সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা

শাস্তি এড়াতে শিশুদের দিয়ে মা-ইলিশ নিধন

শওকত আলী, চাঁদপুর
| আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:৪৩ | প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:২৫

নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেল-জরিমানা থেকে বাঁচতে নিজেরা নদীতে না নেমে শিশুদের দিয়ে ইলিশ ধরছেন অসাধু জেলেরা। চাঁদপুর নৌসীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীর গহিনে দিনের বেলায় কারেন্ট জাল দিয়ে চলছে এই মা-ইলিশ নিধনের মচ্ছব।

আজ রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এই দৃশ্য। মাছ ধরে তা ডাক তুলে বিক্রিও হচ্ছে পাইকারি।

মা-ইলিশ রক্ষায় সরকার চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ১০০ কিলোমিটার এলাকায় ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এই সময়ে মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি পুরোপুরি নিসিদ্ধ। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অভয়াশ্রম ঘোষিত নদী এলাকা সুরক্ষিত রাখতে চাঁদপুরে গঠন করা হয় একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স।

জানা গেছে, প্রথম প্রথম কঠোরভাবে পালন করা হয় সরকারি নির্দেশনা। সাত দিনে বেশ কিছু জেলের কারাদণ্ড হয়। এরপর নদী এলাকার চলাঞ্চলের কিছু জেলে কৌশলের আশ্রয় নেন। তারা নিজেরা জাল নিয়ে নদীতে নামছেন না বটে, কিন্তু শিশুদের নামিয়ে দিচ্ছেন জাল দিয়ে। তারা ইঞ্জিনবিহীন ও ইঞ্জিনচালিত ছোট-বড় নৌকায় কারেন্ট জাল নিয়ে দিনভর এ অবৈধ কাজ করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনার চেয়ে পদ্মা নদীর অংশে ইলিশ নিধন বেশি হচ্ছে। আর এসব মা-ইলিশ বিক্রি হচ্ছে নদীর পাড়েই অস্থায়ী আড়তে প্রকাশ্যে ডাক উঠিয়ে। পাইকারি ক্রেতারা এসব ডিমওয়ালা ইলিশ কিনে সেগুলো সিলভারের কলসি, পাতিল ও ককসেটের বাক্সসহ বিভিন্ন পাত্রে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছে। রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত এই প্রতিবেদক সরেজমিনে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ঘুরে শিশুদের ইলিশ নিধনের উৎসব দেখেন। আরো কয়েকজন সংবাদকর্মী ছিলেন সরেজমিনে। এ সময় নদীতে বিভিন্ন এলাকায় অনেক জেলেকে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের সাহায্যে মা-ইলিশ ধরতে দেখা যায়। কোনো কোনো জেলে ইলিশ ধরার কাজে যাত্রী পারাপারের বড় ট্রলার ব্যবহার করেন।

নিষেধাজ্ঞার সময় শিশুদের দিয়ে এভাবে ইলিশ শিকারের ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি। এ বছর অধিকাংশ জেলে মাছ শিকারে এই অভিনব পন্থা অবলম্বন করছেন। তারা নদীর পারে দাঁড়িয়ে থাকেন। ৮ থেকে ১৫ বছরের শিশু-কিশোরদের ট্রলারে কারে পাঠান ইলিশ শিকারে।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় কয়েকজন জেলের সঙ্গে। তারা জানান, সরকার এবার আইন কড়াকড়ি করেছে। মা ইলিশ ধরার অপরাধে জেলেদের এক বছর কারাদ-ও দিচ্ছে। এ জন্য তারা শিশু-কিশোরদের দিয়ে মাছ ধরাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শিশুদের আটক করলে তাদের অভিভাবকরা মুচলেকা দিয়ে শিশুদের ছাড়িয়ে আনেন।

শিকার করা মাছ বিক্রিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ডাক তুলে। সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পদ্মাপারের অংশে গিয়ে বেশ কয়েকটি আড়তের দেখা পাওয়া যায়। সেখানে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে হাঁকডাক করে পাইকাররা মা-ইলিশ কিনে নিচ্ছেন। এ ছাড়া ইউনিয়নের দেওয়ান বাজার আড়তে স্থানীয় রুহুল আমিনের ছেলে ইব্রাহিমসহ বেশ কয়েকজনকে ডাক উঠিয়ে মা ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়। প্রকাশ্যে মা-ইলিশ নিধন চললেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই এলাকায় নদীতে নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ডের টহল দল দেখা যায়নি। কিংবা ছিল না জেলা টাস্কফোর্সের কোনো অভিযান।

সরেজমিন থেকে এসব বিষয় জেলা প্রাশাসক ও জেলা টাক্সফোসের সভাপতি মো. আব্দুস সবুর মন্ডলকে জানালে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

একই কথা জানান নৌ-পুলিশের এসপি সুব্রত কুমার হালদার। তিনি বলেন, ‘জেলেরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে মা-ইলিশ নিধন করছেন। এ ব্যাপারে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’

(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :