শুরু হলো খেতুরীধামের মহোৎসব

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৪৭

ঐতিহ্যবাহী খেতুরীধামে শুরু হলো ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে অবস্থিত এই ধামে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের।

সোমবার সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

এর আগে কয়েকদিন আগে থেকেই ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে খেতুরীধাম। মঙ্গলবার অরুণোদয় থেকে অষ্ট প্রহরব্যাপী সেখানে চলবে তারক ব্রক্ষ্মনাম সংকীর্ত্তন। বুধবার প্রথম প্রহরে দধিমঙ্গল, দ্বি-প্রহরে ভোগ আরতি ও মহান্ত বিদায়ের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানমালার সমাপ্তি হবে।

এই উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর দুই বাংলার ভক্তদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই হারায় গৌরাঙ্গবাড়ি মন্দিরের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম।

বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মালম্বীদের এটিই সবচেয়ে বড় জমায়েত। উৎসব সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে কয়েকদিন আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে খেতুরীধাম ট্রাস্টিবোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন। ভক্তদেরও আগমন শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে থেকেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ নেওয়াজ জানান, এবারের উৎসবকে ঘিরে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে আয়োজিত মেলা নির্বিঘ্ন করতে মাঠে আছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকশ নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক। আগত ভক্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিকেল ক্যাম্পও বসানো হয়েছে সেখানে।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি জানান, খেতুরীধাম ও মেলাকে ঘিরে ওই এলাকায় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। সেখানে তিন স্তরে পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। খোলা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুমও। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। এছাড়া মাঠে রয়েছেন র‌্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।

গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক শ্যামাপদ স্যানাল জানান, সারা পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মোট ছয়টি ধাম রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ভারতবর্ষে। আর একটি মাত্র বাংলাদেশে। আর তা এই খেতুরীধাম। এ কারণে প্রতিবছর উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ ভক্তের আগমন ঘটে খেতুরীধামে। এবার ভক্তের সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছেন তিনি।

মন্দিরের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র পাল জানান, সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে এবার ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েক লাখ নারী-পুরুষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাদ, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রেমতলী বাজার থেকে খেতুরীধাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়কটিতে আলোকসজ্জারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নরোত্তম ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস তৎকালীন গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত বর্তমান গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা তীরের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা জমিদার কৃষ্ণনন্দ দাস, মা নারায়নী রাণী। গোপলপুরে শৈশব অতিবাহিত করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন।

পরে তিনি খেতুরে ফিরে আসেন। খেতুর মন্দিরে গড়ে তোলেন স্থাপনা। এরপর তিনিই প্রথমে এখানে এ উৎসবের আয়োজন করেন। ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে এসে দীক্ষাগ্রহণ করতে শুরু করেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তম দাস নিত্তলীলায় প্রবেশের মানসে গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন।

এ সময় শিষ্যরা তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে নিজের দেহকে অর্ধনিমজ্জিত করে প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন তার দেহ মার্জন করতে। গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য তার দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ এক সময় সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিলিত হয়ে যায়।

সে অনুযায়ী ঠাকুর নরোত্তম দাস পৃথিবীতে ৮০ বছর স্থায়ী ছিলেন। এরপর থেকেই যুগ পরম্পরায় দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এই মহান সাধকের কৃপা লাভের আশায় খেতুরীধামে বছরে একবার মিলিত হয়ে থাকেন।

(ঢাকাটাইমস/৯অক্টোবর/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :