বায়ুদূষণে কিডনি বিকল
মানুষ প্রকৃতি থেকে দূরে সরে গেছে। শহরে সারি সারি আকাশ ছোয়া বাড়ি, সেই তুলনায় গাছ নেই। নেই বিশুদ্ধ বায়ু। আছে কলকারখানা, গাড়ির ধোঁয়ায় দূষিত বাতাস। বায়ু দূষণসহ আরো নানান রকম পরিবেশ দূষণের কারণে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি কিংবা আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে পড়ছি। এসব রোগের কোনো কোনোটি প্রাণঘাতিও বটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এতোদিন বায়ুদূষণের কারণে মানুষ ফুসফুস, হৃদরোগ ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে জানালেও এবার বলছেন কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার কথা।
শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে থাকে। কল-কারখানা, মোটরগাড়ি, তাপ যন্ত্রপাতি, কয়লা-কাঠ পোড়ানো এবং তামাক ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। এসব থেকে নির্গত কনা, তরল এবং গ্যাসীয় উপাদান বায়ুর সাথে মিশে বায়ুকে দূষণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা নতুন গবেষণায় বলেছেন, মানুষের কিডনি নিস্ক্রিয় বা অকেজো হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বায়ুদূষণ। তারা একটি প্রতিবেদন পেশ করে বলেন যে, ২০০৪ সাল থেকে গত সাড়ে আট বছরে ২.৫ মিলিয়ন মানুষ বায়ুদূষণের কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।
তারা ইউএস এনভায়রন মেন্টাল প্রটেকশন অ্যাজেন্সি (EPA) এবং মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মাধ্যমে কিডনি থেকে বায়ুর গুণগত মানের স্তরের ওপর সংগৃহীত উপাত্ত তুলনা করে দেখেছেন। এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, কিডনি রোগের ৪৪,৭৯৩টি ও কিডনি ফেইলিওর বা নষ্ট হবার ২,৪৩৮টি কেস হয়ত বায়ুদূষণের স্তরের সাথে গুণগতভাবে সম্পর্কিত। যা ইপিএ থেকে নির্ধারিত বায়ুদূষণ না হওয়ার সীমাকে (প্রতি কিউবিক বায়ুর জন্য ১২ মাইক্রোগ্রাম) অতিক্রম করেছে। এই সীমা মানুষের জন্য জন্য সর্বোচ্চ নিরাপদ বায়ুদূষণ হিসেবে ধরা হয়। এর অতিক্রম হওয়া মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
গবেষকরা বলছেন, বায়ুদূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক খারাপ প্রভাব ফেলে। বায়ু দূষণের কারণে আমরা কিডনি ফেইলিওর (অকেজো) হওয়া, ফুসফুস এবং হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারি।
বায়ুদূষণের কারণে এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, হাঁপানি এবং দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি রোগের জন্য বায়ু দূষণকে দায়ী করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
যে সব লক্ষণের কারণে বুঝা যাবে কিডনি অকেজো বা বিকল হয়ে যাচ্ছে।
১. ঘুম আসা
২. দুর্বলতা
৩. শ্বাসকষ্ট
৪. ক্ষুধা না লাগা
৫. অবসাদ
৬. উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি
বায়ুতে থাকা অদৃশ্য ধুলো, ময়লা, ধোঁয়া এবং তরল পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা একবার রক্তে প্রবেশ করলে এরা ধ্বংসাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। কিডনি এসব ক্ষতিকর কণা মিশ্রিত রক্ত পরিশোধন করে। এর ফলে সে তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। যা কিডনিকে ধীরে ধীরে অকেজো বা নিস্ক্রিয় হওয়ার পথে নিয়ে যায়।
কিডনি রোগে আক্রান্তদের ব্যথা কমানোর নতুন ওষুধ
কিডনি রোগে আক্রান্তদের ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বিষাক্ত ব্যাঙ থেকে শক্তিশালী ব্যথানাশক ওষুধ তৈরির পথে রয়েছেন। এর জন্য বিজ্ঞানিরা ডার্ট ব্যাঙ ব্যবহার করছেন, যা আমেরিকার মরফিন থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে বলে আশা তাদের।
তথ্যসূত্র: The Times Of India
(ঢাকাটাইমস/৯অক্টোবর/এইচএস/কেএস)