এহসানুল হকের তত্ত্বাবধানে তিনি এখন চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার শরীরে বহু রোগের আক্রমণ ধরা পড়েছে। তার মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করছে কিডনি। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন কয়েক লাখ টাকা।

মুরাদের স্ত্রীর লাভলী হকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার পরিবারে রোজগার করার মতো কেউ নেই। তার একমাত্র ছেলে সবেমাত্র দশম শ্রেণির ছাত্র। দীর্ঘদিন ধরে মুরাদ অসুস্থ থাকায় চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

এদিকে উত্তরাঞ্চলের আলোকিত এই ক্রীড়া ব্যাক্তিত্বের হাতে শত শত খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গণে তার অবদান উল্লেখ করার মতো। এতো বড় মাপের একজন মানুষ সবার সামনে নিভে যেতে বসলেও পাশে দাঁড়ানোর মত মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য।

তার অসুস্থতার খবর প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানায় বগুড়ার ক্রীড়া সাংবাদিক মোস্তফা মোঘল। তিনি তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, ‘মুরাদ ভাইয়ের পাশে কেউ নেই! বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ ফজলুল হক মুরাদ ভাই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছেন এক সপ্তাহ যাবত। জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা ক্রীড়াঙ্গনের কেউ তার খোঁজ নেয়নি এখনো। বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে নিজেকে উজাড় করে দেয়া এই মানুষটির বিপদে পাশে দাঁড়ানোর কি কেউ নাই?’

তার এই স্ট্যাটাসে বগুড়ারসহ উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভক্তবৃন্দের টনক নড়ে। পরে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম তার ফেসবুক ওয়ালে তাকে নিয়ে একটা লেখা পোস্ট করলে জানাজানিটা আরো বেশি হয়।

মুরাদ ৭০ দশকের শেষ এবং ৮০ দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত একজন বেষ্ট ফুটবলার (মিডফিল্ড) এবং বগুড়ার ক্রিকেটের স্বর্ণ যুগের অগ্নিঝরা ফাস্ট বোলার ছিলেন। ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও ফুটবল কোচ। অগনিত ক্রিকেটার ও ফুটবলারকে জন্ম দিয়েছেন। এছাড়াও দক্ষ আম্প্যায়ার এবং ফুটবল রেফারিও ছিলেন।

আবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদেও ছিলেন বেশ কয়েকবার। সেনা বাহিনীর ডিপ টিমসহ বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে ফুটবল প্রশিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন সুনামের সাথেই। এক কথায় আপাদমস্তক অথবা বলা চলে সারা শরীরের শিরা-উপশিরায় যে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে, তা শুধু একজন ক্রীড়া সৈনিকের।

বগুড়ার ক্রীড়া সংগঠক সাংবাদিক রাহাত রিটু জানান, অর্থাভাবে মুরাদ ভাইয়ের চিকিৎসা না হলে বগুড়াবাসী কষ্ট পাবেন। কারণ মুরাদ ভাই বগুড়াকে অনেক দিয়েছেন। বিনিময়ে কিছুই নেননি। মাঠের এই মানুষটা আমাকেও ক্রিকেট শিক্ষা দিয়েছেন। এই অর্থে আমি তার ছাত্র। ভাল খেলোয়াড় হতে পারিনি নিজের ব্যর্থতায়। আজ মুরাদ ভাই অসুস্থ আমি কিছুই করতে পারছি না। আসুন, আমরা সকলে তার পাশে দাঁড়াই।

আনোয়ার পরভেজ খোকন জানান, বিমান কাপ অনুর্ধ ১৪ জেলা ফুটবলদলে তার কাছে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, তাছাড়াও মাঠে অনেক কিছু শিখেছিলাম। এমন ভালো মনের মানুষের বিপদে সবাইকে তার পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।

মাসুদ পারভেজ জেমস জানান, সোনালি ক্লাবে এক বছর তার কাছে কোচিং করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমার মনে আছে, সেই বছর আমি জেলা যুবদলে রংপর ভেনুতে খেলেছিলাম। ভালো কোচের পাশাপাশি উনি একজন ভালো মানুষ। যাই হোক, মন থেকে চাই- তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসুক।

মিঠুন ইমরান বলেন, আমার সুযোগ হয়েছিল তার সাথে মেশার। ভালো মনের মানুষ তিনি। মুরাদ ভাইয়ের অনেক ভক্ত আছে, আমাদের সমাজের অনেক বড় বড় জায়গায়।

ক্রিকেটার রাকিবুল হাসান শান্ত জানান, তিনি আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসংখ্য ম্যাচে বোলিং করেছি। সেই সময়ে উনার নিরপেক্ষতা এবং নিজ থেকে টিপস দেয়ার ভালো গুণ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এতদিন পরে এমন খবর শুনে খারাপ লাগল।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম জানান, মুরাদের আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। সমাজে বহু বিত্তশালী এবং ক্রিড়ামোদী মানুষ যারা আছেন এক সময় যৌবনের উন্মাদনায় তার মাঠে কাপানো খেলা যারা দেখছেন তাদের বলছি, আসুন না আমরা সবায় একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। হয়তো আগেও দিয়েছেন। তাতে কি আবার একটু দেই।

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :